পাট শিল্পের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে উদ্যোক্তা, সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এমনটা জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুল আলম। এফবিসিসিআইয়ের গুলশান কার্যালয়ে পাট শিল্প খাতের বিরাজমান সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মাহবুবুল আলম বলেন, পাট আমাদের সোনালি ঐতিহ্য। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের নিজস্বতা ও গৌরবের ইতিহাস। পাটের সোনালি আঁশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। সুদূর প্রাচীনকাল থেকে আমাদের পাট শিল্প ছিল অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। একসময় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান হাতিয়ার ছিল এ পাট। এমনকি স্বাধীনতার পরও দু-এক বছর আমাদের পাট শিল্পের গৌরব ছিল অক্ষত। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সেই পাট শিল্পের গৌরব আজ নানা কারণে ম্লান হতে বসেছে। এ শিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, পাটের সোনালি আঁশ কাজে লাগিয়ে কীভাবে রফতানি বাড়ানো যায়, কীভাবে পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়, সেটি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। পাটজাত পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে বিশ্বের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি ও রফতানি বাড়াতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে এফবিসিসিআই।
মতবিনিময় সভায় পাটজাত শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগঠন ও এ খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা পাট শিল্পের বিরাজমান সমস্যা সমাধানে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কাঁচা পাটের ওপর ২ শতাংশ উৎসে কর রহিতকরণ, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ শতভাগ বাস্তবায়ন ও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধকরণ, অ্যান্টি ডাম্পিং নিয়ে আপিল করা, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পাটজাত পণ্যকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে ঘোষণা বাস্তবায়ন, পাটশিল্পকে রক্ষার জন্য রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) মতো পাট খাত উন্নয়ন তহবিল (জেএসডিএফ) গঠন, পাটকলগুলোর মেশিনারিজের আধুনিকায়নের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো ৩০ শতাংশ ভর্তুকি ও স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা, করোনাকালীন শিল্প খাতে সরকারের দেয়া প্রণোদনা বেসরকারি পাটকলগুলো না পাওয়ায় তার পরিবর্তে ব্যাংক সুদ মওকুফ করা, পাটপণ্য রফতানিতে ৭ শতাংশ, ১২ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ প্রণোদনার পরিবর্তে ইয়ার্ন ও টোয়াইন এবং হেসিয়ান, সেকিং ও সিবিসির জন্য ২০ শতাংশ ও বহুমুখী পাটপণ্যের জন্য ২৫ শতাংশ হিসেবে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি, রফতানির বিপরীতে প্রণোদনার ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর রহিতকরণ, অন্যান্য শিল্প খাতের মতো পাটশিল্প খাতের ব্যাংক ঋণ মওকুফ, কৃষকদের জন্য উচ্চফলনশীল (উফশী) পাটবীজ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, কাঁচা পাট উৎপাদন, ব্যবহার ও রফতানি বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বাংলাদেশ পাটকল সমিতি) প্রেসিডেন্ট ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘পাট শিল্পকে রক্ষায় ইডিএফের মতো জেএসডিএফ গঠন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাট শিল্পে স্বল্পসুদে ঋণ দেয়া হলে মিল মালিকরা চিরাচরিত পাটপণ্যের সঙ্গে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হবে এবং স্বল্প মূল্যে দেশে ও বিদেশের বাজারে পাটপণ্য ও বহুমুখী পাটপণ্য বিক্রি ও রফতানি বাড়াতে সচেষ্ট হবে।
এ সময় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান পরিচালক মো. হাবিব উল্লাহ ডন, পরিচালক আজিজুল হক, মো. নিয়াজ আলী চিশতি, ফখরুস সালেহীন নাহিয়ানসহ বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ডাইভারসিফায়েড জুট গুডস প্রডিউসারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনএসডিএ) এবং বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বাংলাক্রাফট) নেতারা উপস্থিত ছিলেন।