পটিয়া যুগ্ম জেলা জজ আদালতে উমেদার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য

কথায় কথায় মিথ্যা মামলার হুমকি 

পটিয়া যুগ্ম জেলা জজ আদালতে উঠেছে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি ও বিক্রির অভিযোগ। আদালতের কেউ না হয়েও আদালত প্রাঙ্গণে দাপিয়ে বেড়ান অস্থায়ীভাবে কর্মরত উমেদার (আদালতের অস্থায়ী কর্মচারী) সিন্ডিকেট। নথি চুরি, অর্থের বিনিময়ে সরকারি নথি বিক্রি, মিথ্যা মামলা ও কাজের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করা তাদের নিত্যকার কর্মযজ্ঞ। তারাই আবার নিজেদের দাবি করেন সরকারি কর্মচারী। বয়োবৃদ্ধ থেকে যুবক কারোরই নিস্তার নেই এই উমেদার সিন্ডেকেটের হাত থেকে। 
ভুক্তভোগীদের দাবি, কোনো ব্যক্তি যদি অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জবাবদিহিতা চায় তবে এই সিন্ডিকেট তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান। মামলা দিয়ে আজীবন কারাবাস করানোও হুমকি দেন তারা।
মো. খোরশেদুল আলম নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, এই উমেদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আদালতে লিখিত অভিযোগ করায় তারা আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির একটি মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
জানা যায়, আদালত প্রাঙ্গণে ত্রাসের রাজত্ব চালানো এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা নজরুল ইসলাম শওকত ও তার দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন এবং রবিউল হোসেন। নিজেদের পরিচয় দেন পটিয়া যুগ্ম জেলা জজ আদালতের সরকারি কর্মচারী হিসেবে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে হাতিয়ে নেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের বিশাল পাহাড়।
সাজ্জাদ হোসেন ও নজরুল ইসলাম শওকত জুটি বিভিন্ন প্রয়োজনে আদালতে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ নিয়ে সরকারী নথি ফটোকপি ও ছবি তুলে তা বাইরে পাচার করে, যা সরকারি আইনের নিয়ম বহিঃভূত এবং দন্ডনীয় অপরাধ। এর ফলপ্রসূ আগন্তুক ব্যক্তিদের হাতে আদালতে রক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নথি চলে যাওয়ায় মামলা নিষ্পত্তিতে পড়তে হয় নানা জটিলতায়।
তাদের মধ্যে রবিউল হোসেন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবেও বেশ পরিচিত। টাকার বিনিময়ে সাজ্জাদ ও নজরুল ইসলামের সহয়তায় সাধারণ জনগনকে বিভিন্ন বালাম ও নথি ফটোকপি দিয়ে থাকেন রবিউল। এছাড়াও এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আসামীর নিকট থেকে চেক চুরি করে তা ছিড়ে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে।
আদালত প্রাঙ্গণে আসা ভুক্তভোগী আমিরুল ইসলাম বলেন, এইখানে টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। যে যতো বেশি টাকা দিবে তার কাজ ততো আগে শেষ হয়। টাকা না দিলে দিনের পর দিন আদালত প্রাঙ্গণে ঘুরেও কোনো লাভ হয় না।
অন্য এক ভুক্তভোগী জানান, কোনো ব্যক্তি যদি অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জবাবদিহিতা চায় তবে এই সিন্ডিকেট তাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি ও মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান। মামলা দিয়ে আজীবন কারাবাস করানোর হুমকি দেন।
তিনি বলেন, তারা এই আদালতের সরকারী কর্মচারী কিনা তা জানি না, তবে তারা যা চায় তাই হয়। আর তাই এই আদালতে নজরুল-সাজ্জাদ-রবিউল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না।
আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে সালাউদ্দিন মোল্লা নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, কোন ব্যক্তি যদি এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তবে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং লেলিয়ে দিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দিবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়।
তাদের এমন অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে ভুক্তভোগীরা মিথ্যা মামলার ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে ভয় পান।
এ ব্যাপারে পটিয়া যুগ্ম জেলা জজ আদালত বার কাউন্সিলের সভাপতি এডভোকেট অষীশ কুমার বলেন, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি ও বিক্রি নিয়ম বহিঃভূত এবং দন্ডনীয় অপরাধ। যে বা যারা এই সকল অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা জরুরি।
তবে এই বিষয়ে জানতে উমেদার সিন্ডিকেটের প্রধান সাজ্জাদ ও শওকতের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তারা মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে মুঠোফোন বন্ধ করে রাখেন।