নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করুন

সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী জানুয়ারির প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনৈতিক মাঠ গরম হচ্ছে। বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতা জানান দিতে গড়ে তুলছেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। শহর থেকে গ্রামে সব জায়গায় ভোটারদের মধ্যে অবৈধ অস্ত্র আতঙ্ক। প্রতিদিনই সীমান্ত পেরিয়ে চোরাইপথে দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্রের চালান ঢুকছে বাংলাদেশে। আর এইসব অস্ত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের হাতে। এছাড়া, অবৈধ অস্ত্রের পাশাপশি বেড়েছে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারও।

সোমবার দৈনিক দেশ বর্তমান-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৬ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ৬০০ টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র। রাজধানীসহ সারাদেশে এখন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হাতে হাতে অবৈধ অস্ত্র। নির্বাচনকে পুঁজি করে এমপি প্রত্যাশীরা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জেল থেকে মুক্ত করে রাজনৈতিক মাঠ দখলের চেষ্টায় তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়তই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গত ৬ মাসে শুধু র‌্যাব ৩০০টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। যার মধ্যে ৭৫টি বিদেশি পিস্তল। আর পুলিশের অভিযানে ২০০টি অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছে অন্তত ১০০ জন। বাকি অস্ত্র অন্যান্য অভিযানে উদ্ধার হয়। গত তিন বছরে সারাদেশে অস্ত্র বহনের দায়ে প্রায় ৬ হাজার মামলা করেছে র‌্যাব।
সম্প্রতি রাজশাহী থেকে মিলন হোসেন (২৮) নামে এক রাজনৈতিক কর্মীকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেন, নির্বাচনে সহিংসতার টার্গেট নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতারা অবৈধ অস্ত্র মজুদ করছে। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের বাজারে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করছে ২২টি সিন্ডিকেট। তারাই বিভিন্ন কৌশলে সারাদেশে পৌছে দিচ্ছেন। গত ৮ মে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থেকে দুটি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন এবং পাঁচ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সম্প্রতি বিএনপির শীর্ষ নেতা ইশরাক হোসেনের পিএম আরিফুর ইসলামকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ। আরিফ দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ভারতের সীমান্ত দিয়ে খুব সহজে দেশে প্রবেশ করছে অবৈধ অস্ত্র। সিন্ডিকেটটি কৌশলে অ্যাম্বুলেন্স ও মালবাহী ট্রাকযোগে এসব অস্ত্র রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে পাঠায়। আর সেসব অস্ত্র চলে যায় রাজনৈতিক ক্যাডারদের হাতে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এসব সিন্ডিকেট ও অস্ত্র বহনকারীদের বিষয়ে তৎপর রয়েছে।

দেশে অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া বেশ কঠিন এবং জটিল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জাল লাইসেন্স তৈরি করে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা জাল লাইসেন্স তৈরি করে সেই অস্ত্রের বৈধতাও দিয়ে দিচ্ছে। জানা গেছে, যেভাবে জাল টাকা, জাল স্ট্যাম্প তৈরি করা হয়; একইভাবেই আগ্নেয়াস্ত্রের জাল লাইসেন্স তৈরি করে এই চক্রের সদস্যরা। একটি আসল লাইসেন্স দেখে তা হুবহু অনুকরণ করে চক্রের এক্সপার্টরা। এরপর এসব ভুয়া লাইসেন্স ধরিয়ে দেওয়া হয় অবৈধ অস্ত্রের ক্রেতাকে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনে নির্বাচন, যত দ্রুত সম্ভব অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। না হয়, রাজনৈতিক মাঠে সহিংসতা বাড়বে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেছেন, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। না হয় আগামী নির্বাচনে সহিংসতা বাড়বে। পুলিশ ও র‌্যাবকে আরও তৎপর থাকতে হবে।