নাটকীয়তায় সাকলাইনের আরেকটি শিরোপা

খেলা

ওয়ালটন আন্তর্জাতিক রেটিং দাবায় শেষ রাউন্ডে দারুণ নাটকীয়তায় ক্যান্ডিডেট মাস্টার সাকলাইন মোস্তফা সাজিদ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। অষ্টম রাউন্ড শেষে সাত পয়েন্ট নিয়ে দুই ফিদে মাস্টার মনন রেজা নীড় ও শেখ নাসির আহমেদ যুগ্মভাবে শীর্ষে ছিলেন।

আজ শেষ রাউন্ডে দুই জনই হেরেছেন যথাক্রমে গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান ও ক্যান্ডিডেট মাস্টার সাকলাইনের কাছে। এতে জিয়া এবং সাকলাইনের সমান সাড়ে সাত পয়েন্ট হয়। টাইব্রেকিং সিস্টেমে গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানকে পেছনে ফেলে ক্যান্ডিডেট মাস্টার সাকলাইন চ্যাম্পিয়ন হন। দিন পাচেক আগে জাতীয় জুনিয়রেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন সাকলাইন।

মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দু’টি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলেন দাবার উঠতি তারকা সাকলাইন। দু’টি শিরোপাই তার কাছে দুই রকম স্বাদ, ‘জুনিয়র টুর্নামেন্টটা জাতীয় পর্যায়ে সেটার স্বাদ এক রকম। এটি রেটিং টুর্নামেন্ট হলেও দুই জিএম, আইএম আরো অনেক বড় দাবাড়ুরা খেলেছেন। তাই এই শিরোপার স্বাদও ভিন্ন রকম।’

সাকলাইনের কোচ আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সুফিয়ান শাকিল শিষ্যের আজকের শিরোপা জেতায় বেশি খুশি, ‘জাতীয় টুর্নামেন্টের মর্যাদা বেশি হলেও আমি বেশি খুশি এই টুর্নামেন্ট জেতায়। দুই গ্র্যান্ডমাস্টার ও একজন আন্তর্জাতিক মাস্টার থাকা সত্ত্বে ক্যান্ডিডেট মাস্টার চ্যাম্পিয়ন হওয়া অনেক বড় প্রাপ্তি।’

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের সাকলাইনের সমান সাড়ে সাত পয়েন্ট। নয় রাউন্ডের খেলায় অধিকতর রেটিং প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলায় সাকলাইনের দুই পয়েন্ট বেশি জিয়ার চেয়ে। খানিকটা সূক্ষ্ম ব্যবধানে শিরোপা হারালেও কষ্ট নেই দেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টারের, ‘সাকলাইন বেশ মেধাবী দাবাড়ু। জুনিয়রের পর আবার এই টুর্নামেন্ট জিতল। আমি অনেক টুর্নামেন্টেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এর চেয়ে ও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এটা ওর এবং দাবা উভয়ের জন্যই বরং ভালো।’

এই টুর্নামেন্টটি হয়েছে সুইস লিগ পদ্ধতিতে। সাকলাইন চ্যাম্পিয়ন হলেও দুই গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান ও রিফাত বিন সাত্তারের সঙ্গে খেলা পড়েনি। আন্তর্জাতিক মাস্টার মিনহাজ উদ্দিন সাগরের বিপক্ষে খেলে পয়েন্ট আদায় করেছেন সাকলাইন।

সাকলাইন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবরে ফেডারেশনে ছুটি এসেছেন ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শোয়েব রিয়াজ আলম। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি সাকলাইনের হাতে ১৫ হাজার টাকা প্রদানের পাশাপাশি একটি ল্যাপটপ প্রদানের ঘোষণা দেন। সাকলাইন তার আজকের অবস্থানের পেছনে বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবকেই অবদান দিলেন,‘ পুলিশ ক্লাবের কারণেই আমি দাবায় এই পর্যায়ে আসছি। এর পুরো অবদান কোচ শাকিল স্যার ও শোয়েব স্যারের। ‘বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবের এই চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ুর দিকে বিশেষ নজর রয়েছে,‘ সে বেশ প্রতিভাবান। জাতীয় পর্যায়ে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখলে আমরা তাকে বিদেশেও নানা টুর্নামেন্টে পাঠাব’-বলেন ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক শোয়েব রিয়াজ আলম।

সাকলাইনের কোচ শাকিল এক দশকের বেশি সময় দাবা কোচিংয়ে। তিনি সাকলাইনকে আখ্যায়িত করলেন বিশেষভাবে, ‘সাকলাইন ন্যাচারাল ট্যালেন্ট। সে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের একজন গ্র্যান্ডমাস্টার হবে। ভালো দাবাড়ুর যে গুণাগুণ থাকা দরকার এর সবই সাকলাইনের মধ্যে রয়েছে।’

১৩ বছর বয়সী সাকলাইন টানা দুই টুর্নামেন্ট জেতায় তার রেটিং ২২০০ প্লাস করেছেন। ২৩০০ রেটিং স্পর্শ করলে ক্যান্ডিডেট মাস্টার থেকে ফিদে মাস্টারে উন্নীত হবেন। ফিদে মাস্টারের পর আইএম তারপর জিএম। সাকলাইনের এত লম্বা পথ পাড়ি দিতে তার পরিবার পাশে রয়েছে। আজ শেষ রাউন্ডের সময় উপস্থিত ছিলেন তার বাবা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন বাবা-ছেলে। দাবার টানে পাবনা থেকে ঢাকায় আসা সাকলাইনের অভিভাবক তার বড় বোন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করে ব্যাকিং পেশায় সদ্য প্রবেশ করা সোহানা আফরোজ শোভা।