নরসিংদীতে ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদী শহরের চিনিশপুরের জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাড়ি থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ গতকাল শুক্রবার দুপুরে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বৃহস্পতিবার। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ।
গোয়েন্দা পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতা সাদেকুর রহমানসহ জোড়া হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় আসামি ছিলো জেলা ছাত্রদল সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সে গা ঢাকা দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার ঢাকার শাহবাগ এলাকায় অবস্থান করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে নাহিদকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চিনিশপুরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনের বাড়ির বাথরুমের ফলস ছাদে লুকানো অবস্থায় একটি বিদেশি পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
নাহিদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে ছাত্র ঐক্যের কনভেনশন চলাকালে নাহিদকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে আটক করে। পরে তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। ওই সময় তার সঙ্গে ছাত্রদলের দুই কর্মী ছিলো। তাদেরও নিয়ে আসে। পরে তাদের মাধবদী এসে ছেড়ে দেয়। এর আগেও বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে ২০১৭ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে নাহিদকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ৯ মাস গুম থাকার পর অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ছাত্রদল সভাপতিকে আটকের পর পর তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারের বিষয়টি প্রকাশ করেনি পুলিশ। তাই এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফখরুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধীদলীয় কোনো নেতাকর্মীকে আটক এবং হদিস না দেওয়াটা ভয়াবহ অমানবিক ও দস্যুবৃত্তিমূলক কাজ। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় থেকে এ ধরনের ঘটনাকে একটি সংস্কৃতিতে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রের মদদে এখনও বিরোধী দল নিধনে বেপরোয়া কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকে কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও বহিষ্কৃত নেতারা। চলতি বছরের ২৬ মে ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতা নিহত সাদেকুর রহমান ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে তাদের শত শত সমর্থক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। ওই সময় চিনিশপুর বিএনপি অস্থায়ী কার্যালয়ের অদূরে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে সাদেকুর রহমান ও আশরাফুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রথমে সাদেক ও পরে আশরাফুল মারা যায়। ওই ঘটনায় বিএনপির যুগ্মমহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, তার স্ত্রী শিরীন সুলতানা ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদসহ বিএনপির ৩০ নেতার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করা হয়।