‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমন্দীর ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা-ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।’
কবি জসীম উদ্দিন রচিত ‘আসমানী’ কবিতার এ লাইনগুলো শিশুকালে অনেকেরই পড়া। কিন্তু বাস্তবে এমন চিত্র এখন খুব কম দেখা যায়। তবে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে হারামিয়ায় দেখা মিলেছে সত্তর ঊর্ধ্ব এক বৃদ্ধার, নাম তার মজনা। পৃথিবীতে স্বামী, পুত্র-কন্যা, ভাই-বোন-নাতি-নাতনী, জমি-জমা বলতে কিছুই নেই তার।
সন্দ্বীপ উপজেলার হারামিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের একটি বাড়ির পুকুর পাড়ে অন্যের জায়গায় ৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট একখণ্ড ভূমিতে ঝুঁপড়ি টাঙিয়ে মজনার বসবাস। ছোট্ট এই ঘরেই টয়লেটসহ থাকার সকল ব্যবস্থা।
![](https://dailydeshbartaman.com/wp-content/uploads/2024/01/WhatsApp-Image-2024-01-20-at-4.05.42-PM-1024x768.jpeg)
জানা গেছে, মানুষের সহায়তায় প্রাপ্ত চাল পাশের ঘরের কেউ রান্না করে দিলেই খেতে পারেন তিনি। অসুখ-বিসুখের কারণে ঘর থেকে বের হতে পারেন না মজনা। টুকটাক বাজার বা ওষুধের জন্য নির্ভর করতে হয় অন্য কারও ওপর। স্থানীয় ইউপি সদস্য রুবেল তাকে কিছুদিন পরপর দেখে যান। মজনার এমন করুন অবস্থার কথা জেনে সন্দ্বীপ প্রেস ক্লাব সভাপতি রহিম উল্যাহ সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। পোস্ট দেখে অসহায় বৃদ্ধার ঘরের উন্নয়নে এগিয়ে আসেন আমেরিকার টেক্সাসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত সন্দ্বীপের এক প্রবাসী। তিনি সন্দ্বীপ প্রেস ক্লাব সভাপতির সাথে যোগাযোগ করেন এবং বৃদ্ধার জন্য নতুন ঘর নির্মাণের সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া তিনি ভবিষ্যতে তার খোঁজ-খবর নেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য রুবেল ও ভূমির মালিক কাউছারের সাথে যোগাযোগ করে বৃদ্ধা মজনা’র জন্য ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট একটি টিনের ঘর তৈরি করা হয়।
এদিকে মজনার দুর্দশার খবর জানতে পেরে শুক্রবার বিকেলে তাকে দেখতে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম চৌধুরী। তিনি অসহায় মজনার জন্য কম্বল, মশারী ছাড়াও চাল, ডাল, বিস্কুট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যান এবং মজনার হাতে তুলে দেন।
এ সময় সন্দ্বীপ প্রেস ক্লাব সভাপতি মো. রহিম উল্যা, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার তৌহিদোল মাওলা রুবেল ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।