নতুন কালুরঘাট সেতু কি আদৌ হবে

শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুটিকে জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকম ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। কিন্তু এতে কী ঝুঁকি কমছে? এদিকে, কক্সবাজারের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ শুরু হলেও এর পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না শুধুই কালুরঘাট সেতুর কারণে।

সংস্কারের পর সংস্কার করে এর ওপর দিয়ে কক্সবাজারগামী আন্তনগর ট্রেন চালানো হচ্ছে। অথচ চট্টগ্রামের কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। স্থানীয় সংসদ সদস্যরাও এই সেতু নির্মাণের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। এর আগে দুই দফা নকশা প্রণয়ন করা হলেও উচ্চতা ও নকশা জটিলতার কারণে চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইন চালুর পর নতুন সেতু নির্মাণের দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর ১৯৩১ সালে নির্মিত হয় কালুরঘাট রেলসেতু। ১৯৬২ সালে যান চলাচল শুরু হয়। এর আগে দুবার সংস্কার করা হয়েছিল। কালুরঘাট রেল সেতুর বয়স এখন ৯৩ বছর। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ এই সেতুতে ট্রেনের গতি ছিল সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচলের জন্য সেতুটিতে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মূল কাজ শেষ হলেও সব কাজ এখনো শেষ হয়নি। সংস্কারকাজের জন্য গত বছরের জুনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে ৪৩ কোটি টাকার চুক্তি হয়। গত বছরের আগস্টে কাজ শুরু হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী মার্চে।

দায়িত্ব গ্রহণের কয়েকদিন পর এবং প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, ‘কালুরঘাট নতুন সেতু হতে চার পাঁচ বছর সময় লাগবে। এটার সমীক্ষা শেষ। কোরিয়ান অর্থায়নে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হবে। কালুরঘাটের মতো ব্রিজ একটা নির্মাণ করতে তো সময় লাগবে। চার-পাঁচ বছরের মধ্যে ইনশা আল্লাহ চালু হয়ে যাবে।’

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘চারটা সূচি করে রেখেছি। দুই মাসের মধ্যে আমরা একটা চালু করব। ইঞ্জিন ও চালকের সমস্যা প্রকট। ইঞ্জিনের ব্যবস্থা যদি করে ফেলতে পারি। চট্টগ্রাম থেকে যত তেলের গাড়ি, যত খাদ্যশস্য, যত কনটেইনার সব চট্টগ্রাম থেকে সাপোর্ট দিচ্ছে। এখন যদি চালু করতে হয় কনটেইনার ট্রেন বন্ধ করে, কক্সবাজার ট্রেন চালু করতে হবে। এ জন্য আমাদের যেসব চালকের শূন্য পদ রয়েছে, সেগুলোতে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই চালু করব।’

আমরা মনে করি, এখানে মূল সমস্যাটা হচ্ছে পরিকল্পনার। কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ পরিকল্পনার সঙ্গে যদি নতুন সেতুর বিষয়টিও যুক্ত থাকতো তাহলে এতদিনে সেতুটি হয়ে যেত। সেতুটি নির্মাণের আগে জমি অধিগ্রহণ, রেলপথ উঁচু করা ইত্যাদি মিলে এটিও একটি মেগাপ্রজেক্ট হবে তাতে সন্দেহ নেই। কথা হলো, এটা যেহেতু করতেই হবে সেহেতু একসঙ্গে করলেই বরং সময়, খরচ ও ভোগান্তি কম হতো।

এখন সেতুর কারণে বোয়ালখালীবাসীকে প্রতিদিন ফেরি পার হতে হচ্ছে। তাও বর্ষায় পানিতে ডুবে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন সার্ভিসও চালু হলো না। এতে চট্টগ্রামের মানুষের মনে ক্ষোভ আছে, বঞ্চনাবোধও আছে। আশা করি এলাকার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও নতুন রেলমন্ত্রী এ বিষয়ে গভীর নজর দেবেন এবং তাঁদের সাধ্যের পুরোটা দিতে চেষ্টা করবেন।