দ্রব্যমূল্য বিদেশে কমে, আমাদের বাড়ে কেন

পবিত্র রমজান মাস

সিয়াম সাধনার মাস রমজান শুরু হয়েছে। আজ পঞ্চম রোজা। রমজানের অন্যতম লক্ষ্য ও বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সব ক্ষেত্রে সংযম সাধন করা। অথচ রমজানে আমাদের দেশে বিষয়টি পুরোপুরি উল্টো। যে যেভাবে পারছে রমজানে টুপাইস কামিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টায় থাকেন। অথচ অন্য দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর প্রতিযোগিতা চলে। গত বছরও রমজান মাসে রোজাদারদের সেবায় ৮০০টিরও বেশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দেয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। এক বিবৃতিতে খবরটি দেয় দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়।

এই মূল্যছাড় রোজার আগে থেকেই কার্যকর করা হয়। রমজান মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই পণ্যমূল্য মেনে চলতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। রমজানজুড়ে কাতারের সব বাজার ও সুপারশপে ভোক্তা অধিকার রক্ষা কর্মকর্তাদের অভিযান চালিয়ে নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। এতে ভোক্তাদের মধ্যে একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থা তৈরি হয়। আমরা চলেছি উল্টো পথে। রমজান এলেই নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন দেখা দেয়। রমজানে অপরিহার্য এমন অনেক পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যায় কোনো কারণ ছাড়াই। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফার লোভে কারসাজি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়, যা রমজানের চেতনার পরিপন্থি। অন্যদিকে এই সংযমের মাসেই দেখা যায় বিত্তশালীদের বাড়াবাড়ি।

যে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ান, তিনি অন্তত রমজানে তা করবেন না; যারা খাদ্যে ভেজাল মেশান, তারা তা থেকে বিরত থাকবেন, যানজট দূর করতে আগের থেকেও সক্রিয় হবে পুলিশ— এভাবে সব ক্ষেত্রেই একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে চায় মানুষ। কিন্তু রোজার প্রথম ধাক্কাটা লাগে পণ্যের বাজারে। এবারও রমজানের আগে থেকেই বাজার চড়া। অথচ অন্য দেশে কোনো উৎসব-পার্বণে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ভালোভাবে সবাই সেই উৎসবে অংশ নিতে পারে। আমাদের দেশে এর উল্টো চিত্র। এ ব্যাপারে অনেক কথা হলেও কাজের কাজ খুব কমই হয়। এবারও রমজান আসার আগেই নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। গরুর মাংসে তো হাতই দেওয়া যায় না। এমনকি পোল্ট্রি মুরগির বাজারও আকাশচুম্বী। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রমজানে অত্যাবশ্যক পণ্যসহ অন্য নিত্যপণ্যের মূল্যও। এভাবে তো চলতে পারে না।

রোজাদাররা বাড়িতে গিয়ে যাতে সময়মতো ইফতার করতে পারেন সেজন্য কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় যদি যানজটে পড়ে রাস্তায়ই নষ্ট হয়ে যায় এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। প্রতিদিনই রাস্তায় নামছে অসংখ্য গাড়ি। কিন্তু সে অনুযায়ী রাস্তাঘাট কি বাড়ছে? অন্য সুযোগ-সুবিধা কি নিশ্চিত হচ্ছে? ট্রাফিক ব্যবস্থা কি আধুনিকায়ন হচ্ছে?

সমাজে যদি বৈষম্য থাকে, অভাব থাকে, ক্ষুধা থাকে, দারিদ্র্যতা থাকে তাহলে সেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা কঠিন। সে কারণেই সম্পদের একটি সুষম বণ্টন ব্যবস্থা হচ্ছে জাকাত। আবার জাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের এখানে লোক দেখানো ব্যাপারও কাজ করে। অনেকে মাইকিং করে সস্তায় কেনা কাপড় প্রদান করেন। এতে ভিড়-ঠেলাঠেলিতে অতীতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সতর্ক থাকতে হবে।