দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন—মোশাররফের দুর্গ ভাঙতে তৎপর তিনজন
চট্টগ্রাম-১ নম্বর সংসদীয় আসন মিরসরাই। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে যার অবস্থান ২৭৮। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী (২০১৮) এই আসনে মোট ভোটার রয়েছে ৩,১৪,৯৮৫ জন। এ আসনকে ঘিরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চলের বিশাল বিনিয়োগ। বর্তমান সরকারের বড় উন্নয়ন প্রকল্পের মাঝে ‘সর্ববৃহৎ ইকোনমিক জোন’ হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে।
সুতরাং এ আসন ঘিরে মাতামাতি নজরে পড়ার মতো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় চট্টগ্রামের অন্যান্য আসনের ন্যায় চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনেও পড়েছে ভোটের আগাম হাওয়া। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন প্রত্যাশীরা সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগদিয়ে বিভিন্ন কৌশলে জানান দিচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে অনেকটা প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগ জানান দিলেও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি গোপনে এগুচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও। তবে বিএনপির কোনো সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এখনও নির্বাচনী কলাকৌশলে দেখা না গেলেও এই আসনে প্রার্থী ঠিক রেখেছেন বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ধারণা।
গত বেশ কয়েকদিন ধরে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। একাধিক বারের এই নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবারও মনোনয়ন চাইবেন তা স্বাভাবিক, তবে গুঞ্জন আছে বার্ধক্য জণিত কারণে ছেলে মাহবুবুর রহমান রুহেলকে এই আসনে নির্বাচনে দাঁড় করাবেন তিনি।
এ আসনে মনোনয়ন পেতে বেশ আগ্রহী মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন। দু’পক্ষের সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। মনোনয়ন নিয়ে বেশ আলোচনায় আছেন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসআই এর প্রধান ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শামস চৌধুরী। আবার এ আসনে আ.লীগ থেকে মনোনয়ন নিতে পিছিয়ে নেই কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিটও। সম্প্রতি মিরসরাইয়ে বিভিন্ন সময় নির্যাতিত-অবহেলিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এলিটের নেতৃত্বে এক সাথে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতে পরিণত হয়েছেন নিয়াজ মোর্শেদ এলিট।
অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন এবং আরেক যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন। এছাড়াও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সাহেদুল ইসলাম চৌধুরী এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম ইউছুপ। এছাড়াও আলোচনায় আছে ১৪ দলের শরিক ও সাম্যবাদী দল নেতা ও সাবেক শিল্প মন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়া।
মিরসরাইয়ের সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন আওয়ামী লীগের এক নম্বর প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মনোনয়ন বোর্ডের প্রভাবশালী সদস্য। আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নির্বাচনে তার আধিপত্য থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। সেই দিক থেকে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করবেন নিজের স্থলে পুত্র মাহবুবুর রহমান রুহেলকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে।
কিন্তু ইতিমধ্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও তার পুত্র রুহেলকে প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের মধ্যেই তিন পক্ষ একত্রিত হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গিয়াস উদ্দিন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নিয়াজ মোরশেদ এলিট ও সাবেক এনএসআই প্রধান শামস চৌধুরী। আগামীতে মিরসরাইয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের একক আধিপত্য চান না তাঁরা।
অপরদিকে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ঘুরেফিরে তিনজনের নামই আসছে বেশি। এরা হলেন- বিএনপির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, তারপরেই আলোচনায় আছেন উত্তর জেলা বিএনপির আরেক যুগ্মআহ্বায়ক নুরুল আমিন, এরপর তালিকার তিন নম্বরে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী। তবে তিনজনের মধ্যে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ২০১৪ সালে মিরসরাই থেকে সংসদীয় আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও বিএনপি থেকে তার মনোনয়নপত্র পাওয়ার সম্ভাবনাটা অনেক অংশে বেশি বলে মনে করেন অধিকাংশ বিএনপির নেতাকর্মীরা।
স্থানীয়দের কাছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে একটি পক্ষ মনে করছেন বর্তমান ১৪ দলীয় ঐক্যজোট টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকার কারণে পরিবর্তন চায় ভোটারদের বিরাট একটি অংশ । ফলে চট্টগ্রাম মিরসরাই আসন থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক না কেন নিরঙ্কুশ ভোটে বিএনপি প্রার্থী জয় লাভ করার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেশি।
আরেকটি অংশ মনে করছে বর্তমান সরকারের বড় উন্নয়ন প্রকল্পের মাঝে ‘সর্ববৃহৎ ইকোনমিক জোন’ হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে, রয়েছে বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চলের বিশাল বিনিয়োগ। ফলে আওয়ামী লীগ তথা বর্তমান সরকারের যাকে মনোনয়ন দিবে সেই ভোটে জিতবে।
সবমিলে এই আসনে বড় দুই দলের তুমুল প্রতিদন্দ্বীতা হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে আভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে দুই দলেই একক প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলে জেতার সমীকরণ সহজ হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দেশ বর্তমান/এআই