দেশি পণ্যের জিআই স্বীকৃতির বিষয়ে তৎপর হওয়া জরুরি

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় বিতর্ক। কারণ ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ বাংলাদেশে বহুল পরিচিত এবং নিজস্ব একটি। অথচ, ভারত সেটিকে তাদের বলে দাবি করে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দেয়। এই পুরো বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশিরা। শুধু তাই নয়, রাজ্যটির নিজস্ব পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে সুন্দরবনের মধুও। যদিও সুন্দরবনের ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে এবং এই মধু এদেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। আর এ ঘটনার জন্য দায়ি করা হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে। যদিও এই দাবি যৌক্তিক। কারণ, কর্তৃপক্ষ আগে থেকে এ বিষয়ে তৎপর হলে অন্যদেশ তাদের বলে দাবি করতে পারত না।

কিন্তু এখন যদি সুন্দরবনের মধু ও টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই সনদের জন্য কেউ আবেদন করে, তাহলে বাংলাদেশও এই সনদ পেতে পারে কি-না, এ নিয়ে ডিপিডিটি পরিচালক মো. মুনিম বলেন, জিআই সনদের প্রক্রিয়া আছে। এটা অঞ্চলভিত্তিক। তাই সুন্দরবনের মধু বা টাঙ্গাইল শাড়ি জিআই সনদ পেতে পারে কি পারে না, সেই সিদ্ধান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে হবে।

আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপাটি’ রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) জিআই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন ‘বিসিক’-এর পক্ষ থেকে জামদানিকে জি আই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের অনুমোদন চাওয়া হয় এবং ২০১৬ সালে সেটি স্বীকৃতি পায়।

এরমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়ে তৎপর হতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। ডিপিডিটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, যে ১৪টি পণ্যের জন্য আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলো হলো-যশোরের খেজুর গুড়, নরসিংদীর লটকন, নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা, জামালপুরের নকশীকাঁথা, মধুপুরের আনারস, সুন্দরবনের মধু, মৌলভীবাজারের আগর-আঁতর, রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম, মুক্তাগাছার মণ্ডা, রাজশাহীর মিষ্টিপান, শেরপুরের ছানার পায়েশ, ভোলার মহিষের কাঁচা দুধ, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ও নওগাঁ’র নাগ ফজলি আম।

এছাড়া, আবেদনের প্রক্রিয়ার মাঝে আছে আরও দু’টি পণ্য। সেগুলো হলো- দিনাজপুরের লিচু ও টাঙ্গাইলের শাড়ি।

আমরা মনে করি এই তালিকার বাইরে স্থানীয় আরও অনেক পণ্য আছে যা বিশেষ করে ওই এলাকারই ঐতিহ্যের স্মারক। সেসব পণ্যের বিষয়ে এখন থেকে তৎপর হতে হবে। যেমন চট্টগ্রামের- মধুভাত ও বেলা বিস্কুট। এগুলো বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়া আর কোথাও তৈরি হয় কিনা জানা যায়নি। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে তৎপর হতে পারেন। তা না হলে টাঙ্গাইল শাড়ি ও সুন্দরবনের মধুর মতো এটাও হাতছাড়া হয়ে যাবে।