দখল নৈরাজ্যে ছেয়ে গেছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় প্রতিদিনই প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে রেলওয়ের মূল্যবান জমি ও সম্পত্তি। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন অনেকেই। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আশকাড়া ও ছত্রছায়ায় দখলদারিত্ব ও নৈরাজ্য চলছে অবিরাম। এবার এই প্রথা ছড়িয়ে পড়েছে স্কুল শিক্ষদের মাঝেও।
রেলওয়ের প্রায় ৭ হাজার ১৬৭ স্কয়ার ফিটের একটি খেলার মাঠ দখল করে আছে পাহাড় তলীর টিকিট প্রিন্টিং প্রেস কলোনি হাই স্কুলের বেশ কয়েকজক শিক্ষক। দখলকৃত ওই খেলার মাঠে স্থায়ীভাবে বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি দাশ সহ মোট ৬ জন স্কুল শিক্ষক।
ওই তালিকার বাকি আরও ৫জন স্কুল শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক প্রধান শিক্ষকের একান্ত সহযোগী মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন (আইসিটি শিক্ষক), মোহাম্মদ বাহার উদ্দিন (কৃষি শিক্ষার শিক্ষক), শিরিন সুলতানা (হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক), সিখা চক্রবর্তি (অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক) ও মুহিবুর রহমান (সাবেক শিক্ষক)।
এছাড়াও শিক্ষতার মতো নৈতিক আদর্শকে বলি দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন সাবেক প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি দাশ ও তার সহযোগী শিক্ষকরা। তিনি স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ থেকে শুরু করে সনদ জালিয়াতি সহ নানান অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। সনদ জালিয়াতি সংক্রান্ত একটি মামলাও বর্তমানে আদালতে চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। অবৈধ ভাবে জায়গা দখল, ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়েরও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যহতি নেওয়ার পর নিজের পছন্দের লোক ধর্ম শিক্ষক জয়নালকে বসিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে। তবে নিয়ম অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার কথা ছিল শিরিন সুলতানা নামে এক সিনিয়র শিক্ষিকার। একজন দেশ গড়ার কারিগরের এমন কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ করছে শিক্ষকতার মহৎ পেশাকে।
রেলের জায়গায় প্রকাশ্য দিবালোকে চলে দখল ও নানা ধরণের অনৈতিক কাজ। তবে এই সকল কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে। যেন অবৈধ দখলদারদের কাছে অসহায় রেলওয়ে প্রশাসন।
অভিযোগ উঠেছে, ২০১৫ সালে অস্থায়ী শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের কথা বলে প্রকাশ্য দিবালোকে ৭ হাজার ১৬৭ স্কয়ার ফিটের একটি খেলার মাঠ দখল করেন অভিযুক্ত ওই স্কুল শিক্ষকরা। তবে এর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুইপাশে দেওয়াল আর সামনে টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করে রেখেছেন জায়গাটি। ভেতরে স্থায়ীভাবে তৈরি বিলাসবহুল বাড়ি।
এ বিষয়ে স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি দাশ বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনের মাধ্যমে আমরা সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করেছি। ২০১৫ সালে আমাদের বিদ্যালয়ে সংস্থাপনের কাজে বেশ কয়েকটি শ্রেণীকক্ষ ভেঙে ফেলা হয়েছিল। এতে শ্রেণিকক্ষের সংকট দেখা দিলে আমরা অস্থায়ী ভিত্তিতে কয়েকটি কক্ষ নির্মাণ করি।
তবে মিল পাওয়া যায়নি সাবেক প্রধান শিক্ষকের কথা ও কাজের। শ্রেণিকক্ষের নাম করে রেলের জায়গা দখল নিতেই শিক্ষকদের এ কৌশল বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
অবৈধভাবে খেলার মাঠ দখল করে স্থায়ীভাবে বাড়ি নির্মাণ- তা কতোটুকু যৌক্তিক? এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি দাশ বলেন, এই জায়গা রেলের, রেল চাইলে আমরা চলে যাব, থাকার কোনো সুযোগ নেই। তবে রেল যেহেতু কিছু বলছে না তাই আমরা এখনো আছি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আগে এটি একটি খেলার মাঠ ছিল। এলাকার শিশু-কিশোররা এই মাঠে প্রতিদিন খেলাধুলা করতো। তবে শিক্ষদের দখলের কারণে খেলার মাঠটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশু-কিশোররা এখন বিভিন্ন নেশা ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
এই ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা দেশ বর্তমানকে বলেন, আমরা এই বিষয়টি খুতিঁয়ে দেখবো এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যাবস্থা নিব। প্রয়োজনে আমরা টিকিট প্রিন্টিং প্রেস কলোনি হাই স্কুল কতৃপক্ষের সাথেও যোগাযোগ করবো।
পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, সে যেই হোক, ব্যক্তিগত কাজে কেউ রেলের জায়গা দখল করে থাকতে পারবে না। আজ না হয় কাল সকলকেই উচ্ছেদের আওতায় আনা হবে।