শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল আরও কাছে

> সেবা মিলবে ৭ অক্টোবর থেকে > উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এরই মধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে একাধিক মেগা প্রকল্প, যা দেখে কার্যত বিষ্মিত দেশবাসী। উন্নয়ন দেখে কেবল দেশের জনগণই বিষ্মিত হননি, বিষ্মিত বিশ^বাসীও। উন্নয়নের পালে নতুন হাওয়া বইয়ে দিতে এবার সময়ের আগেই উদ্বোধন হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। টার্মিনালে আংশিক উদ্বোধনের চূড়ান্ত প্রস্তুতিও শেষ। ধারণা করা হচ্ছে দেশের এভিয়েশন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে তৃতীয় এই টার্মিনাল। আগামী ৭ অক্টোবর টার্মিনাল ভবনটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নতুন টার্মিনালটি যাত্রীদের বিশ্বমানের সেবা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল বর্তমানে ৩০টি এয়ারলাইন্সের প্রায় ১৫০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে এবং প্রতিদিন প্রায় ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ যাত্রীকে পরিষেবা দেয়। নতুন টার্মিনালে ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য একটি বড় লাউঞ্জ বছরে ৪০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেবে। অন্যান্য দেশ থেকে আগত যাত্রীদের জন্য কাস্টমসের জন্য একটি হল ও ছয়টি চ্যানেল রয়েছে। টার্মিনালটিতে ৩৬৫০ বর্গমিটার এলাকা থাকবে ভিআইপি যাত্রীদের সেবা দেয়ার জন্য।

উদ্বোধনের পর তৃতীয় টার্মিনালের নতুন পার্কিং অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ব্যবহার করতে পারবে এয়ারলাইন্সগুলো। পুরাতন দুটি টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে বর্তমানে ২৯টি উড়োজাহাজ থাকতে পারে। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে একসঙ্গে মোট ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করা যাবে। মেগা প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। টার্মিনালের কাঠামো প্রস্তুত রয়েছে এবং বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে কাজ চলছে। সুইস এয়ার, এয়ার কানাডা, এয়ার ফ্রান্সসহ অন্তত ১৫টি নতুন বিদেশি এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বেবিচকের মতে, নতুন টার্মিনালে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, অ্যারাইভাল লাউঞ্জ, ক্যান্টিনা, ডিউটি ফ্রি শপ ও বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জুড়ে দুটি এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে রয়েছে, যাতে কোনো উড়োজাহাজ অবতরণের পর দ্রুত রানওয়ে ছেড়ে যেতে পারে এবং এটি উড্ডয়ন বা অবতরণের জন্য অন্যান্য উড়োজাহাজ ব্যবহার করতে পারে।

বেবিচকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তৃতীয় টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া ও ভ্রমণের সুযোগ করে দেবে। মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ভূগর্ভস্থ টানেল ও ফ্লাইওভার নির্মাণের ফলে যাতায়াতের সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এয়ারলাইন্স লাউঞ্জ, ডেরুম, মুভি লাউঞ্জ, শিশুদের জন্য প্লে-জোন এবং ফুড কোর্ট যাত্রীদের চাহিদা ও স্বাচ্ছন্দ্য পূরণ করবে। প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি ৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে হবে বহুমুখী। ফলে যোগাযোগের বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ করা গেলেই থার্ড টার্মিনালের প্রকৃত সুফল মিলবে। এর মাধ্যমে কমবে বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের ভোগান্তি। সড়ক থেকে বিমানবন্দরে বা বিমানবন্দর থেকে সড়কে ঢোকার মুখে পড়তে হবে না যানজটে। যথাসময়ে ফ্লাইট ধরতে পারবেন যাত্রীরা। এছাড়া যারা বিদেশ থেকে ভারী লাগেজ নিয়ে ফেরেন, তাদেরও কমবে বিড়ম্বনা।

বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ এ প্রতিদিন বিদেশি ৩৩টি এয়ারলাইন্সের ১২০ থেকে ১৩০টি ফ্লাইট ওঠা-নামা করে। এসব ফ্লাইটে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন ২০ হাজারের বেশি যাত্রী। যদিও দেশের প্রধান বিমানবন্দরের সক্ষমতার চেয়ে যাত্রীর চাপ অতিরিক্ত হওয়ায় প্রায়ই ঘটে শিডিউল বিপর্যয়। আবার ট্যাক্সিওয়েতে সিগন্যালের অপেক্ষায় উড়োজাহাজের দাঁড়িয়ে থাকা তো নিত্যদিনের ঘটনা। এখন থার্ড টার্মিনাল চালু হলে যাত্রী সেবার সক্ষমতা বাড়বে ৬০ হাজারের বেশি। ফ্লাইট বাড়বে বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বাড়বে যাত্রীর চাপ। ফলে যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামলাতে বিমানবন্দরের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল বা বিআরটি আন্তঃসংযোগের বিকল্প নেই। যোগাযোগের এসব মাধ্যম ব্যবহারের ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবের সঙ্গে চলাচল সহজ হবে। বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে হবে বহুমুখী। ফলে যোগাযোগের বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ করা গেলেই থার্ড টার্মিনালের প্রকৃত সুফল মিলবে। এর মাধ্যমে কমবে বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের ভোগান্তি।

শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হয়। বিআরটি উদ্বোধন করা হবে অক্টোবরে। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনও একই মাসে (৭ অক্টোবর)। যদিও তা যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারবেন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। আর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন হতে পারে এমআরটি প্রকল্প। যোগাযোগের এই সবকয়টি প্রকল্পই বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে যুক্ত হবে। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে সরাসরি চলে আসা যাবে বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে। এ লক্ষ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে নামার জন্য রাখা হচ্ছে আলাদা লেন। একই পথ ব্যবহার করা যাবে বিমানবন্দর থেকে বের হতেও।

এছাড়া, মেট্রোরেল-১ প্রকল্প কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে রাজারবাগ-মালিবাগ-রামপুরা, যমুনা ফিউচার পার্ক, খিলক্ষেত হয়ে বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা গিয়ে শেষ হবে। এর পুরোটাই পাতালরেল। কাওলা স্টেশন থেকে ২০০ মিটার দীর্ঘ টানেলের কাজ চলমান, যা যুক্ত হবে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে। একই সঙ্গে চলছে বিমানবন্দর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ। আবার বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ব্যবহার করে মাত্র ৩০ মিনিটে গাজীপুর থেকে আসা যাবে শাহজালাল বিমানবন্দরে।