ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস ভাড়া কমাতে হরতালের হুমকি 

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের যাত্রী অধিকার সংরক্ষিত ফোরাম জানিয়েছেন, যুগের পর যুগ ধরে সারা দেশে গণপরিবহন নিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতি বহাল রয়েছে। সরকার বদলালেও অরাজকতা দূর হয় নাই। সরকার তাদের দলীয় লোকজনকে অনৈতিক সুবিধা দিতে এই সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। যে সিন্ডিকেট বছরের পর বছর সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে রেখেছে। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে এই অরাজকতা ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান একাই গত ১৫ বছরে পরিবহন খাত থেকে চাঁদাবাজি করেছেন ২৪ হাজার কোটি টাকা বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম। শনিবার (২৬ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব অডিটরিয়ামে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহবায়ক রাফিউর রাব্বি, এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক কমিটি, সংস্কৃতিক জোট সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহবায়ক রাফিউর রাব্বি আরো বলেন, বিগত সময় দেখা যায় শেখ হাসিনা সরকার সব সময়ই ছিল পরিবহন মালিক ও মাফিয়া বান্ধব। নিজেদের দলীয় ক্যাডার ও আত্মীয়-স্বজনদের অনৈতিক সুবিধা দিতে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে সব সময় কিলোমিটার প্রতি পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করেছে অযৌক্তিকভাবে। সরকারের এ গণবিরোধী নীতির সাথে মিল রেখে পরিবহন মাফিয়াদের সাথে যোগসাজশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআরটিএ) জনগণের স্বার্থকে অবজ্ঞা করে বিভিন্ন স্থানের ভাড়া নির্ধারণ করে গেছে।নারায়ণগঞ্জে পরিবহন নিয়ে অরাজকতা দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন সেক্টরের মতো এই পরিবহন খাতটি ছিল ওসমান পরিবারের চাঁদাবাজির অন্যতম উৎস। যথেচ্ছভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করে জনগণের দুর্ভোগ তৈরিতে স্থানীয় বিআরটিএ ও প্রশাসন সবসময় তাদের সহায়তা করেছে।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে দাবি জানিয়ে আসছি নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকাসহ সকল রুটের ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার এবং ছাত্রদের জন্য অর্ধেক ভাড়া দ্রুত কার্যকর করার। জেলা প্রশাসনের সভায় এ সব অসঙ্গতি তুলে ধরলেও তা নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় নাই। প্রশাসনের সাথে এ সব সভার প্রেক্ষিতে আমাদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন পরিবহন মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় যতটা তৎপর, যাত্রী সাধারণের অধিকার রক্ষায় অতটাই উদাসীন। সভার মাধ্যমে কালক্ষেপণের পথগ্রহণ করা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা (লিংক রোড) রুটে বাস ভাড়া ৪৫ টাকা করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ থেকে পাগলা-পোস্তগোলা হয়ে ঢাকা, চিটাগাং রোগ, সোনারগাঁ পঞ্চমীঘাট, পানাম, কোবগা (তাজমহল) রুটের ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে।, ছাত্রদের জন্য অর্থেক ভাড়া কার্যকর করতে হবে, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে বিআরটিসি এসি বাসের ভাড়া ৬০ টাকা এবং এই রুটের বেসরকারী সকল এসিবাসের ভাড়া ৬৫ টাকা করতে হবে।অন্যথায় ২৯ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল লিফলেট বিতরণ, মশাল মিছিলসহ নানান কর্মসূচি পালন করা হবে। দাবি না মানা হলে ১৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরে সকাল ৬টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত অর্ধ-দিবস সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি পালন করা হবে। আমরা আশা করবো আমাদের চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার আগেই স্থানীয় প্রশাসন ১৫ নভেম্বরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের মানুষের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে বহু রক্তের বিনিময়ে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করবেন এবং স্থানীয় পরিবহন মাফিয়াদের হাত থেকে জনগণের অধিকারকে রক্ষা করবেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’র সভাপতি নূর উদ্দিন আহমেদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল, কমিউনিস্ট পার্টি জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলামসহ অনেকে।