ডেঙ্গু রোগীর চাপ আর নিতে পারছে না ভরসার কেন্দ্র হয়ে ওঠা রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতাল। পাঁচশ’ শয্যার হাসপাতালটিতে কেবল ডেঙ্গু রোগীই আছে ছয়শোর বেশি। তারপরও প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
শয্যা না থাকায় মেঝে, লিফটের পাশের ফাঁকা জায়গায় চলছে চিকিৎসা। এমন অবস্থায় অন্যান্য হাসপাতালে যেতে রোগীদের আহবান জানাচ্ছে মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সাধারণত রোগীর পাশে গিয়েই স্যালাইন পুশ করেন নার্সরা। কিন্তু মুগদা হাসপাতালের চিত্রটা ভিন্ন। রোগীর চাপ এতোটাই বেশি যে, স্যালাইন দেয়ার অবসরটুকুও নেই নার্সদের।
তাই মুমূর্ষ রোগীদেরই দাঁড়াতে হয়েছে স্যালাইন নেয়ার লাইনে। লাইনে দাঁড়িয়ে স্যালাইন পুশ করিয়ে আবারো রোগীদের ফিরে যেতে হচ্ছে নিজের শয্যায়।
কখনো রোগী নিজে, কখনো বা স্বজনরা স্যালাইনের ব্যাগ ধরে দাঁড়াচ্ছেন। তড়িঘড়ি স্যালাইন পুশ করছেন নার্স। আর এভাবেই চিকিৎসা চলছে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে।
হাসপাতালটির কোন বিছানাই এখন আর ফাঁকা নেই। মেঝে সিড়ির পাশের ফাঁকা জায়গা, লিফটের সামনের জায়গা, সব খানেই রোগীদের ঠাই নাই অবস্থা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মুগদা হাসপাতালের তৃতীয় তলায় নারী, অষ্টম তলায় শিশু এবং নবম ও দশম তলায় পুরুষ ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। ওয়ার্ডের ভেতরে জায়গা নেই।
সামনের বারান্দা ও খোলা জায়গা দিয়ে সারি করে বিছানা পাতা হয়েছে। ছাদে অনেক দূরে দূরে লাগানো ফ্যান ঘুরতে থাকলেও বহু লোকের উপস্থিতিতে পরিবেশে ভ্যাপসা গরম।
এক–দুটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রতিটি বিছানায় রোগীর মাথার কাছে স্যালাইন ঝোলানোর স্ট্যান্ড থেকে ঝুলছে স্যালাইনের ব্যাগ। রোগীর সঙ্গে আছেন তাঁদের আত্মীয়স্বজন।
বিশেষ করে নারী ও শিশুদের সঙ্গে মা–বাবাসহ একাধিক লোক আছেন দেখভাল করার জন্য। ফলে ওয়ার্ডগুলোতে বলতে গেলে পা ফেলার জায়গা নেই।
নির্ধারিত জায়গার পাশাপাশি ওয়ার্ডের ভেতর সুবিধামতো জায়গায় টেবিল পেতে তার ওপর স্যালাইনের ব্যাগের স্তূপ সাজিয়ে বসেছেন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে আসা নার্সরা।
কেবল স্যালাইন আর প্যারাসিটামলই মিলছে হাসপাতালে। বাকি ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। তাকে অবশ্য কিছু মনে করছেন না স্বজনরা। রোগীকে বাঁচানোর বড় লক্ষ্য।
পাঁচশ শয্যার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ভর্তি ছিলো ৬০২ জন ডেঙ্গু রোগী। পরিচালক বলছেন, নিয়ম মতো কোন রোগীকেই তারা ফিরিয়ে দিতে পারেন না।
কিন্তু বাস্তবতা হলো নতুন রোগী নেয়ার মতো অবস্থাটা আর নেই। মো: নিয়াতুজ্জামান বলেন, তাই আমরা অনুরোধ করছি যেন এখানে না এসে অন্য হাসপাতালে যেতে।
তিনি জানান, বাড়তি নার্স ও চিকিৎসকও দেয়া হয়েছে মুগদা হাসপাতালে। তবু সামলানো যাচ্ছেনা পরিস্থিতি। রোগী অতিরিক্ত হয়ে গেলো লোকবল বাড়িয়ে কোন লাভ নেই।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় সবার ভরসা হয়ে ওঠা হাসপাতালটির ডেঙ্গু পরীক্ষার লাইনেও উপচে পড়া ভিড়। প্রতিদিন তিনশ’ জনের পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু লাইনে হাজারও মানুষ।