বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শনিবার (২২ অক্টোবর) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩০ হাজার ২৯ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ২৬ হাজার ৫১৩ জন। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১১২ জন রোগী। গত ১৩ অক্টোবর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ বছর সর্বোচ্চ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
যে কোনও সময় আমাদের জ্বর হতে পারে। আর এখন ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গ থাকলে দ্রুতই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ডেঙ্গু জ্বর কখন বলব, এ প্রশ্নের উত্তরে ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হসপিটালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. সুমন্ত কুমার সাহা বলেন, ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে এবং যখন কামড় দেয়, এর মাধ্যমে যে জ্বর হয়, তাকে আমরা ডেঙ্গু জ্বর বলি।
কী কী লক্ষণ বা উপসর্গ থাকলে আমরা বলব। কারণ, অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় দু-তিন দিন বা চার-পাঁচ দিন ধরে জ্বর, তারা এই বিষয়টিকে আমলে নিচ্ছেই না, ভাবছে সিজনাল জ্বর। সে ক্ষেত্রে কোন কোন উপসর্গে আমরা বুঝব এটি ডেঙ্গু জ্বর? সঞ্চালকের এ প্রশ্নের উত্তরে ডা. সুমন্ত কুমার সাহা বলেন, ২০১৮ সালে আমাদের ন্যাশনাল একটি গাইডলাইনস বের হয়। এই গাইডলাইনসে বলা আছে কীভাবে আমরা ডেঙ্গু জ্বর ম্যানেজমেন্ট করব এবং কীভাবে আমরা কেসগুলো ডিটেক্ট করতে পারব। ডেঙ্গু জ্বর যেহেতু মশাবাহিত রোগ, আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাই সবচেয়ে বড়।
ডা. সুমন্ত কুমার সাহা বলেন, গাইডলাইন বলছে, আমরা এ জ্বরটা তিনটা ক্যাটাগরিতে ভাগ করি—ক্যাটাগরি এ, বি ও সি। এ ক্যাটাগরিকে আমরা বলছি, অ্যাবসেন্ট ওয়ার্নিং সাইনস। মানে আমাদের খারাপ কোন উপসর্গ থাকবে না। তাহলে কী হয়, হাই ফিভার হয়। হাই ফিভার বলতে ১০১ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। এর সাথে যদি সারা শরীর ব্যথা হয়, বিশেষ করে চোখের পেছনে ব্যথা হয়, মাথাব্যথা হয়, লালচে দাগ হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের ভাবতে হবে, ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে।
ডা. সুমন্ত কুমার সাহা বলেন, বি ক্যাটাগরি হচ্ছে, যাদের ওয়ার্নিং সাইনগুলো থাকে। বি ফর বার্নি সাইনস। যদি পেটে ব্যথা কারও থাকে, কেউ যদি প্রচুর বমি করে এবং আরও বলা আছে, ব্লিডিং ম্যাানিফেস্টেশনস। সে কী রকম, আমরা যদি রক্তবমি করি, নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। অনেক সময় দেখা যায়, মহিলাদের মাসিকের সময় না, কিন্তু প্রচুর রক্ত যাচ্ছে। পায়খানার সাথে রক্ত যাচ্ছে অথবা ত্বকের নিচে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। এগুলো কিন্তু ওয়ার্নিং সাইন। কেউ যদি অজ্ঞানের মতো হয়ে যায়, বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং যারা কনফিউজড হয়ে যায়, এমনকি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। যদি প্লাজমা লিকেজের এভিডেন্স থাকে, অনেকের পেটে পানি চলে আসে, ফুসফুসে পানি আসে। এ ধরনের উপসর্গ যদি থাকে, তাহলে বি ক্যাটাগরিতে পড়বে। তাদের অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
ডা. সুমন্ত কুমার সাহা যুক্ত করেন, সি ক্যাটাগরি হচ্ছে ক্রিটিক্যাল ফেস। এগুলো আরও খারাপ। ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ব্লাড প্রেশার কমে গেল, রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল, রোগী অনেক দুর্বল হয়ে পড়ল। বি ও সি ক্যাটাগরির রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। আইসিইউ সাপোর্টও প্রয়োজন হতে পারে।