ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্থায়ী জামিন পেলেন প্রথম আলো সম্পাদক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমানকে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন আদালত।

এই মামলায় মতিউর রহমানের আইনজীবী স্থায়ী জামিন চেয়ে আবেদন করলে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সাল আতিক বিন কাদের বুধবার (১৬ আগস্ট) এই আদেশ দেন।  মতিউর রহমানের পক্ষে জামিন শুনানি করেন প্রশান্ত কুমার কর্মকার।

গত ২ এপ্রিল বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন।

এরপর গত ৩ মে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে উচ্চ আদালত থেকে পাওয়া আগাম জামিনের জামিননামা দাখিল করেন।  আদালত ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিননামা গ্রহণ করেন।

এরপর তারা স্থায়ী জামিনের জন্য আরেকটি আবেদন করেন।  আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পূর্ণাঙ্গ জামিন শুনানির জন্য ১৬ আগস্ট দিন ধার্য করেন।

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি ফটোকার্ডে একজন দিনমজুরের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়।  কিন্তু সে উদ্ধৃতির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় এক শিশুর ছবি।  দিনমজুরের উদ্ধৃতির সঙ্গে শিশুর ছবি প্রকাশের অসংগতির বিষয়টি তুলে ধরে ১৭ মিনিটের মধ্যেই ফটোকার্ডটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে প্রত্যাহার করে সংশোধনী দেয় প্রথম আলো।

এ ঘটনায় গত ২৯ মার্চ রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন আইনজীবী আবদুল মালেক।  এ মামলায় পত্রিকাটির সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস ও ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করা হয়।  একই সঙ্গে প্রতিবেদনটি দৈনিক প্রথম আলো তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করে।  সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে।  প্রতিবেদকের দাবি, ওই শিশুটির নাম জাকির হোসেন।  পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম।  বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়।  আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো। ’

এতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়।  সংবাদটি দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন।  এ ঘটনায় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সোনালি গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণসহ বহির্বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।  মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে এ সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বাধীনতার অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, পরবর্তীকালে একাত্তর টিভিতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো পত্রিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে।  যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।  নাম-পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।  পত্রিকায় বলা হয় শিশুটির নাম জাকির হোসেন।  কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায় ওই শিশুর নাম সবুজ আহমেদ।  তার বাড়ি সাভার থানার কুরগাঁও পাড়ায়।  তার বাবা একজন রাজমিস্ত্রি।  মা মুন্নী বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো সবুজ।  প্রথম আলোর তথ্যে বলা হয়েছে, সে দিনমজুর।  কিন্তু সাত বছরের শিশু সবুজ আহমেদ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে এবং স্কুল শেষে মাঝেমধ্যে ফুল বিক্রি করে।

এজাহারে আরও বলা হয়, শামসুজ্জামানের প্রস্তুত করা প্রথম আলোর ওই সংবাদে বলা হয়েছে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’। প্রকৃতপক্ষে ওই শিশুটি এ ধরনের কোনো কথা বলেনি। শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে এ ছবি তুলেছে।