ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে সতর্ক থাকা দরকার

দেশব্যাপী শীতের তীব্রতা বেড়েছে। চলতি মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল শুক্রবার রেকর্ড করা হলো দেশের সর্ব-উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়- ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া, পঞ্চগড়সহ দেশের ১২ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। সূর্যের দেখা পাওয়া ভার ওই জনপদের মানুষের। দেশের অনেক এলাকা আছে যেখানকার মানুষ নাতীশীতোঞ্চ আবহাওয়ায় অভ্যস্ত। তীব্র গরম ও শীত দুটিই এ এলাকার মানুষের জন্য বিরক্তের ও দুর্ভোগের। হঠাৎ তীব্র শীতে এসব এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। যুবুথুবু হয়ে পড়েছে শিশু, নারী ও বয়োবৃদ্ধরা। খেটে খাওয়া মানুষ কাজকামে ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। বহু এলাকায় শ্রমজীবী মানুষ এক প্রকার শীতের সঙ্গেই যুদ্ধ করছে। সেই সাথে বেড়ে গেছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে হাজারো রোগী বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ হাসপাতালে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে শিশু ওয়ার্ড ও হাসপাতালগুলোতে তিল ধরণের ঠাঁই নেই।

শীতের তীব্রতার কারণ খুঁজতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলাবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়ায় ভারসাম্য হারিয়েছে। ফলে শীত ও গরমের প্রাধান্য বিস্তার করবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে গণমাধ্যমগুলো আবহাওয়া অধিদপ্তরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, তীব্র শীতের মাঝেই বজ্রসহ বৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র জানায়, এসময় খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায়; চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও মৌলভীবাজার জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা আরো প্রশমিত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠাণ্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

শীতে বৃষ্টি আর শৈত্যপ্রবাহ ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’ বৈ আর কিছু নয়। আবহাওয়া দপ্তর বলেছে শীতের এ দাপট জানুয়ারি জুড়ে থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে, তাহলে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। কিন্তু পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে তবে শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। বেশিরভাগ জেলাতেই সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়াতে শীতের অনুভূতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কোথাও কোথাও তা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আর সেই প্রভাব থেকে প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহুরে এলাকাও বাদ যাচ্ছে না। এবার শীতের প্রকোপ এতটা বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হল উত্তুরে হিমেল হাওয়ার গতিবেগ। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশজুড়ে উচ্চচাপ বলয় তথা বাতাসের চাপ বেশি থাকার কারণে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে শীতের ঠান্ডা বাতাস উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় শীতের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে। এছাড়া স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল আট থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। ফলে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় মাটি শীতল থাকছে এবং তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষায় বিভিন্ন সতর্কতা জারি করেছে। ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্র নেমে আসলে সেই সব এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করেছে।

আমরা মনে করি, সরকারের এ নির্দেশনাটি সময়োপযোগী। তবে শুধুই স্কুল বন্ধ রাখলে হবে না, ঘরে বাইরে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এছাড়া প্রচণ্ড শীতে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে সামর্থবানদের। এ সময় গৃহহীন, হতদরিদ্র্য মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক সহযেগিতা করতে পারাটাই সবচেয়ে বড় কর্ম হবে। এ বিষয়ে সরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবেÑ এমন প্রত্যাশা আমাদের।