জাতীয় পার্টির পরাজিত প্রার্থীদের ‘টাকা আত্মসাতের’ অভিযোগকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে অভিযোগ প্রমাণ দিতে পারলে পদ থেকে পদত্যাগের চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, দু’চার জন প্রার্থী যারা নির্বাচনে জামানত রক্ষা করা তো দূরে, দুই শ ভোট পাবে না; তারা-ই টাকা পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, বাংলাদেশের কোনও লোক যদি বলতে পারে আমি বা চেয়ারম্যান কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছি দলের জন্য বা পার্টিকে দেওয়ার জন্য, তাহলে আমি পদত্যাগ করবো। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন চুন্নু। চুন্নু বলেন, এগুলো হলো গসিপিং। অনেকেই মনে করেছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যেহেতু আমাদের কথাবার্তা হয়েছে, ২৬টি সিট দিয়েছে। তাদের ধারণা, আমাদের অনেক টাকা দিয়েছে। শত শত কোটি টাকা দিয়েছে, প্রার্থীদের কেন আমরা দিলাম না। এটা তাদের মনের আসল ব্যথা। ইলেকশন ঠিকমত হয়নি, তারা পাস করেনি, এটা আসল ব্যথা না। দু’একজন ছাড়া বাকিদের আসল ব্যথা, আমরা শত কোটি টাকা পেয়েছি, তাদের দিই নাই কেন। ‘শত কোটি টাকা কে দেবে? সরকার আমাকে টাকা দেবে কেন? সরকার যদি আমাকে টাকা দেয়, তাহলে এটা জানার বাকি থাকবে? শতকোটি টাকা হজম করার লোক কি আমি? এত টাকা পাইলে তো আমি বিদেশ চলে যেতাম। নির্বাচনে কেউ এক টাকা দেয়নি। ব্যবসায়ীরাও না। তাদের অভিযোগ সত্য নয়। একটা অভিযোগ ঠিক আছে, দলের ফল বিপর্যয়। এটা তারা বলতে পারে। মূলত বাইরের ইন্ধনে এসব করা হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সেন্টু ভোট করেনি, মিলন হাজি সেলিমের ছেলের ইলেকশন করেছে আর ইয়াহইয়া সামান্য ভোট পেয়েছেন জানিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সেন্টু-ইয়াহইয়া গুরুতর অপরাধ করেছেন। তাদের বক্তব্য আপনারা শুনেছেন, জনসম্মুখে তারা বক্তব্য দিয়েছেন। একটা সংগঠনের নেতা হয়ে এ ধরনের বক্তব্য পাবলিকলি দেওয়া সংগঠন-বিরুদ্ধ, অমার্জনীয় কাজ। এজন্য চেয়ারম্যান তাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। তারা এগুলো ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারতেন। সেখানে অনেক সিনিয়র নেতা ছিলেন, তারা এ ধরনের বক্তব্য দেন নাই। তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও নাই। ‘ইয়াহইয়া সিলেট সিটি করপোরেশন ভোটে নৌকার প্রার্থীর জন্য ভোট চেয়েছিলেন। তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তিনি ক্ষমা চাইলে তাকে আবার দলে আনা হয়। এই ছেলেটার দলের প্রতি কোনও আনুগত্য কখনোই ছিল না। সেন্টু দলের পুরনো কর্মী। সন্দেহ নেই, সে দলের ভালো কর্মী ছিল। গতকাল সে আবেগের বশবর্তী হোক, যে কোনো কারণে যে ধরনের কথা বলেছে পাবলিকলি, সেখানে যদি সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে সাংগঠনিক কাঠামো ঠিক থাকে না- যোগ করেন জাপা মহাসচিব। চুন্নু বলেন, সেন্টু তার আসনে নৌকা আছে বলে আগেই জানিয়েছিল, সে ভোট করবে না। সে করেও নাই। যে লোকটা ভোট চায় নাই, সে তো এরকম অভিযোগ করতে পারে না। ইয়াহইয়া সামান্য ভোট পেয়েছেন। উল্লেখ করার মতো না। ২০১৮ সালে নৌকা ছিল না, তখনও সে জামানত হারিয়েছে। মিলন ইলেকশন করে নাই, সে হাজী সেলিমের ছেলেকে সাপোর্ট দিয়েছে। রোববারের অনুষ্ঠান সম্পর্কে চুন্নু বলেন, মতবিনিময় সভায় খুব বেশি প্রার্থী ছিল না। দু’চার জন প্রার্থী এসেছে, যারা নির্বাচনে জামানত রাখা তো দূরে, দুই শ ভোট পাবে না তারা করেছে। মূলত টাকার জন্য করেছে। ওরা ভেবেছিল আমরা টাকা পেয়েছি, তাদের টাকা দেয়নি। নির্বাচনের সফলতা-ব্যর্থতার দায় জাপা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ওপর আসে জানিয়ে চুন্নু বলেন, নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল পাইনি। সেই বিষয়ে আমার ও চেয়ারম্যানের মধ্যে দায়-দায়িত্ব আছে। সেই দায়ভার নিতেও আমরা রাজি ছিলাম। তার মানে এই না, পাবলিকলি এই ধরনের কথা বলবে। আমরা চেয়েছিলাম প্রেসিডিয়াম সভায় কথা বলবো, তারপর প্রার্থীদের ডাকবো। কিন্তু তারা যেটা করছে সেটা আমার মনে হয় বাইরে থেকে কারও ইন্ধন আছে। পার্টিকে দুর্বল করার জন্য, কারও ইন্ধন আছে। না হলে এ ধরনের কথা বলার কোনও যুক্তি নেই। কারা ইন্ধন দিচ্ছে, এটা এখনই বলতে পারবো না। এটা এখনই বলা মুশকিল, অনুমানের ওপর বলছি। দল ভাঙছে কি না জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব বলেন, দল ভাঙছে না, কোন জেলার সভাপতি সেক্রেটারি আসছে, প্রেসিডিয়াম মেম্বার সংখ্যাগরিষ্ঠ কেউ বিবৃতি দেয়নি। নির্বাহী সদস্যরাও বিবৃতি দেয়নি। সাংগঠনিক ভাঙা একটা প্রক্রিয়া। কতিপয় প্রার্থী যারা ভেবেছে আমরা টাকা পেয়েছি, ওদের টাকা দিইনি। এটাই কারণ, অন্য কোনও কারণ নেই। এখানে ভাঙা-ভাঙির কোনও বিষয় নেই।