জামিনে মুক্ত সেই মুস্তাকিম

চট্টগ্রামে ডায়ালাইসিসের ফি বাড়ানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের ‘সাজানো’ মামলায় গ্রেফতার সেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মো. মুস্তাকিম জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
জামিন আদেশ পৌঁছালে রোববার (১৫ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে থেকে বের হন মুস্তাকিম। এর আগে বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহ শুনানি শেষে তাকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। মুস্তাকিমকে আইনি সহায়তা দেন হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

ছেলের জামিনের জন্য সকালে আদালতে আসেন মা নাসরিন আক্তার। জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর আদালতের বারান্দায় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অনেক খুশি। ছেলে জেলে যাওয়ার পর নিজের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। গণমাধ্যম, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আমার ছেলের বিষয়ে এগিয়ে আসায় আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। যারা আমার চিকিৎসা খরচ চালানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

আদালতকে মানবাধিকার আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘টিউশনি করে মুস্তাকিম মায়ের চিকিৎসা চালাতেন। তিনি কারাগারে থাকায় তার মায়ের চিকিৎসা নিয়ে সংকট তৈরি হয়। তাকে মুক্তি দেওয়া হোক। শুনানিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা আদালতকে বলেন, দৈনিক প্রথম আলোয় ‘ডায়ালাইসিসের খরচ জোগানো ছেলেটি কারাগারে, দিশাহারা মা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে আসে। বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। গ্রেফতার মুস্তাকিম মাদ্রাসা ছাত্র। তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা নেই। ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তিনি পুলিশের ওপর আক্রমণ করেননি। তার হাতে লাঠিসোঁটা ছিল না। তার জামিন মঞ্জুর করা হোক।’

জানা গেছে, মুস্তাকিমের মা ৫৫ বছরের নাসরিন আক্তারের দুটি কিডনিই বিকল। সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করাতে হয় তিনবার। সাত বছর ধরে এভাবে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন তিনি। তার স্বামী মারা গেছেন। একমাত্র অবলম্বন মাদ্রাসা পড়ুয়া ২২ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ মুস্তাকিম। তার টিউশনির টাকাতেই চলত নাসরিন আক্তারের ডায়ালাইসিসের খরচ।

গত মঙ্গলবার ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধি এবং সরকারিভাবে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনের সড়কে কিডনি রোগী ও স্বজনদের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মুস্তাকিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকেসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৫০ থেকে ৬০ জন রোগীর স্বজনকে আসামি করে সরকারি কাজে বাধাদান ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ।

মোস্তাকিমের গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর আজাদী বাজারে। তার বাবার মরহুম খালেদ আহমদ। তার এক বোন থাকলেও তিনি প্রতিবন্ধী। গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ি হলেও বর্তমানে তারা থাকেন হাটহাজারী উপজেলার লালিয়ারহাট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়।