জনবল সংকট, রোগ নির্ণয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, অ্যাম্বুলেন্স স্বল্পতাসহ নানামুখী সমস্যায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল। আবাসিক মেডিকেল অফিসার কার্ডিওলজি, নাক-কান-গলা, সিনিয়র গাইনি কনসালট্যান্টসহ চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারী মোট ১৯২ জনের স্থলে রয়েছে মাত্র ১২২ জন। এখনো ৭১ জন জনবলের সংকট রয়েছে হাসপাতালটিতে। এ ছাড়া ১০০ শয্যার জন্য নির্ধারিত সরঞ্জাম, জনবল ও ভবনেই চলছে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম। নতুন ভবন নির্মাণ শেষ হলেও হস্তান্তর না হওয়ায় দেখা দিয়েছে নানা সংকট।
লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী কু্ড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার প্রায় ১৮ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা ২৫০ শয্যার এই হাসপাতাল। গত বৃহস্পতিবার(১৪ ডিসেম্বর) ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালে বেড স্বল্পতায় মেঝেতে বেড বিছিয়ে শুয়ে আছেন অনেক মুমূর্ষু রোগী। রোগীদের অভিযোগ রোগ নির্ণয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরের ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে। অনেকের আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা। এ ছাড়া সুইপার সংকটের কারনে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা আবজর্না। এ অবস্থায় সুচিকিৎসা ও সেবার মান নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই ভুক্তভোগীদের।
হাসপাতালটিতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসা নিতে আসা লালমনিরহাট শহরের বাহাদুর মোড়ের বাসিন্দা সাবিনা বেগম বলেন, সকাল ১০ টায় এসেছি দুপুর ১২ টা পার হলেও ডাক্তার আসেনি। ডাক্তারের রুমে নার্সরা আছে। জেলার আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ির বাসিন্দা পূর্ণ চন্দ্র বলেন, সকাল ৯ টায় অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি কিন্তু দুপুর হয়ে গেলেও ডাক্তারের দেখা পাইনি। কর্তৃপক্ষ জানালো ডাক্তার ছুটিতে আছে। অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। সরকারি হাসপাতালে যদি চিকিৎসা না পাওয়া যায় তাহলে হাসপাতালে ডাক্তার(চিকিৎসক) থেকে লাভ কি বলেও প্রশ্ন তুলেন তিনি। পাশেই থাকা অপর এক রোগীর আত্মীয় মোঃ লাজু মিয়া জানান, সম্প্রতি সদর হাসপাতালে তার নিকটাত্মীয় সিজার করানোর জন্য ভর্তি হয়। ২/৩ দিন থাকার পর চিকিৎসক জানায়, এখানে সিজার অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হবে তাই রংপুর নিতে হবে রোগীকে। পরে বাড়িতেই নরমাল ডেলিভারি হয় ওই রোগীর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল এলাকার এক বাসিন্দা জানান, হাসাপাতালে কর্মরত কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী দেখেন। এছাড়া কয়েকজন চিকিৎসক বিভাগীয় শহর রংপুরেও বসবাস করেন। সেখানে তারা বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সেবা দেন। অনেকসময় অজুহাত দেখিয়ে ছুটি ও অনুপস্থিত থাকেন তারা। এতে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ রমজান আলী বলেন, ১০০ শয্যা হাসপাতালেরই জনবল সংকট ছিলো। সেই জনবল দিয়েই ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ভালো সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। জনবলের চাহিদা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আর হাসপাতালের নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু হলে রোগীদের বিছানা সংকট থাকবে না।