আর মাত্র একদিন পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের ১৬টি আসনেও চলছে ভোট উৎসবের আমেজ। এই ষোলটি আসনে মোট প্রার্থী আছেন ১২৫ জন। কিন্তু প্রচার-প্রচারণায় অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থীর দেখা মিলছে না। এর বাইরে যাঁদের পোস্টার-ব্যানার রয়েছে, প্রচার-প্রচারণা যা চলছে, তাও উল্লেখ করার মতো নয়। তবে, আওয়ামী লীগের মনোনীত ও মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র, জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থীর নিয়মিত গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠকে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গতকাল বর্তমান সাংসদ ও বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী নৌকাকে সমর্থন দিয়ে সরে যাওয়ায় আরও ১২৪ জন প্রার্থীর নাম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ভোটের মাঠে সক্রিয় আছেন প্রায় ৪০ জন। বাকিরা সবাই কিছু সংখ্যক পোস্টার সাঁটিয়ে অনেকটা নিষ্ক্রিয় ভোটের মাঠে। জনসংযোগ এবং প্রচার প্রচারণায় না থাকায় নাম মাত্র প্রার্থী হিসাবে আলোচনায় আছেন তাঁরা। এদিকে, ১১টি আসনে স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টিও প্রার্থীর সাথে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) : এই আসনে মোট প্রার্থী ৭ জন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন প্রচার প্রচারণায় বেশ তুঙ্গে থাকলেও বিএনএফ, বিএমএল, বিএসপি, ইসলামিক ফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে কয়েক প্রার্থীর পোস্টার ছাড়া ভোটের মাঠে দেখা নেই তাদের।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি): এই আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ৯ জন। গতকাল সকালে বর্তমান সাংসদ ও বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী নৌকাকে সমর্থন দিয়ে সরে যাওয়ায় বর্তমান প্রার্থী সংখ্যা ৮ জন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদিজাতুুল আনোয়ার সনি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়বের প্রচার-প্রচারণা চলছে বেশ তুঙ্গে। এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী ছাড়া ইসলামিক ফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট, ও আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহানের নেই তেমন প্রচার প্রচারণা।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) : এই আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন। বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরীর জমজমাট প্রচারণা চলছে। এছাড়া সুপ্রিম পার্টি, জাপা, ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট, এনপিপির প্রার্থীর প্রচার প্রচারণা তেমন একটা নেই বললে চলে।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড): এই আসনের প্রার্থীর সংখ্যা ৭ জন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম আল মামুন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী লায়ন ইমরানের প্রচার প্রচারণা চোখে পড়ার মতো। কিন্তু জাপা, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, ইসলামিক ফ্রন্ট, ও আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আকতার হোসেন খুব বেশী সক্রিয় নয়।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী): এখন ভোটের মাঠে আছেন ৮ জন। বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, তৃণমূল বিএনপির মো. নাজিম উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরীর পোস্টারে ছেয়ে গেছে হাটহাজারী। এছাড়া সুপ্রিম পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট, বিএনএফ ও ইসলামিক ফ্রন্টের প্রার্থীর কয়েকটা পোস্টার ছাড়া কারোই তেমন প্রচার-প্রচারণা নেই।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান): এখানে প্রার্থীর সংখ্যা ৫ জন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইসলামিক ফ্রন্ট, তৃণমূল বিএনপি, জাতীয় পাটি, ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজম নাম মাত্রই প্রার্থী বলছেন স্থানীয়রা।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া): এই আসনে প্রার্থী ৬ জন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সময় পেলেই রাঙ্গুনিয়া চষে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন তাঁর প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মো. ইকবাল হাসানের বেশ কয়েক জায়গায় পোস্টার দেখা গেলেও জনপ্রিয়তায় ধারে কাছেও নেই এই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। এছাড়া সুপ্রিম পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট, তৃণমমূল বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ফ্রন্টের মো. ইকবাল হাসান নাম মাত্র প্রার্থী বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও): আসনে ভোটের লড়াইয়ে আছেন ১০ জন। এই আসনটি মহাজোটের মিত্র দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় জাতীয় পাটি প্রার্র্থী সোলায়মান আলম শেঠ, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কিষাণ চৌধুরীর প্রচার-প্রচারণায় থাকলেও কয়েকটি জায়গা পোস্টার ছাড়া দেখা নেই বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, তৃণমূল বিএনপি, কল্যাণ পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট, এপিপি ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থীর।
চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতয়ালী): এই আসনে প্রার্থী ৭ জন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নিয়মিত বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন এবং ভোটারদের কাছে ভোট চাচ্ছেন। এদিকে জাতীয় পার্টির সানজিদ রশিদ চৌধুরী ও ইসলামিক ফ্রন্টের মো. ওয়াহেদ মুরাদের কয়েকটি জায়গায় পোস্টার দেখা গেলেও দেখা যাচ্ছে না গণসংযোগে। এছাড়া ন্যাপ, ইসলামী ফ্রন্ট, কল্যাণ পার্টি, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থীরা ভোটের মাঠে অনেকটা নিষ্ক্রিয়।
চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর): এই আসনে প্রার্থী সংখ্যা ১০ জন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সাংসদ মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র মনজুর আলম এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদ সক্রিয় ভোটের মাঠে। এছাড়া তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট, সুপ্রিম পার্টি, জাতীয় পার্টি ও জাসদের প্রার্থীদের কয়েকটি জায়গায় পোস্টার দেখা গেলেও প্রার্থীরা ভোটের মাঠে অনেকটা নিষ্ক্রিয়।
চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর): এখানে প্রার্থী হলেন ৭ জন। বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ লতিফ, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চসিক কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনের প্রচার প্রচারণা বেশ তুঙ্গে। এছাড়া ইসলামিক ফ্রন্ট, সুপ্রিম পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, এনপিপি ও গণফোরামের প্রার্থীরা প্রায় ভোটের মাঠে অনেকটা নিষ্ক্রিয়।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া): এখানে মোট প্রার্থী ৯ জন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ভোটের মাঠে বেশ সক্রিয়। এছাড়া জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিনের তেমন প্রচার-প্রচারণা নেই।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী): এ আসনে প্রার্থী হলেন ৭ জন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সময় পেলেই চষে বেড়ান নির্বাচনী এলাকায়। এই হেভিওয়েট প্রার্থীর ধারে কাছে কেউ নাই। এছাড়া ইসলামিক ফ্রন্ট, তৃণমূল বিএনপি, সুপ্রিম পার্টি, জাতীয় পার্টি, খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থীর কয়েকটা পোস্টার দেখা গেলেও ভোটের মাঠে অনেকটা নিষ্ক্রিয় তাঁরা।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ): এখানে প্রার্থী ৮ জন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ মো. নজরুল ইসলামী চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী নির্বাচনী মাঠে বেশ সক্রিয়। এছাড়া বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বিএনএফ, বিএসপি, জাতীয় পার্টি, তরিকত ফেডারেশন ও ইসলামিক ফ্রন্টের প্রার্থীর বেশ কয়েকটা জায়গায় পোস্টার দেখা গেলেও প্রচার-প্রচারণায় তেমন নেই।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া): এখানে প্রার্থী সংখ্যা ৭ জন। বর্তমান সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেব ভোটের মাঠে সক্রিয়। এছাড়া জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট ও মুক্তিজোটের প্রার্থীরা অনেকটা নিষ্ক্রিয়।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী): এই আসনে প্রার্থী হলেন ১০ জন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন ভোটের মাঠে বেশ আলোচনায়। এছাড়া এনপিপি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, কংগ্রেস, ইসলামিক ফ্রন্ট, ন্যাপ ও ইসলামী ঐক্যজোট ও আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে কয়েক জন কয়েকটি জায়গায় পেস্টার ও আংশিক প্রচার-প্রচারণা চালালেও ভোটর মাঠে তেমন সক্রিয় নেই।