চট্টগ্রামে বেপরোয়া বাইক চুরি : ৪ দিনে ১৩ উদ্ধার, গ্রেফতার ১৫

মো. শাহনেওয়াজ একজন তরুণ উদ্যোক্তা। নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাটের খাজা রোড এলাকার আব্দুল মান্নান চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা। শখ করে ৩ লাখ টাকা দামের সুজকি জিক্সার ব্রান্ডের একটি মোটরসাইকেল কেনেন ব্যবহারের জন্য। চলতি বছরের ২৬ জুন কর্ণফুলীর মইজ্জারটেক সিডিএ আবাসিকে ২নং গেইটে রাখা মোটরসাইকেল পার্কিং করে কোরবানির পশু দেখতে যান। দেড় ঘণ্টা পর ফিরে এসে দেখেন মোটরসাইকেল উধাও। এদিক সেদিক খোঁজাখুজির পর ঘটনার পরেরদিন কর্ণফুলী থানা পুলিশের কাছে একটি হারানো ডায়েরি করেন। ঘটনার ৪ মাস পার হলেও উদ্ধার হয়নি মোটরসাইকেলটি। এখনো প্রতিনিয়ত পুলিশের কাছে মোটরসাইকেল উদ্ধারের জন্য ধর্ণা দিচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগী শাহনেওয়াজ।

তিনি গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, পুলিশের কাছে এত উদ্ধারের জন্য বারবার তদবির করলেও এখনো কোনো কূল কিনারা হয়নি। স্বাধীন দেশে বসবাস করেও নিজের মোটরসাইকেলটি চুরি থেকে রক্ষা করতে পারলাম না। আশা করছি থানা পুলিশ আমার মোটরসাইকেলটি উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। শুধু এই উদ্যেক্তা নই এভাবে প্রায় সময় নগর কিংবা উপজেলায় কেউ না কেউ মোটর সাইকেল চুরির শিকার হচ্ছে।

এদিকে মোটরসাইকেল চোর চক্র রুখতে থেমে নেই পুলিশও। প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেল উদ্ধারের পাশপাশি আইনের আওতায় আসছে চোর চক্রও। শুধু নগর গোয়েন্দা পুলিশের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরে ২৮টি মোরসাইকেল উদ্ধার এবং ২৯ জনকে আটক করে। এছাড়াও রয়েছে নগর থানা পুলিশ ও জেলা পুলিশের উদ্ধার এবং জড়িতদের আটক।

সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর-দক্ষিণ বিভাগ চট্টগ্রাম নগর ও জেলাতে অভিযান চালিয়ে নম্বর বিহীন ৮টি মোটরসাইকেল উদ্ধারের পাশাপাশি জড়িত ১১ জনকে গ্রেফতার করে। জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার নাহিদ আল তাইয়ান দেশ বর্তমানকে বলেন, গোপন সংবাদে জানতে পারি একটি চোর চক্র বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল বিক্রি করছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে চোর চক্রকে গ্রেফতারের পর বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরির বিষয়টি স্বীকার করে।

তিনি আরও বলেন, চুরির পর অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং নিজস্ব সোর্সের মাধ্যেমে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করতো তারা। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি মতে মীরসরাই উপজেলা ও জোরারগঞ্জ থানা এলাকা থেকে ৮টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করি এবং জড়িত চক্রের মূলহোতা আব্দুল্লাহ আল রায়হানসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করি। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ২৮টি মোরসাইকেল উদ্ধার এবং ২৯ জনকে আটক করেছেন বলেও জানান পুলিশের এই উপ-কমিশনার।

এ ঘটনায় জড়িত গেফতারকৃতরা হলেন, আব্দুল্লাহ আল রায়হান (১৯), ইরফানুল আলম (১৯) আক্তার হোসেন (২০), শহীদুল (৩০), মোস্তাফিজুর রহমান প্রকাশ অনিক (১৯), আব্দুল্লাহ (১৮), মামুনুর রশিদ (২৬), রিয়াজ উদ্দিন(১৯),শাকিব (১৯),রিফাত (১৯) ও সাইদুল ইসলাম (১৯)। আইনি পক্রিয়া শেষে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়।

এর ৪ দিন আগে সীতাকুণ্ড থানার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়ার কুল গ্রামে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি চোরাই মোটরসাইকেলসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, হাসান মাহমুদ রুবেল (৩৪), মো. জাফরুল মনির (২৪), কাইয়ুম মাহমুদ (২০) ও তৌহিদুল আলম তারেক (২৫)।

চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন ওই সময় জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে বোয়ালিয়ার কুল গ্রামে জাহিদ নামে এক পলাতক আসামি বাড়ির অভিযান চালানো হয়। এসময় চারজনকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের কাছে থাকা বিভিন্ন মডেলের পাঁচটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা এবং গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে সমাজবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ড. মঞ্জুরুল আমিন চৌধুরী দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, বর্তমানে সমাজে চুরি করা একটা রোগে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, বিমানবন্দর থেকে স্বর্ণ চুরি থেকে শুরু করে র্সবত্র চুরিতে লিপ্ত হচ্ছে দুস্কৃতকারীরা। দ্রুত ধনী হওয়ার টার্গেটে নেমে লোভে পড়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ চুরি করছে। এছাড়া মোটরসাইকেল চুরি করতে কৌশল কাজে লাগিয়ে কম সময়ে বহন (চালিয়ে) করতে সহজ এবং মুল্যবেশী পাওয়ায় চোররা মোটরসাইকেল চুরির দিকে ঝুঁকছে। আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর পাশাপাশি সচেতন মহল এগিয়ে আসলে চোর থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন এই সমাজ বিজ্ঞানী।

দেশ বর্তমান/এআই