সারা দেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন লেগেছে। সকালে এক মূল্য, বিকালে আরেক মূল্যের কারণে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠছে প্রতিনিয়ত। এবার বিএনপি-জামায়াতের টানা তিনদিনের অবরোধকালে গাড়িভাড়া বেশি নেওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। ফলে নিম্ন ও সীমিত আয় এবং খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এদিকে, বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশ দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম।
গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার, চকবাজার ও কাজির দেউড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতায় ভরপুর প্রায় সব কাঁচাবাজার। সবজির দোকানসহ নিত্যপণ্যের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। অনেকে দর কষাকষি করে প্রয়োজনীয় পণ্যে কিনছেন। মাছের বাজারে আগুন হলেও ভিড়ের চাপে হাঁটা যেন মুশকিল হয়ে পড়েছে। মুরগির কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ টাকা। একেক বাজারে সবজির কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ব্যবধান দেখা গেছে।
বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে প্রতিকেজি নদীর শোল মাছ আকার ভেদে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কৈ (দেশী) ৮০০ টাকা, মাগুর ৮০০ টাকা, শিং (দেশী) ৮০০-১০০০ টাকা এবং পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।
এছাড়া প্রতি কেজি রুই ৩৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ টাকা, চাষের শিং ৪০০ টাকা, কৈ ৩০০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, পাবদা ৩৬০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, চাষের পাঙাস ২০০ থেকে ২১০ টাকা ও তেলাপিয়া ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হাফেজ এনামুল হক নামে এক ক্রেতা দেশ বর্তমানকে বলেন, বাজারে আসলে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। আয়ের সাতে ব্যয়ের কোনো সঙ্গতি রাখতে পারছি না। প্রতিদিনই পণ্যের দাম বাড়ে। এখন দিচ্ছে অবরোধের বাহনা। কি করবো, খেতে তো হবে। দেশটাকে যে যার ইচ্ছেমতো চালাচ্ছে। কোনো মনিটরিং নেই। মাঝে মধ্যে কিছু অভিযান হয়, তবে সেগুলো লোক দেখানো। এখন সব কিছুর দাম বাড়তি।
মাছ বিক্রেতা সালাউদ্দিন দেশ বর্তমানেক বলেন, সামুদ্রিক মাছের দাম একটু চড়া। আরও কিছুু মাছ ১০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সবকিছুর দাম এখন বাড়তি। কেনার চেয়ে একটু বেশী দামে বিক্রি করতে না পারলে আমরা চলতে কষ্ট হয়। আমাদেরও চাল, ডাল, তেলসহ ও বিভিন্ন কিছু কিনতে হয়। কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। তাছাড়া গত তিনদিন ধরে অবরোধ চলছে। এতে পর্যাপ্ত মাছ আসেনি, তাই দাম কিছুটা বেড়েছে।
এছাড়া চকবাজার কাঁচাবাজারে প্রতিকেজি বরবটি ৮০, শিম ১১০, পটল ৬০, মুলা ৬০, মিষ্টি কুমড়া ৫০, ফুলকপি ৮০, ঢেঁড়শ ৬৫ ও তিত করলা ৬০, লতি ৫৫, চিচিঙ্গা ৬০, ঝিঙ্গা ৭৫, টমোটো ১০৫, আলু ৬০, পেঁয়াজ ১১০, রসুন ১৮০, আদা ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বহদ্দারহাটের সবজি ক্রেতা শফিক দেশ বর্তমানকে বলেন, বাজারে প্রতিদিনই পণ্যের দাম বাড়ছে। সকালে যে প্রতিকেজি ৬০ টাকায় কিনি, বিকালে তা হয়ে যাচ্ছে ৭০ টাকা। কিছু বললে ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরাও বর্ধিত দামে ক্রয় করছি। মনে হয় এখানে কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
এখানকার সবজি বিক্রেতা আজাদ বলেন, বাজারে চাহিদার বিপরীতে সবজি সরবরাহ থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে। সরবরাহ একটু কমলেই দাম বেড়ে যায়। তখন আমাদেরও বেশি দামে ক্রয় করতে হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন অনেকটাই বেশি। ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ভারত থেকে বাড়তি দামের পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি।
তিনি আরও বলেন, অবরোধ ও হরতালের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে খানিকটা চাপ বেড়েছে। অবরোধে কিছুটা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় হাট বাজারগুলোতে ঠিক মতো পণ্য পৌঁছাতে পারেনি। তাই বাজারে পণ্যের দাম একটু বেশি। তবে আমরা বাজার মনিটরিং করছি। কেউ যাতে বাড়তি দাম নিতে না পারে সে দিকে কড়া নজরদারি আছে। দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে অভিযান চালানোর কথাও জানান এই উপপরিচালক।