চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর সঙ্গে নিরবে বাড়ছে টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগী। জ্বর উঠলেই অনেকে টাইফয়েডের চিন্তা বাদ দিয়ে আগে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছেন। এতে দেরিতে শনাক্ত হচ্ছে রোগ। ফলে হঠাৎ আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগী ডেঙ্গু সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি হলেও তারা মূলত টাইফডেডে আক্রান্ত হয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৬-৭ জন টাইফয়েডের রোগী আসছে
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সাধারণত রোগ-জীবাণু শরীরে প্রবেশের ১০ থেকে ১৪ দিন পর টাইফয়েডের লক্ষণ দেখা দেয়। জ্বর এই রোগের প্রধান লক্ষণ, যা প্রথম চার-পাঁচদিন কখনও বাড়ে আবার কখনও কমে। তবে কোনোসময় সম্পূর্ণ ছেড়ে যায় না। এর মধ্যে ১০৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা পর্যন্ত টানা জ্বর হওয়া, সঙ্গে মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা হওয়াসহ কারও কারও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া ও বমি, কফ বা কাশি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, টাইফয়েড জ্বর ‘স্যালমোনেলা টাইফি’ নামের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে এই জীবাণু ছড়ায়। তখন জ্বরসহ নানান ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তস্রোত ও অন্ত্রনালীতে এই ব্যাকটেরিয়া অবস্থান করে এবং দূষিত খাবার ও পানি গ্রহণের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করা জীবাণু।
আরও জানা গেছে, টাইফয়েড দু’ধরনের জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে—‘সালমোনেলা টাইফি’ ও ‘সালমোনেলা প্যারাটাইফি’। সালমোনেলা টাইফির সংক্রমণে যে জ্বর হয় তাকে টাইফয়েড জ্বর বা ‘এন্টারিক ফিভার’ বলে। আর যদি জ্বর সালমোনেলা প্যারাটাইফি জীবাণুর কারণে হয় তখন তাকে ‘প্যারা টাইফয়েড’ জ্বর বলে। তবে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত চিকিৎসা না নিলে জ্বর সপ্তাহ বা মাসব্যাপী থাকতে পারে। ডেঙ্গু আর টাইফয়েডের চিকিৎসা ভিন্ন, টাইফয়েডে দু’বেলা অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদি বলেন, ‘টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডের লক্ষণ একই। দুটোই পানিবাহিত রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর হয়। জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রথম এক সপ্তাহ পায়খানা কষা হয়, পরের দিকে পায়খানা পাতলা হয়। পেটে ব্যথা হয়, খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।’
এদিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসি ঘুরে জানা গেছে, সম্প্রতি জ্বর, পাতলা পায়খানা ও জন্ডিসের ভিটামিন ওষুধ বিক্রি বেড়েছে। ডাক্তারের কাছে না গিয়ে জ্বর ও পেটের পীড়ার এসব ওষুধ কিনে খাচ্ছে অনেক রোগী।
এআই