রত্না পাল (ছদ্মনাম) একজন কলেজ শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামের সরকারী হাজী মো. মহসীন কলেজ কেন্দ্রের উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসএস (পাস) কোর্সের ২য় সেমিস্টারে অধ্যায়নরত। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কাজ শেষে নগরীর কাজির দেউড়ি থেকে রিকশাযোগে জামালখানে নিজের বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে সার্সন রোড ও আসকারদীঘি চত্বরের লেক ডাইন নামক রেস্টুরেন্টের ঠিক বিপরীত পার্শ্বে পেছন থেকে এসে হাতে থাকা ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায় মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারীরা। ভুক্তভোগী কলেজ শিক্ষার্থী চিৎকার দিয়ে উঠলে দুই যুবক এগিয়ে আসলেও ছিনতাইকারীরা দ্রুত মোটরসাইকেলযোগে সার্সন রোড দিয়ে সটকে পড়েন। এ ঘটনায় ব্যাগে থাকা মোবাইল, নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে দিশাহারা ওই শিক্ষার্থী। কোনো সমাধান না পেয়ে ওইদিন রাতে কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি : ৩২১০) করেন।
যদিও জিডিতে ছিনতাইয়ের কথা উল্লেখ নেই। উল্লেখ আছে শুধুই মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার কথা। শুধু রত্না পাল নয়, এর দুদিন পর আরও এক মহিলার কাছ থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, আসকার দীঘির পাড় ও সার্সন রোড ছিনতাইকারীদের জন্য হটস্পট। শুধুই চলতি বছরে এই সড়কে অন্তত ১০টির বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে ছিনতাইকারীদের ধরতে অভিযান চলমান আছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার ও অতিরিক্ত ডিআইজি মোস্তাফিজুর রহমান।
এদিকে রত্নার জিডিতে অজান্তে হারিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও ভুক্তভোগীর দাবি ছিনতাই করা হয়েছে তার ব্যাগ। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিতে সরেজমিনে ঘটনাস্থলের কাছে অবস্থিত ভেগাস ফার্নিচারের শো-রুম থেকে ওইদিনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজে দেখা যায়, ভুক্তভোগী তার এক বান্ধবীসহ রিকশাযোগে জামালখানের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় পেছন থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের দুই আরোহীর মধ্যে পেছনে বসা যুবক ওই শিক্ষার্থীর হাত থেকে ব্যাগ টান দিয়ে দ্রুত সার্সন রোড হয়ে সটকে পড়েন। সেসময় সন্ধ্যা এবং সড়কে অন্যান্য গাড়ি চলমান থাকায় মোটরসাইকেলটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর শনাক্ত করা যায়নি। তবে, ওই শিক্ষার্থীর চিৎকারে দুই যুবক দৌঁড়ে ছিনতাইকারীদের ধাওয়া করতে দেখা যায়।
মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী দেশ বর্তমানকে বলেন, রিকশাযোগে কাজীর দেউড়ি থেকে জামালখানের বাসায় ফিরছিলাম। কিন্তু ছিনতাইকারীরা কিছু বুঝে ওঠার আগে ব্যাগ নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে। ব্যাগে স্যামসাং গ্যালাক্সি এ-১৩ মোবাইল, পরিবারের খরচের জন্য রাখা নগদ ৫ হাজার টাকা, ঘরের চাবিসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিল। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেছি।
জিডিতে শুধু মোবাইল হারানোর কথা উল্লেখ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পুরো ঘটনা পুলিশকে বুঝিয়ে বলেছি। এরপরও তারা এভাবে লিখেছেন। আমার ঘটনার দুই দিন পর আরও এক মহিলা ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে শুনেছি।
ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, আমরা কেমন স্বাধীন দেশে বাস করি, যে বাসায় ফিরতে সর্বস্ব খুঁইয়ে আসতে হয়।
এ সময় তিনি প্রশাসনের কাছে দুষ্কৃতকারীদের কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়ে তার হারানো মালামাল উদ্ধারে সহযোগিতা চান।
ভেগাস ফার্নিচারের কর্মকর্তা রাজিব উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রায় সময় এই জায়গায় ছিনতাই হওয়ার ঘটনা শুনি। পুলিশও মাঝে মধ্যে আমাদের থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করে। সম্প্রতি এক মহিলার ব্যাগ ছিনতাই হয়, যেখানে তার পাসপোর্ট ছিল। এ ঘটনার পরও আমাদের থেকে ফুটেজ নিয়েছে পুলিশ।
হেলাল উদ্দিন নামে একজন জানান, এই এলাকায় বেশ কিছু ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে অপরাধ প্রবণতা কমবে বলে মনে করি।
এর আগে গত ২৪ মার্চ রাতে আসকারদীঘির পাড় এলাকায় রিকশাআরোহী দুই নারী ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। একই জায়গায় এক ইতালিয়ান নাগরিকও ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন। নগরীর অন্যান্য থানা এলাকায়ও এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটছে। ছুরিকাঘাত করেও মালপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। নগরীর কোতোয়ালি থানা এলাকা ছাড়াও বায়েজিদ, পাঁচলাইশ ও চান্দগাঁও থানা এলাকায়ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার অতিরিক্ত ডিআইজি মোস্তাফিজুর রহমান দেশ বর্তমানকে বলেন, ছিনতাইকারীদের ধরতে অভিযান চলমান আছে। আমরা ইতোধ্যে বেশ কয়েকজনকে ধরেছি ছিনতাই হওয়া মালামালও উদ্ধার করেছি। যেহেতু আবারও ছিনতাইকারীদের উৎপাত বেড়েছে সেহেতু অভিযান আরও বাড়বে।