এবার চট্টগ্রাম নগরীর দুই পশুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতারা নগদ লেনদেনের পরিবর্তে সরাসরি ব্যাংক কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ উদ্যোগের আওতায় এ সেবা চালু করে।
পশুর হাট দুটি হচ্ছে সাগরিকা ও কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট)। এ দুই হাটে ৫০ কোটি টাকার ডিজিটাল লেনদেনের টার্গেট করা হয়েছে। গতবার রাজধানীর ছয় পশুর হাটে পরীক্ষামূলকভাবে এ ডিজিটাল লেনদেন চালু হয়। চট্টগ্রামে এবার প্রথম শুরু হলো। এছাড়া ঢাকার ৮টি পশুর হাটেও এবার ডিজিটাল লেনদেন হবে।
মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে নগরীর কাজির দেউড়ির সেনাকল্যাণ সংস্থা কনভেনশন হলে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাগরিকা ও কর্ণফুলী পশুর বাজারে একটি করে দুটি ডিজিটাল বুথ থাকবে। সেখানে এটিএম মেশিন থাকবে। পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) যন্ত্র ও মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (এমএফএস) মাধ্যমে ক্রেতারা পশু বিক্রির টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। এতে ক্রেতারা বাসা থেকে টাকা বহন করার ঝামেলা থেকে রেহাই পাবেন। একইভাবে জাল টাকার বিস্তারও রোধ হবে। এছাড়া নগদ অর্থ লেনদেনের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি লেনদেনকারীদের ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা রেকর্ড সৃষ্টি হবে। সৃষ্ট রেকর্ড পশু বিক্রেতাগণকে ভবিষ্যতে সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তিসহ বিভিন্ন সেবা ও সহায়তা গ্রহণের জন্য সহায়তা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আগে নকল টাকার কারণে অনেক গরুর বেপারি সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। অনেক ক্রেতা গরু কেনার টাকা হারিয়েছেন। এখন ডিজিটাল লেনদেনের কারণে আর এই ঝুঁকি থাকবে না। মানুষকে নগদ টাকা নিয়ে চিন্তায় পড়তে হবে না। কোরবানির বিকিকিনিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধচক্রের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে আর বেচাকেনাও নিরাপদ ও ঝামেলাহীন হয়ে উঠবে।
মেয়র বলেন, কোরবানির গরুর বাজারে দূর–দূরান্ত থেকে পশু কেনাবেচা করতে মানুষ আসেন। কোরবানির বাজারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধচক্র জালনোট সরবরাহ, পশুর ট্রাকে ডাকাতি, ক্রেতাদের টাকা ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ডিজিটাল হাটে সব ধরনের আর্থিক সেবা ডিজিটালি হবে বিধায় এই অপরাধচক্রের কার্যক্রম কমে আসবে।
তিনি বলেন, এবারে দুটি হাটের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে সবগুলো কোরবানির হাটে ক্যাশলেস লেনদেনের সুবিধা সৃষ্টি করবে চসিক। প্রধানমন্ত্রী যে ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রামকে স্মার্ট নগরীতে পরিণত করার কাজ চলছে। এ ধরনের ডিজিটাল সেবার উদ্যোগ চট্টগ্রামের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সুফল ঘরে তুলতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির হারও বৃদ্ধি করবে।
মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মোতাসেম বিল্লাহ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপ–পরিচালক ড. আশরাফুল আলম খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ জিয়াউল হক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আমান উল্লাহ ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ইভিপি আবদুল নাসের।