চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট ও দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে, সমাধান কী?

নানা কারণে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ সংকটে দুর্ভোগ দিনদিন বেড়ে চলছে। আগে একটু-আধটু সংকট থাকলেও গত শুক্রবার চট্টগ্রামের কোনো বাসায় গ্যাসের চুলা জ্বলেনি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর কিছুটা স্বাভাবিক হয়। গ্যাস সরবরাহ সংকটের কারণে লোডশেডিও দেখা যায়। এছাড়া, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় গণপরিবহন সংকট দেখা দেয়। এর ফলে সাধারণ যাত্রীদের দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হয়েছে। খাবার হোটেলগুলোতে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষকে খাবার সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। এক প্রকার খাবার সংকটেও পড়ে যায় চট্টগ্রামের মানুষ। সংকটের মধ্যে বেশি দামে খাবার বিক্রির অভিযোগও ওঠে।

মূলত, মহেশখালীতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) কারিগরি ত্রুটির কারণে ১৯ জানুয়ারি, শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে। শুক্রবার রাত ১০ টার পর থেকে কিছুটা সরবরাহ হলেও শনিবার সকাল ১০ টার পর কিছুটা স্বাভাবিক হয়। সাধারণত, শীতকালে আবাসিকে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যায়। রান্নার ছাড়াও অন্যান্য কাজে গ্যাসের ব্যবহার বাড়ে। গত কয়েক মাস যাবত চট্টগ্রামে অব্যাহতভাবে গ্যাস সংকট বিরাজ করছে প্রতিদিনই। লাইনের গ্যাস নিয়ে সমস্যার কারণে অনেকেই আপৎকালীন সময়ে বোতলের এলপি গ্যাস ব্যবহার শুরু করেছে। এতে গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার নিয়ে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। লাইনের গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে শিল্প ও আবাসিক এলাকায় সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২২২ থেকে ২২৪ মিলিয়ন ঘনফুট। নগরে আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ ৬০ হাজারের বেশি। শিল্পকারখানা গ্রাহক প্রায় এক হাজার। আর সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে ৬২টি। আবাসিক গ্রাহকের গ্যাসের চাহিদা সর্বোচ্চ ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। ৬২টি ফিলিং স্টেশন থেকে গাড়িগুলো টেনে নিচ্ছে আরও ৩০-৩২ মিলিয়ন ঘনফুট। বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত কম বেতনের চাকরিজীবীদের বাড়তি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গ্রাহকদের লাইনের গ্যাসের ১ হাজার ৮০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে আবার ১ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে এলপি গ্যাস কিনতে হচ্ছে। লাইনের গ্যাসসংকটে বেসরকারি কোম্পানির এলপি গ্যাস নির্ধারিত দরের চেয়ে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে এলপি গ্যাসের চাহিদা বেড়ে গেছে।

চট্টগ্রাম শুধুমাত্র বন্দর নগরী নয়, বাণিজ্যিক রাজধানী ও জাতীয় অর্থনীতি কেন্দ্রবিন্দু। আবার সরবরাহকৃত গ্যাসের চাপও (প্রেসার) কম। এতে বিপাকে পড়েছেন আবাসিক খাতের লক্ষ লক্ষ গ্রাহক, শিল্পকারখানা, সিএনজি স্টেশন। গ্যাস সংকট অতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় সমস্যাটি শুধুমাত্র গৃহিণীদের নয়, বস্তুত সামগ্রিক জাতীয় অর্থনীতিই পড়েছে সংকটের মুখে।

জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম যেকোনো বিবেচনায় গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। চট্টগ্রামের গ্যাস সেক্টর পুরোপুরি আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভর। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, চট্টগ্রামে কোনো নেতাই এ নিয়ে কোনো কথা বলছে না। সবাই নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। তাই বর্তমানে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ করে এর পরিমাণ বৃদ্ধির পাশপাশি গ্যাসের চাপও (প্রেসার) বাড়ানো, উৎপাদন, সংযোগ, সুষম বন্টন ও বিতরণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট দ্রুত সমাধান সময়ের দাবি।