চট্টগ্রামে কোরবানির পশু বেচাকেনায় ২২২ হাট

।।  জয়নুদ্দীন আহমেদ, চট্টগ্রাম ।।

ঈদুল আযহা মানে মুসলিম ধর্মাবলম্বিদের সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনে পশু কোরবানি। আর এ কোরবানিকে ঘিরে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বসে পশু বিক্রির (গরু-ছাগল) হাট। পশু বেচা-কেনার এ হাটই মূলত মানুষের কাছে কোরবানির মূল আকর্ষণ। তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও চট্টগ্রামে জেলা ও মহানগর মিলিয়ে দুইশ ২২টি স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাট বসছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে স্থায়ী হাটের সংখ্যা ৬০টি এবং অস্থায়ী হাটের সংখ্যা ১৬২টি। এছাড়াও এসব হাটের তদারকিতে থাকবে ৭৩টি মেডিকেল টিম এমনই জানালেন চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরীতে ২৩টি হাটের অনুমোদন চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দিলেও ১৪টি শর্ত বা নিয়মে অনুমোদন পেয়েছে মাত্র নয়টি। যার মাঝে আবার দুটি হাটের ইজারাদার পায়নি চসিক। হাট দুটি হল ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের খেজুরতলা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি মাঠ এবং একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ টিকে গ্রুপের খালি মাঠ। তাই চসিকের নিজস্ব তিনটি হাট ও জেলা প্রশাসন থেকে অনুমোদিত হাট মিলিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে বসতে যাচ্ছে দশটি পশুর হাট।

চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, সাধারণত নগরীতে ঈদুল আজহার ১০ দিন আগে কোরবানির পশুর হাট বসা শুরু হয়। তাই এ বছর ২০ জুন থেকে পশুর হাট শুরু হবে এবং ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলবে।

তিনি আরও জানান, নগরীতে ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমোদন চেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দেয় সিটি কর্পোরেশন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯টি হাটের অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু অনুমোদন দেয়া হয় অনেক দেরিতে। সিটি করপোরেশন তাড়াহুড়ো করে দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু ৯টি হাটের মধ্যে ৭টি হাটের জন্য ইজারাদার পেলেও কাক্ষিত মূল্য পায়নি চসিক কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বানের এখন আর সুয়োগ নেই। তাই দুটি হাটের ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বাকি হাটগুলোও কম দামে ইজারা দেওয়া হয়েছে।

নগরীতে চসিকের স্থায়ী পশুর হাটগুলো হলো- সাগরিকা বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। অস্থায়ী হাটগুলো হলো- ৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের কর্ণফুলী গরু বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট)। এই হাটের জন্য পাঁচটি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দরদাতা হলেন সাইফুল আলম। এই হাটের সরকারি মূল্য ছিল ২ কোটি ৭৪ লাখ ৬১ হাজার ৩৩৩ টাকা। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠের জন্য দরপত্র পড়ে তিনটি। এখানে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা দরদাতা ওয়াহিদুল আলম চৌধুরী। এই হাটের সরকারি দর ছিল ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা। ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠের জন্য দরপত্র পড়েছে চারটি। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ লাখ ৫১ হাজার টাকা দরদাতা হলেন মো. নুরুল আবছার। একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠের জন্য শুধুমাত্র হারুনুর রশিদ নামে এক ব্যক্তি ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দর দিয়েছেন। ২৬নং ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠের জন্য দরপত্র পড়েছে তিনটি। যার মধ্যে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা দরদাতা হলেন আলী আজগর সোহেল। ৩ নং ওয়ার্ডস্থ ওয়াজেদিয়া মোড়ের জন্য তিনটি দরপত্র জমা পড়েছে, তার মধ্যে মো. জাহিদুল ইসলাম জাহেদ সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দর দিয়েছেন। ৩৯ নং ওয়ার্ডস্থ আউটার রিং রোড সিডিএ বালুর মাঠের জন্য তিনটি দরপত্র জমা পড়েছে। তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৫ লাখ টাকা দর দিয়েছেন মো. আসলাম।

চট্টগ্রামে অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য জেলা প্রশাসন ১৪টি শর্ত বা নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। শর্তগুলো হল-পশুর হাট প্রধান সড়ক থেকে কমপক্ষে ১০০ গজ দূরে সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করতে হবে, যাতে কোনো অবস্থাতেই প্রধান সড়কে যান চলাচল ব্যাহত না হয়। পশুর বাজারের সীমানার বাইরে বা রাস্তায় কোনো পশু রাখা বা খুঁটি গাড়া যাবে না। সংক্রমণ রোধে পশুর হাটে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাজারে কোনো জটিলতা এড়ানোর বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। বৃদ্ধ ও শিশুদের পশুর হাটে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করতে হবে। পশুর হাটে ইজারাদারদের অবশ্যই তাদের নিজস্ব পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে। সব বাজারে পশুর স্বাস্থ্য যাচাই করার জন্য পশুচিকিৎসক সার্জনের উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ মেডিকেল টিমের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। বাজার এলাকা নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করতে হবে। পশুর হাটের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইজারাদারদের সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে।

এছাড়া রাস্তায় পশু পরিবহনের সময় ইজারা গ্রহীতা বা তার মনোনীত প্রতিনিধি পশু পরিবহনের যানবাহনকে রুট পরিবর্তন করতে কোনো প্রকার চাপ প্রয়োগ বা কোনো পশু বিক্রেতাকে তার নিজস্ব হাটে নিয়ে যেতে বাধ্য করতে পারবেন না।

এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, চট্টগ্রামে এবার পর্যাপ্ত কোরবানির পশু রয়েছে। চট্টগ্রামে এবার কোরবানিতে আট লাখ ৭৯ হাজার সাতশ ১৩টি প্রাণীর সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় খামারে এবং কৃষকদের কাছে বিক্রিযোগ্য প্রাণী রয়েছে আট লাখ ৪২ হাজার একশ ৬৫টি। তাই এবার কোরবানির পশু সংকটের কোন সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করেন তিনি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ২২২টি হাটের মধ্যে মীরসরাইয়ে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ২১টি, সীতাকুণ্ডে ১০টি, সন্দ্বীপে ১৪টি, ফটিকছড়িতে ৩০টি, রাউজানে ২২টি, রাঙ্গুনিয়ায় ২০টি, হাটহাজারীতে সাতটি, বোয়ালখালীতে ১২টি, পটিয়ায় ১০টি, চন্দনাইশে ১৪টি, আনোয়ারায় ১৫টি, সাতকানিয়ায় সাতটি, লোহাগাড়ায় ১৬টি, বাঁশখালীতে ১১টি, কর্ণফুলীতে দুইটি, কোতোয়ালিতে চারটি, ডবলমুরিংয়ে পাঁচটি এবং পাঁচলাইশে দুইটি গবাদি প্রাণীর হাট বসছে।

এমএইচএফ