রমজানকে সামনে রেখে উত্তাপ ছড়াচ্ছে কাঁচা পণ্যের বাজার। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় সুযোগ বুঝে বাড়িয়ে দিয়েছে দাম। ইফতার আয়োজনের অন্যতম অনুষঙ্গ বেগুন, টমেটো, শসা, লেবু ও কাঁচামরিচের দামে লেগেছে আগুন। পাশপাশি অন্যসব ভোগ্য কাঁচা পণ্যের দামও চড়া। সবজির দাম সাধ্যের বাইরে চলে যাওয়ায় কাঁচা বাজারে কেনাকাটায় হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে, বাড়তি দামের জন্য আড়তদারকে দুষছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এতে আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করতে না পারায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ ক্রেতারা।
গতকাল সোমবার দুপুরে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার ও কাজির দেউরি কাঁচা বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, বেগুন, টমেটো, শসা, লেবু ও কাঁচামরিচের দামে আগুন। এছাড়া বিভিন্ন শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ নিত্যপণ্যের দাম চড়া। সবজির বাজারে ৫০-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। বিশেষ করে লাফিয়ে বাড়ছে বেগুনের দাম। গত কয়েকদিন আগেও যেখানে কেজি প্রতি বেগুন বিক্রি হতো ৫০-৬০ টাকা। কিন্তু রমজানকে সামনে রেখে আগের দিন একই বেগুন খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৯০ টাকায়। অর্থাৎ, দুই দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি বেড়েছে ১৫-২০ টাকা।
কাজির দেউরি কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা দিদার জানান, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, গোল বেগুন ৭৫ টাকা, পটল ১৪০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা ৭০- ৮০ টাকা, ধনেপাতা কেজিপ্রতি ১৩০ টাকা, শিমের বিচি কেজিপ্রতি ১২০ টাকা, কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, টমেটো কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, সজনে ডাটা ২২০ টাকা এবং লেবুর হালি ৬০ টাকা।
আরেক সবজি বিক্রেতা হেলাল বলেন, লেটুস পাতা কেজিপ্রতি ১২০ টাকা, পেঁয়াজপাতা কেজিপ্রতি ২০০ টাকা, ক্যাপসিকাম কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা, ব্রুকোলি পিসপ্রতি ৮০ টাকা। তবে ভ্যানে করে সবজি বিক্রেতাদের দাম বাজার থেকে ৫-১০ কম বিক্রী করতে দেখা গেছে।
বাজার করতে আসা মো. আলাউদ্দিন মজুমদার বলেন, সবজির মূল্য আসলে আমাদের হাতে নেই, কিছু করারও নেই। তারা (আড়তদার) যে দামে দেবে, আমাদের সেই দামে কিনে খেতে হবে। আবার অন্যান্য দিনের তুলনায় রমজানে দামও বেশি থাকে।
মো. মোস্তফা গালিব বলেন, বাজারে সব সবজির দামই বেশি। আমি সজনে কিনেছি ১০০ টাকা কেজিতে। এছাড়া, আলুর কেজি ৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ১০০ টাকা, দেশি আদা ১৯০ টাকা আর চায়না আদা ২৫০ টাকা, রসুন ১১০-১৪০ টাকা। পাশাপাশি ছোলা ১০৫ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৫০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ৯৫ টাকা, চিনি ১৫০ টাকা, বেসন ১১০ টাকা।
জনারেল স্টোরের মালিক মো. সেলিম হোসেন জানান, পেঁয়াজের দাম আবার বাড়ছে। এখন ৯০ টাকা কেজিতে কিনে আনলাম, ১০০ টাকা করে বিক্রি তো করতেই হবে।
গরুর মাংস ৭৫০-৯৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি আকারভেদে কেজিপ্রতি ২২০ টাকা, কক মুরগি ৩৫০ টাকা কেজি, কাতলা মাছ ৭৫০ টাকা কেজি, রুই মাছ ৫০০ টাকা কেজি, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ২২০০ টাকা কেজি আর ৭০০ গ্রাম ওজনের ১২০০ টাকা কেজি। এছাড়া, নদীর চিংড়ি আকারভেদে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি।
দাম বেশী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে, সব বিক্রেতাই ক্রয় মূল্যে বেশী বলে দাবী করেন।
বিষয়টি জানতে রেয়াজ উদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক শিবলীকে বারবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে চাল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও চিড়ার দামও বাড়তি। মাছ-মাংসের বাজারেও একই চিত্র। বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০৫-১১০ টাকায়, মশুর ডাল কেজি ১৪০ টাকা, চিড়া প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৫ টাকা ও খেজুর মানভেদে ৩০০ টাকা থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মোটা সিদ্ধ চাল ৫৫ টাকা, আতপ চাল মানভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকা।
চিংড়ি মাছ বিক্রেতা গফুর বলেন, মাছ বেশি ধরা পড়লেলল দাম কম থাকে। এখন নদীর চিংড়ি কম ধরা পড়ছে বলে দাম বেশি।
মাছ কিনতে আসা আব্দুল আজিজ আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, এক মাস আগে যে মাছের দাম ছিল এখন তার থেকে আরও বেড়েছে। কোনো দামই কমেনি। খেতে যেহেতু হবে, তাই কিছুই করার নেই।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দেশ বর্তমানকে বলেন, শুধু রমজান নয়, প্রায় সময় বাজারকারসাজিতে লিপ্ত এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী।
বাজার ব্যবস্থাপনা করছে অসাধু সিন্ডিকেট, তারা সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দেন। এসব সিন্ডিকেট সরকারকেও জিম্মি করে ফেলছে। রমজান মাসে পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি হওয়ার পরও দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। সরকারের পক্ষে কটোর মনিটরিং না করলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে যাবে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে আহ্বানও জানান তিনি।