চট্টগ্রামের সৃজনশীল ও জনবান্ধব রাজনীতির ধারক সুজন

চট্টগ্রামের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজন। বঙ্গবন্ধুর সহচর থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড। দুঃসময়ে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের হাল ধরে আঁকড়ে পড়ে থাকা এই নেতা। তাঁর জীবনের অর্জন সাধারণ মানুষের অভিরাম ভালোবাসা। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে তিনি একজন আলোচিত ও তুমুল জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। সবসময়ই ব্যতিক্রমধর্মী, সৃজনশীল ও জনবান্ধব কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে কাছে টেনে আলোচনায় থাকেন তিনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রাস্তা-ঘাট সংস্কারে আল্টিমেটাম, চাটগাঁর ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড জনগণের মাঝে তুলে ধরতে হাতে নেন সৃজনশীল ও জন-উৎসাহমূলক নানান কর্মসূচি।

তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে স্পষ্টবাদীতা এবং সৃজনশীলতা। ফলে জনগণের কাছেও তিনি আস্থাভাজন একজন রাজনীতিবিদ। এটি তিনি প্রমাণ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হয়ে, তাও মাত্র ৬ মাসে। চট্টগ্রাম নগরবাসী দেখেছেন, সেই ৬ মাসে কতটা পরিবর্তন ঘটেছিল এই শহরের। দায়িত্বপালনের ৬ মাসের প্রতিটি দিনকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। সেটা ফুটপাত রক্ষা থেকে শুরু করে জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা-নর্দমা পরিস্কার, যানজট নিরসন, সড়ক সংস্কারে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনি বসে থাকেননি। প্রশাসকের দায়িত্ব নেয়ার আগে বা পরে চট্টগ্রামসহ দেশের নানান সংকটে তিনি আওয়াজ তুলেছেন। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড জনগণের মাঝে তুলে ধরতে নানান সৃজনশীল কর্মসূচি পালন করেন। এর মধ্যে গত বছরের অক্টোবরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম আগমন ঘিরে পতেঙ্গার সাগরপাড়ে দুই দিনব্যাপি ব্যতিক্রমি ‘টানেল উৎসব’ সবার মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

যেখানে অনেক আওয়ামী লীগ নেতা চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, সেখানে তিনি শ্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেও সাড়া ফেলেন। ২০২০ সালের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার সময়টিতে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন জনগণের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে। নগরের সমস্যা সমাধানে সেবক হিসেবে জনগণের দরজায় দরজায় গিয়ে হাজির হয়েছেন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সমস্যা দেখতে মোটরসাইকেলে ‘নগরসেবায় ক্যারাভ্যান’ নামে ব্যতিক্রমী কর্মসূচি চালু করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। প্রশাসক পদ ছাড়ার পরও চট্টগ্রামে সমস্যা সমাধানে তিনি তৎপর। একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে নগরীর বন্দরটিলা চত্বরে খানাখন্দে ভরা সড়ক সংস্কারের দাবিতে করা এক মানব বন্ধনে নগরীর ভিআইপি সড়কের ভাঙা সব স্থান সংস্কারের আল্টিমেটাম দেন তিনি। এছাড়াও হাজারো জনবান্ধব ও বিভিন্ন ধরণের সৃজনশীল কর্মসূচী দিয়ে চট্টগ্রামবাসী হৃদয়ে ঠাঁই নিয়েছেন তিনি।

খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি ১৪ দলের সমন্বয়ক হিসাবে কাজ করছেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সাল অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন ছাত্রলীগে যোগ দেন। এরপর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পথচলা শুরু। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়েছেন নেতৃত্ব। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া-এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফেরানোর সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা ছিল তার। নব্বইয়ের দশকে দেশে গণতন্ত্র উত্তরণের পর যুক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে, ছিলেন প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য। গভীর রাজনৈতিক জ্ঞানের কারণে আওয়ামী লীগের তাত্ত্বিক নেতা হিসেবেও পরিচিত তিনি।
কখনও মুখ ফুটে না বললেও চট্টগ্রাম নগরবাসী ঠিকই বুঝতে পারেন, সংসদ সদস্য কিংবা মেয়র হয়ে আরও বড় আঙ্গিকে এলাকার মানুষের সেবা করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। জনগণের জোরালো সমর্থন থাকার পরও তিনবার সংসদ সদস্য এবং দু’বার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। কিন্তু এমপি কিংবা মেয়র হতে না পারলেও তিনি দমে যাননি। ছেড়ে দিতে পারেননি রক্তে মিশে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। কামনা আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অটল থাকা। ১৯৯০-৯৮ সালে চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী সংগঠনের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন সুজন। ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সুজন।

গত কয়েকদিন ধরে আবার তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। গুঞ্জন উঠেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে চট্টগ্রামের মিডিয়া পাড়াসহ সচেতন মহল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা এবং বইছে অভিনন্দনের জোয়ার। সবার মতামত হলো, আধুনিক ও স্মার্ট চট্টগ্রাম শহর নির্মাণে খোরশেদ আলম সুজনের মতো একজন সৎ এবং আদর্শবান নেতা সিডিএর চেয়ারম্যান হওয়া দরকার। যিনি কেবল চট্টগ্রামের আপামর জনতার জন্য কাজ করে যাবেন।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী