প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু ঢাকা শহর নিয়ে ভাবলে হবে না। প্রতিটি গ্রামে সকল নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা ওয়াসার ‘দাসেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার’ প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারের শুভ উদ্বোধন করেছি, ইতোমধ্যে আরেকটি, পাগলা পয়ঃশোধনাগারের ভিত্তি স্থাপন করেছি।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বড় শহরেই নয়, পর্যায়ক্রমে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পানি শোধনাগার নির্মাণের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে ঢাকা ওয়াসাকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকার চারপাশে পাঁচটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের কথা জানান।
তিনি বলেন, চাহিদার চেয়ে বেশি পানি উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ঢাকা ওয়াসার। পানির বিল এখন ১০০ শতাংশ আদায় করতে সক্ষম ওয়াসা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায়, তখন ঢাকা শহরে মাত্র ৬০ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পেত। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল এক কোটি বিশ লাখের মতো। পানি উৎপাদন হতো ১২০ কোটি লিটার। ঢাকা ওয়াসার পানির বিল মাত্র ৬৪ শতাংশ আদায় হতো। রাজস্ব আয় ছিল মাত্র ৩০০ কোটি টাকা।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের সময় আমি আর আমার ছোট বোন জার্মানিতে ছিলাম। মিলিটারি ডিক্টেটর আমাদের দেশে আসতে দেয়নি। ’৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণ এবং দলের নেতাকর্মীদের ওপর ভরসা করে আমি এক প্রকার জোর করে দেশে চলে আসি। তারপর থেকে শুরু হয় সংগ্রাম।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত না থাকলে কোনো দেশের উন্নতি হয় না। পৃথিবীর কোনো দেশে মিলিটারি ডিক্টেটর উন্নতি করতে পারে না, এটা হলো বাস্তবতা। ২১ বছর সংগ্রামের পর ’৯৬ সালে আমরা সরকারে আসি, মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর জন্য প্রথম সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ করি। সেভাবে শুরু হয় আমাদের পথ চলা।
সরকার প্রধান বলেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সাড়ে ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ কেমন ছিল, এটা যাদের হয়তো একটু বয়স হয়েছে তারা স্মরণ করতে পারবেন। যারা একেবারে হয়তো সে সময় ছোট ছিল তারা হয়তো ভাবতেই পারবে না। মনে করবে ওই হাতে মোবাইল অথবা ইন্টারনেট—এ সবই বুঝি ছিল। তা কিন্তু ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে ১৯৯৬ থেকে ২০০১, এরপর ২০০৯ থেকে ২০২৩ আমরা কিন্তু মানুষের জীবনমান বদলে দিতে সক্ষম হয়েছি। আজকে কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না এবং প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান উন্নত হবে,’ বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘লুটপাট-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বন্ধ হয়েছে, দারিদ্র্য দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। হত দারিদ্র্যের হার যেটা ২৫ দশমিক ১ ভাগ ছিল, তা আমরা ৫ দশমিক ৬ নামিয়ে এনেছি। দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ থেকে আজকে আমরা ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাল্লাহ এটা আমরা আরও কমাতে পারব।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়ান, ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথোরিটির (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচএফ