বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে নারীদের আর্থসামাজিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো বলা যায়। শিক্ষিত নারীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি দেশের নারী কর্মজীবীর সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে নারীরা এখন পুরুষদের পাশাপাশি নানান কাজে ঘরের বাইরে যাচ্ছেন। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি পরিবহন সুবিধা। বাড়েনি নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যাও। অনেকে ক্ষেত্রে নারীদের দাঁড়িয়ে যেতে হয়। আবার অনেক সময় বসার আসন না থাকলে বা রাত বেশি হলে গণপরিবহনে নারীদের তোলা হয় না। আর বাসে নারীদের শারীরিক ও মানসিক হেনস্থা তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। যে কারণে বাইরে কাজ করা থেকে অনেক নারী আগ্রহ হারাচ্ছেন।
নারীদের জন্য বর্তমানে কোনো আলাদা বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই। এছাড়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই নারীদের পরিবহন সুবিধা দেয় না। বেশির ভাগ নারীদের পাবলিক সার্ভিস বা গণপরিবহনে যাতায়াত করাটা বেশ কষ্টসাধ্য ও অনেকের কাছে তা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। কিন্তু কর্মজীবী নারীদের এ ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করেই চলাফেরা করতে হচ্ছে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিক বা অন্য কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। ৪১-৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারাই যৌন হয়রানির শিকার হন বেশির ভাগ নারী, যার হার ৬৬ শতাংশ। নারীদের যৌন হয়রানির মূল কারণ হচ্ছে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলোর অভাব ইত্যাদি।
এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে ৮১ শতাংশ নারী বলেছে, তারা চুপ থাকে এবং ৭৯ শতাংশ বলেছে আক্রান্ত হওয়ার স্থান থেকে সরে যায়। বাসে পুরুষ যাত্রীদের মাধ্যমে ৪২ শতাংশ ও পরিবহনসংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৩ শতাংশ নারী যাত্রী।
আবার আরেক বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইডের এক জরিপ বলছে, ৮৪ শতাংশ নারী জানিয়েছে, তারা জনসমাগমস্থলে অশালীন মন্তব্য শুনেছে এবং পুরুষরা যৌন হয়রানি করার সুযোগ খুঁজেছিল। অর্ধেকের বেশি নারী গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। আবার কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ৭৬ শতাংশ ছাত্রীই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হার সবচেয়ে বেশি, ৮৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক জরিপ অনুযায়ী দেশে মোট জনগোষ্ঠীর ৩৬ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত করেন। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই গণপরিবহন ব্যবহার করেন। ওই জরিপে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, শতকরা ৯৪ শতাংশ নারী যাত্রী গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হন।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে নারীদের যাতায়াত সমস্যা দূর করতে আলাদা বাসের ব্যবস্থা করা। বাসে সংরক্ষিত আসন বাড়ানোর জন্য নাগরিকদের সচেতনতা প্রয়োজন। এছাড়া নারীদেরও নিজের অধিকার আদায়ে সচেতন হতে হবে।
সম্প্রতি ফেনীতে প্রথমবারের মতো নারীদের জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করেছে ফেনী পৌরসভা। এ রকম উদ্যোগ অন্যান্য জেলায়ও বিস্তৃত হোক, আমরা সে প্রত্যাশা করি।