শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভূমি খেকোরা জায়গা দখলের অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে। আগে যেখানে আওয়ামী যুবলীগের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে জায়গা দখলে রাখার চেষ্টা করা হতো। ক্ষমতার পালাবদলে একই কায়দায় যুবদলের নাম ভাঙ্গিয়ে দখল রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি চক্র। এমনকি আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণে উঠে পড়ে লেগেছে। তবে নগর যুবদল শীর্ষ নেতার দাবী যারা এ কাজে জড়িতরা যুবদলের কেউ নয় বরং তারা দুষ্কৃতকারী।
ঘটনাটি চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানাধীন জালালাবাদ খুলশী গার্ডেন ভিউ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় জিন্নুরাইন প্রোপার্টিজ (প্রা:) লিমিটেডের জায়গায়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এর প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগীর পক্ষে খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন এডভোকেট আদনান আল রাইছি।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১৬ জুন ২য় সিনিয়র সহকারী আদালত বিরোধের বিষয়টি নিয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এছাড়াও বিগত সরকারের সময় আমাদের এই জায়গায়টি দখল করে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সাবেক আহবায়ক ও সাবেক সাংসদ মহিউদ্দিন বাচ্চু। ক্ষমতায় থাকাকালিন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জায়গাটি দখল করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। এ নিয়ে বিগত ৫ বছর ধরে ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের আশ্রয় নিই। বিজ্ঞ আদালত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সে সময় থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু সম্প্রতি সরকারের পট পরিবর্তনের পর মো. আবদুল বাহার মিয়া নামে আরেকটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে স্থাপনা নির্মাণের প্রচেষ্টা চালায়।
এছাড়াও তিনি বলেন, আমি পুলিশ ছাড়াও র্যাব এবং সেনাবাহিনী বরাবর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছি। আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যেমে ন্যায়-বিচার পাবো বলে আশা রাখি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জায়গাটিতে আগে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সাবেক নেতা ও সাবেক সাংসদ মহিউদ্দিন বাচ্চুর সাইনবোর্ড ছিল। যেখানে লেখা ছিল ‘ এই জায়গার মালিক বায়না সূত্রে মো: মহিউদ্দিন বাচ্চু’। এমনকি বেশ কয়েকটি স্থিরচিত্রেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে কাজ তদারকি করতে দেখা যায় তাকে। কিন্তু সম্প্রতি সরকার পরিবর্তনের পর এখন ঝুলছে নতুন সাইনবোর্ড। যেখানে লেখা আছে ‘ক্রয়সূত্রে এই জায়গার মালিক মো: আব্দুল বাহার মিয়া-গং’।
আইনজীবীদের মতে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকলে জায়গা বায়না নামা কিংবা বিক্রি করা আইন সম্মত নয়।
গত বুধবার ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী শানু বেগম বলেন, বিগত সরকারের সময় মহিউদ্দিন বাচ্চুর ক্যাডাররা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এই জায়গা দখলে নেন। এখন ক্ষমতা হারানোর পর নতুন কৌশল অবলম্বন করে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে ওই এলাকায় বসবাস করা মনোয়ার হোসেন মানিক নামের একজনকে ব্যবহার করে জায়গা দখলে রাখা এবং স্থাপনা নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে তাকে সহযোগিতা করার অভিযোগ আছে মেজবাহ উদ্দিন রাজু প্রকাশ ইঞ্জিনিয়ার রাজুর বিরুদ্ধে।
ওই সময় মানিক সংবাদকর্মীদের উপিস্থিতি দেখে হাক-ডাক দিয়ে তেড়ে আসলেও নিজেকে একজন কন্ট্রাক্টর এবং এই জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের জন্য দায়িত্ব পেয়েছেন বলে দাবি করেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন ভিডিও ক্যামেরায় ফুটেজ নিতে বাঁধা দেন। পরে তিনি আবদুল বাহারের দেওয়া দায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানান। তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত, এমন প্রশ্নে করলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
জানা যায়, ইতোমধ্যে অভিযুক্ত মানিক জায়গার মালিক পক্ষের একজনকে ২০ লাখ দিলে দখল ছেড়ে দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।
আদালতের আদেশ অমান্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সাইনবোর্ডে নাম থাকা মো. আবদুল বাহার মিয়া বলেন, এটি আমি বায়না করেছি যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু থেকে। ঊনি কোথায় আছে তা আমি জানি না। আদালতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও আমি জানি না। ১ টাকা দিয়ে নিয়েছি নাকি পাঁচ টাকা দিয়েছি তা বিবেচ্য নয়, এটি আমি নিয়েছি এটা বড় কথা। পুলিশ থেকে জানার পর আমি কাজ বন্ধ রেখেছি। এটা নিয়ে আমি জমির সাহেবের সাথে বসতে রাজি আছি। যেখানে তার কথায় ফুটে উঠে নামমাত্র মূল্যে বায়না কিংবা চুক্তি করে জায়গাটি দখল এবং সংস্কারে উঠে পড়ে লেগেছেন তিনি।
সাধারণ ডায়েরি ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি জানতে চাইলে খুলশী থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, এই বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এ নিয়ে থানা পুলিশের একটি টিম কাজ করছে। কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সেদিকে আমরা সচেষ্ট আছি এবং কেউ আইন অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেব বলেও জানান তিনি।