চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ বলেছেন, তার বাহিনী ভাগনার ভাড়াটে প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের বিদ্রোহ দমনে এবং প্রয়োজনে কঠোর পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে রুশ বাহিনীকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
শনিবার (২৪ জুন) এক বিবৃতিতে কাদিরভ প্রিগোজিনের আচরণকে ‘পিঠে ছুরিকাঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন এবং রুশ সৈন্যদের কোনো ‘উস্কানি’ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
রমজান কাদিরভ বলেন, ‘বিদ্রোহ অবশ্যই চূর্ণ করতে হবে। যদি এর জন্য কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন হয়, তবে আমরা প্রস্তুত!’
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ন্যাশনাল গার্ডের চেচেন যোদ্ধারা ইতিমধ্যেই ‘উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলে’ চলে গেছে বলেও যোগ করেন তিনি।
এর আগে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি সেনা সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নেয় রুশ ভাড়াটে বাহিনী ভাগনার। এরই মধ্যে দেশটির রাজধানী মস্কোর দিকে এগিয়ে যাওয়া ও বর্তমান সামরিক নেতাদের ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দেন বাহিনীটির প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, রুশ সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলের সেনা সদর দপ্তরে বিচরণ করছে ভাগনার সেনারা। আর সেটির ভেতরে অবস্থান করছেন ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। এই সদর দপ্তরটি রোস্টভ-ওন-ডোন বিভাগে অবস্থিত।
এক ভিডিও বার্তায় প্রিগোজিন জানান, তার সেনারা এই শহরটি অবরুদ্ধ করবে এবং রাজধানী মস্কোর দিকে এগিয়ে যাবে- যতক্ষণ না প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু এবং জেনারেল ভেলেরি গেরাসিমোভ তাদের সঙ্গে দেখা করতে না আসেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি। আমরা চিফ অব জেনারেল স্টাফ এবং সোইগুর সঙ্গে দেখা করতে চাই। যতক্ষণ তারা না আসছেন, আমরা এখানে থাকব, আমরা রোস্টভ অবরুদ্ধ করব এবং মস্কোর দিকে এগিয়ে যাব। ’
রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ভাগনার গ্রুপের বিদ্রোহের এখানেই শেষ হয়নি। ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিপক্ষে যুদ্ধের পরিবর্তে উল্টো রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিয়েছে বাহিনীটি।
ভাড়াটে যোদ্ধাদের গ্রুপটির প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন এ হুমকি দেন। তিনি জানান, রুশ নেতৃত্বকে তারা ক্ষমতাচ্যুত করে ছাড়বেন। এই পথে যারাই বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাদেরও ধ্বংস করে দেওয়া হবে।
এদিকে, ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের ‘বিদ্রোহী’ তৎপরতা কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শনিবার (২৪ জুন) টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি ভাগনার যোদ্ধাদের উল্লেখ না করেই বলেছেন, রুশদের ‘প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধমূলক দুঃসাহসিক কাজে জড়ানো হয়েছে। ’
এসময় বিদ্রোহীদের তৎপরতাকে ‘পিঠে ছুরিকাঘাত’ করা হয়েছে মন্তব্য করে পুতিন বলেন, রাশিয়ার ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে। কারো কারো উচ্চাকাক্সক্ষা তাদের গভীর রাষ্ট্রদ্রোহিতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বিদ্রোহী ভাগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোজিনের প্রতি ইঙ্গিত করে এমন কথা বললেও, পুতিন একবারও তার নাম উল্লেখ করেননি।
এসময় রাশিয়ার সমাজকে যারা বিভক্ত করছে, ‘অনিবার্য শাস্তির’ বিষয়ে তাদের সতর্ক করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। রাজধানী মস্কো ও অপরাপর বেশ কয়েকটি শহরে এখন সন্ত্রাসবিরোধী শাসন জারি আছে বলেও জানান তিনি।
একই সঙ্গে রাশিয়াকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুতিন এই সংকট মোকাবেলার জন্য সব ‘প্রয়োজনীয় আদেশ এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে’ বলে জানান।
সূত্র- বিবিসি ও আল জাজিরা।