টেকসই সরকারি ক্রয় নীতিমালা সম্পর্কে জানতে পেরে সস্তুষ্ট হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সেন্টাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের এক সদস্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এ সময় সিপিটিই মহাপরিচালক শোহেলের রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই নীতির খুঁটিনাটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়।
সিপিটিইউ এর দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, আইএমএফ এর ক্লাইমেট পলিসি ফিসক্যাল অ্যাফেয়ার্স ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ইকোনমিস্ট সুফাচল সুফাচালাসাই সিপিটিইউতে আসেন। বৈঠকে তিনি জানতে চান টেকসই সরকারি ক্রয় নীতিমালা তৈরি এখন কোন অবস্থায় আছে। এছাড়া এই নীতিমালা তৈরিতে স্টেকহোল্ডারদের (সুবিধাভোগী) মতামত নেয়া হয়েছে কিনা। এটি অন্তর্ভূক্তিমূলক হয়েছে কিনা। এ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় জানতে চান। জবাবে সিপিটিইউ এর পক্ষ থেকে বিস্তরিত তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে যে, এই নীতিমালা তৈরিতে সব পক্ষের মতামত নেয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে মতামত নেয়া হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে কর্মশালার আয়োজনও করা হয়। অর্থাৎ একটি নীতিমালা অন্তর্ভূক্তিমূলক করতে যেসব প্রক্রিয়া পার করতে হয় তার সবইগুলোই করা হয়েছে। বর্তমানে নীতিমালাটির প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে।
এদিকে, নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা, অটোমেশনে ধীরগতি ও গতানুগতিক রাজস্ব আদায়ের রূপরেখায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবু শর্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার এনবিআরের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আইএমএফকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে- সব শর্ত পূরণ করতে পারবে। সে কারণে সংস্থাটি শেষ পর্যন্ত এনবিআরকে ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কর অব্যাহতি কমানো, আমদানি পর্যায়ের শুল্কহার ধীরে ধীরে কমানো ও করের আওতা বৃদ্ধির পরামর্শ ছিল আইএমএফের। সংস্থাটি আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের অটোমেশনে ধীরগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আগামী ৯ অক্টোবর এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে বৈঠকের পর তিন বিভাগের প্রশাসনের সঙ্গে বসতে চায় সংস্থাটি।
আইএমএফ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলেছে। পরের দুই বছরে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলেছে। এই তিন অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ১ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়াতে হলে এনবিআরকে অতিরিক্ত ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে, যা এনবিআরের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।
বৈঠকে এনবিআরের আয়কর বিভাগ জানিয়েছে, গত পাঁচ অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই হার বজায় থাকলে স্বাভাবিকভাবে আদায় হবে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ভূমি রেজিস্ট্রেশন, ভ্রমণ কর, টোব্যাকো কর, পরিবেশ সারচার্জ ও করের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার মাধ্যমে বাকি ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে। তবে ভূমি রেজিস্ট্রেশন ফি ও কার্বোনেটেড বেভারেজের করহার কমানোর পরও এখাতে কিভাবে একই পরিমাণ আদায় হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। যদিও এনবিআর কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তাদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
অন্যদিকে ভ্যাট বিভাগ জানিয়েছে, চারটি উপায়ে অতিরিক্ত ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে। বাজেট ও নিয়মিত ব্যবস্থার মাধ্যমে ১২ হাজার ৪০০ কোটি থেকে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সিগারেট খাত থেকে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা, অব্যাহতি তুলে দিয়ে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) মাধ্যমে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে।
আর শুল্ক বিভাগ আইএমএফকে তাদের পরিকল্পনায় জানিয়েছে, গত পাঁচ অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এই হার বজায় থাকলে স্বাভাবিকভাবে আদায় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার পরিবর্তনের মাধ্যমে ১ হাজার ২০০ কোটি ও পেট্রোবাংলার কাছ থেকে বকেয়ার ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে তারা।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে করে। বৈঠকে তারা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকিং খাত ও রাজস্ব আয় এই চারটি বিষয় উত্থাপন করেছে। এনবিআরের ভ্যাট, কাস্টমস ও ট্যাক্স বিভাগের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। আইএমএফের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ ছাড়াও সংস্থাটির একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস নীতির সদস্য ছাড়াও উইংগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা।