এক পত্রিকার মালিক কয়েকজন, জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়াই ছাপা হচ্ছে চট্টগ্রামে

চট্টগ্রামে নামে বেনামে সংবাদপত্রের ছড়াছড়ি। আর এসব নামসর্বস্ব অনুমোদনহীন সংবাদপত্রের নামে চলছে কার্ড বাণিজ্য ছাড়াও মাদক চোরাচালান, অটোরিকশা বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারী ব্যবসা। দৈনিক সবুজ চট্টগ্রাম এমনই এক নামসর্বস্ব সংবাদপত্র। সংবাদপত্রটি বান্দরবান জেলার আঞ্চলিক হলেও বর্তমানে প্রকাশ হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে। সম্প্রতি সংবাদপত্রটির বিরুদ্ধে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কাজী আয়েশা ফারজানা নামে এক নারী।

সূত্রে জানা যায়, দৈনিক সবুজ চট্টগ্রাম বান্দরবান থেকে নিবন্ধিত। তবে, ছাপার অনুমোতি নেই। কাজী আয়েশা ফারজানা ছাপার অনুমোতির জন্য আবেদনও করেছেন। কিন্তু, এম.এ.এ. ওমর ফারুক সিকদার নামে এক ব্যক্তি নিজেকে প্রকাশক ও সম্পাদক উল্লেখ করে চট্টগ্রাম থেকে ছাপিয়ে কার্ড ও অটোরিকশা এবং ঠিকাদারী বাণিজ্য করে যাচ্ছে।

সূত্রে আরও জানা যায়, এম.এ.এ ওমর ফারুক সিকদারের সহযোগি হিসেবে রয়েছেন সাংস্কৃতিক সংগঠক সজল কান্তি চৌধুরী ও কলাম লেখক দিদার আশরাফী। এর মধ্যে সজল কান্তি চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং দিদার আশরাফী যুগ্ম সম্পাদক। উঠে এসেছে রেলওয়ের এক ঠিকাদার নারগিস আক্তার নিরা নামের এক কথিত সাংবাদিকের নাম। তিনি নিজেকে পত্রিকার সহ-সম্পাদক পরিচয় দিয়ে রেলওয়ের কাজ ভাগিয়ে নেন।

নিজেকে সহ-সম্পাদক পরিচয় দিয়ে রেলওয়ের টেন্ডার ভাগিয়ে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নারগিস আক্তার নিরা তা অস্বীকার করেন। এছাড়া, পত্রিকা ছাপানোর অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, অনুমোদন আছে কি নেই এই প্রশ্ন করার আপনি কে? আপনাকে এই অধিকার কে দিয়েছে? যা দেখার প্রশাসন দেখবে, আপনার কোনো অধিকার নেই।

কাজী আয়েশা ফারজানা ২০২৩ সালের জুলাই মাসে সংবাদপত্রটি ক্রয় করে একই বছরের আগস্টে বান্দরবান জেলা প্রশাসক বরাবর ছাপার অনুমতির জন্য আবেদন করেন। কাজী আয়েশা ফারজানা দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, পত্রিকাটি আমি একবছর আগে নিয়েছি। পত্রিকার ডিক্লারেশন আমার নামে হস্তান্তরের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনও করেছি। তবে আমার অজান্তে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া এম.এ.এ.ওমর ফারুক সিকদার নামের এক ব্যক্তি নিজেকে প্রকাশক ও সম্পাদক দাবি করে চট্টগ্রাম থেকে অনিয়মিত প্রকাশ করছে। তিনি আরও বলেন, এই ব্যাপারে আমি বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।

ঘটনার সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হয় প্রকাশক ও সম্পাদক দাবি করা এম.এ.এ. ওমর ফারুক সিকদারের সঙ্গে। তিনি জেলা প্রশাকের অনুমতি ছাড়া পত্রিকা প্রকাশের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সম্প্রতি আমরা পত্রিকাটি কিনে নিয়েছি। তবে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কাগজপত্র জমা দিতে এসে জানতে পারি পত্রিকাটির মূল মালিক কবির হোসেন সিদ্দিকী এ পত্রিকা আরও বেশ কয়েকজনের কাছে বিক্রি করেছেন।

এই ব্যাপারে জানতে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনুমতি ছাড়া কেউ সংবাদপত্র প্রকাশ করতে পারবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক সংবাদপত্রের প্রকাশক সংবাদপত্র প্রকাশের পূর্বে স্থানীয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে যথাযথ বিধিমালা অনুযায়ী অনুমতি নিবে। জেলা প্রশাসকের অনুমতি পেলেই একজন প্রকাশক সংবাদপত্র প্রকাশ করতে পারবেন। বর্তমানে দৈনিক সবুজ চট্টগ্রাম পত্রিকাটি সাঙ্গু কম্পিউটার এন্ড প্রিন্টার্স, শিকলবাহা পটিয়া থেকে মুদ্রিত হয়ে আসছে। যা ছাপাখানা আইন পরিপন্থি।