আর মাত্র দুই দিন পর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের দুই উপজেলার চতুর্থ ধাপের ৬ষ্ঠ পরিষদ নির্বাচন। আগামী ৫ জুন নির্বাচনে লোহাগাড়া ও বাঁশখালী উপজেলায় তিন পদে ২২ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অংশ নেবেন। দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আসীন হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীদের মধ্যে চলছে জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা। ইতোমধ্যে পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে চট্টগ্রামের ২ উপজেলা। দিন-রাত বিরামহীন জনসংযোগ, মিটিংসহ নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো প্রকাশ্যে ভোট বর্জন এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিজস্ব প্রার্থী না দেওয়ায় অনেকটা উন্মুক্ত নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যেখানে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বেশীর ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। ফলে এসব উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতাই। নিজেদের মধ্যে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় নেতাকর্মী ও ভোটাররা পড়েছেন দোটানায়। দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীর ছড়াছড়ি থাকলেও দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছেন স্থানীয়রা। নির্বাচনী মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকায় এক প্রার্থীরা অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কোন্দল-সংঘাতের আশঙ্কা করছে সাধারণ ভোটাররা। তবে ভোট সংশ্লিষ্ট সকলকে বিধিমালা মেনে কাজ করার আহ্বান জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। অন্যদিকে, অনিয়ম করে কেউ পার পাবেন না বলে জানান চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার এনামুল হক।
বাঁশখালীতে খোরশেদ-ইমরানের দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাসঃ
চতুর্থ ধাপের আগামী বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ তিনপদে ১৪ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এতে চেয়ারম্যান প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম দোয়াত কলম প্রতীক, বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইমরানুল হক আনারস প্রতীক, বাঁশখালীর সাবেক পৌর মেয়র শেখ ফখরুদ্দীন চৌধুরী ঘোড়া প্রতীক, চট্টগ্রাম সিটি কলেজের সাবেক জিএস, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জাহিদুল হক চৌধুরী মার্শাল মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে লড়ছেন। একাধিক প্রার্থীদের মধ্যে দোয়াত কলম ও আনারস প্রতীক ছাড়া বাকীরা তেমন একটা মাঠে সক্রিয় নেই বলে জানান স্থানীয় ভোটাররা। নির্বাচনে এই দুই প্রতীকের মাঝে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে স্থানীয়রা।
জানা গেছে, দোয়াত কলম প্রতীকের খোরশেদ আলম পর পর তিন বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়ে চতুর্থবার লড়ছেন। এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় সকল সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, যুবলীগ-ছাত্রলীগ সাথে থাকায় জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। এছাড়া বর্তমান ও সাবেক সাংসদের সুদৃষ্টি রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এদিকে আনারস প্রতীকে লড়ছেন এমরানুল হক ইমরান। তিনি বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও গতবার ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু আইনী জটিলতায় একদিনের জন্যও ভাইস চেয়ারম্যানের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেনি। সেবার উপজেলা আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুরকে পরাজিত করে সবাইকে চমকে দিয়েছিল। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও তরুণদের সাথে আগে থেকে সখ্যতা থাকায় ধারনা করা হচ্ছে এবার অদৃশ্য চাপে রাজনৈতিক সহকর্মীদের পাশে না পেলেও ভোট বিপ্লবের সম্ভাবনা তাঁরই রয়েছে। অন্য দুজন প্রার্থী থাকলেও তারা আলোচনায় খুব একটা নেই।
অপরদিকে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে আক্তার হোসাইন (তালা), এম এ মালেক মানিক (উড়োজাহাজ), আরিফুর রহমান সুজন (টিয়া পাখি), আরিফুজ্জামান আরিফ (চশমা), মোহাম্মদ ওসমান গণী (মাইক), ইমরুল হক চৌধুরী ফাহিম (টিওবওয়েল), মোহাম্মদ হোছাইন (বই) প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা পরিষদের বর্তমান (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান রেহেনা আকতার কাজমী (কলস), ইয়ামুন নাহার (প্রজাপতি), নুুরী মন আক্তার নুরী (ফুটবল) প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। বাশঁখালীতে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৩,৭৬,৯০৬ জন এর মধ্যে নারী ভোটার ১,৭৪,৫৮১ পুরুষ ২,০২,৩২১ হিজরা ভোটার রয়েছে ৪ জন এবং কেন্দ্র সংখ্যা ১১৫টি।
লোহাগাড়ায় প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে খোরশেদ-সিরাজের মাঝে
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাচনে ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ২ জন মহিলা চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। চেয়ারম্যান পদে লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী আনারস প্রতীক, চুনতি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ঘোড়া প্রতীক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবদুল মাবুদ ‘মোটরসাইকেল’ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। প্রার্থী তিনজন হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আনারস আর ঘোড়া প্রতীকের মাঝে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে পরিচিত এখানকার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন ভোটের মাঠে বেশ সরব থাকলেও সাধারণ মানুষের মাঝে ভোট নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই। খোরশেদ আলম চৌধুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় তার প্রচার-প্রচারণায় দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতিতে লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী চুনতি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হওয়ায় তার ইউনিয়নের পাশাপাশি আশ-পাশের ইউনিয়নেও জনপ্রিয়তা কাজ করবে বলে মনে করছেন তার কর্মী-সমর্থকরা। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই দুজনের মধ্যে প্রতীদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছেন স্থানীয়রা। আবার কেউ কেউ দুই প্রার্থীর মাঝে ভোটের ব্যবধান বাড়বে বলেও মনে করছেন।
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফরহাদুল ইসলাম (তালা), এমএস মামুন (চশমা) এবং জামিল উদ্দিন (টিউবওয়েল) পতীক পেয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেসমিন আকতার (কলস) এবং শাহিন আকতার সানা পেয়েছেন (ফুটবল) প্রতীকে লড়ছেন।
লোহাগাড়ায় ৯টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ২ লাখ ২৩ হাজার ৬২৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৯ হাজার ১০৮ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪ হাজার ৫১৮ জন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, প্রার্থীদের নির্বাচন বিধিমালা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। বিধিমালা কেউ লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজেন্টদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
চট্টগ্রামের সিনিয়র নির্বাচন অফিসার মো. এনামুল হক দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, আমরা চট্টগ্রামে চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচনে কেউ কেন্দ্র দখল বা অন্য কোনো অন্যায় উপায় নেওয়ার সুযোগ নেই। কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে পার পাবে না।