উপকূল এবং পাহাড়ে সুপেয় পানির সংকট দিনদিন প্রকট হয়ে উঠছে। সমতলে শহর কিংবা গ্রামে হোক সুপেয় পানির সংকট পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। শুষ্ক মওসুম আসতেই গ্রামের পুকুরগুলো শুকিয়ে যায়। আর সে সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে দ্রুততায়। অন্যদিকে পাহাড়ি এলাকায়ও পানির সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। সমতলে দূর থেকে পানি সংগ্রহ যতটা সহজ পাহাড়ে ততটা নয়।
পত্রিকান্তরে জানা যায়, বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে ক্রমবর্ধমান পানির সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া না হলে আগামী ২০ বছরে এই পাহাড়ের অর্ধেক পাড়া উচ্ছেদের মুখে পড়বে। ২০ বছর ধরে এই এলাকার ঝিরি-ঝরনা যেভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে, বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন উন্নয়নকর্মী ও পাড়ার প্রবীণ বাসিন্দারা। জেলার মধ্যে চিম্বুক পাহাড়ে পানির সংকটের তীব্রতা যে সবচেয়ে বেশি, বিষয়টি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরাও স্বীকার করেছেন।
চিম্বুক পাহাড়ে বিএনকেএস নামে একটি উন্নয়ন সংস্থায় দীর্ঘদিন কাজ করেন সিংচং ম্রো। তার মতে, ২০ বছর আগেও চিম্বুক পাহাড়ে পানির কিছু সমস্যা ছিল, কিন্তু সংকট ছিল না। গত ২০ বছরে ক্রমে বেড়ে যাওয়া সমস্যা বর্তমানে গভীর সংকটে পরিণত হয়েছে। আগামী ২০ বছরে সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। চিম্বুকের ৩৩টি পাড়ার অন্তত ১৫টি একেবারেই পানিশূন্য হয়ে পড়বে। ওই সব পাড়ায় কোনো পানি পাওয়া যাবে না। পানি না পেয়ে পাড়াগুলো উচ্ছেদ হয়ে যাবে।
বান্দরবান-রুমা-থানচি রোডে চিম্বুক পাহাড় রেঞ্জ এলাকার মেনলুং পাড়া, বাগান পাড়া, রামারি পাড়া, রিয়ামনই পাড়া, মেনসিং পাড়া, ক্রাপু পাড়া, দলিয়াম পাড়া, এনরা পাড়া, বাবলা হেডম্যান পাড়া, পাতুই পাড়া, বসন্ত পাড়াসহ মোট ২৮টি পাড়ায় অন্তত ৮০০ ম্রো পরিবারের প্রায় ২ হাজার মানুষ পানি সংকটে। পাড়ার বৃদ্ধা মেনয়ুন ম্রো সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং সংসার সবি এই গ্রামে। আমার এই ৬৫ বছর বয়সে পানির সংকট আগে দেখিনি। গত বছরের মত এবছরেও পানির সংকট শুরু হয়ে গেছে। পানি না থাকলে আমরা কোথায় যাবো। পানির অভাবে আমাদের মরতে হবে। কেন পানির সংকটের কারণ হিসেবে স্থানীয়রা জানান, ২০০৪-০৫ সাল থেকে চিম্বুক পাহাড়ের ম্রোরা জুমচাষ ত্যাগ করে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল উজাড় করে ফলের বাগান করা শুরু করেছেন। একমাত্র প্রাকৃতিক বনাঞ্চলই পাহাড়ের পানি ধরে রাখতে পারে। এ জন্য বাগানের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে পানির সংকটের তীব্রতাও বাড়ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে প্রাকৃতিক মাতৃগাছের বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে। এভাবে চললে পাহাড়ে উন্নয়ন তো দূরের কথা মানুষের বসবাস করাই কঠিন হয়ে পড়বে। বলা হয়, আগামীতে বিশ্বযুদ্ধ হলে তা পানির জন্য হবে। এখন থেকেই সে আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পানির উৎস নষ্ট না করে, প্রকৃতিকে সুরক্ষা করে কীভাবে নিজেরা সুরক্ষিত হবো সেটা এখন থেকে না ভাবলে যুদ্ধের আগেই হেরে যাব আমরা।