উত্তাল সাগরে ঝাপ দিয়ে যাত্রীর প্রাণ রক্ষা, পুরস্কৃত সেই মাঝি

তখন দুপুর ২টা। চট্টগ্রামের কুমিরা উপকূল থেকে যাত্রীদের নিয়ে লালবোট (লাইফবোট) যোগে সন্দ্বীপ যাচ্ছিলেন মাঝি মো. মামুন। সন্দ্বীপ চ্যানেলে তখন বড় বড় ঢেউ। হঠাৎ ঢেউয়ের ধাক্কায় এক যাত্রী লালবোট থেকে উত্তাল সমুদ্রে পড়ে যান। তাঁর পরনে লাইফজ্যাকেটও ছিল না। ততক্ষণে নৌকাও এগিয়ে গেছে অনেক দূর। লোকটিও ডুবে যাচ্ছিল। উপায় না দেখে উত্তাল সন্দ্বীপ চ্যানেলে ঝাঁপ দেন নৌকার মাঝি মামুন। উদ্ধার করেন যাত্রীকে।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুর ২টার সময় এ ঘটনা ঘটে।

পরে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অসংখ্য মানুষ মাঝি মো. মামুনের প্রশংসা করেন। এবার সেই মাঝিকে পুরষ্কৃত করেছে ইয়ামা রাইডার্স ক্লাব নামের একটি সংগঠনের চট্টগ্রাম শাখার সদস্যরা।

সোমবার (১৯ জুন) এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাসের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম সমাচার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক, ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের এমডিন তানভীর হাসান বিপ্লব, শাহরিয়ার আহম্মেদ, সিনিয়র মডারেটর আশরাফুল হোসেন সাব্বির, বাবলু, নীরব আরাফাত, সজীব, ইব্রাহিম ও সাঈদ ফুয়াদ মাঝি মামুনকে সম্মাননতা ক্রেস্ট, ঈদ গিফট ও নগদ অর্থ তুলে দেন।

মাঝি মামুন বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম, ওই যুবক সাঁতার জানেন। তাই ঢেউয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রথমে একটি লাইফজ্যাকেট ছুড়ে মারি। কিন্তু তিনি ওই জ্যাকেট ধরতে পারছিলেন না। বরং হাত দুটো উঁচু করে ডুবে যাচ্ছিলেন। তাই দেখে আমি পানিতে ঝাঁপ দিই। পরে তাঁকে ধরে কাঁধে নিয়ে সাঁতরে নৌকায় তুলে নিয়ে উপকূলে আসি। পরে জানতে পারলাম ওই যুবক সাঁতার জানেন না। আমার ঝাঁপ দিতে আর একটু দেরি হলে লোকটি ডুবে যেতেন। আর পাওয়া যেত না। হয়তো এতক্ষণে তাঁর লাশ উদ্ধার হতো।

তিনি আরও বলেন, দুপুরে জাহাজ থেকে প্রচুর যাত্রী নামার অপেক্ষায় থাকায় তিনি ওই যুবককে ঘাটের লোকজনের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে আবারও যাত্রী নামানোর জন্য চলে যাই। পরে খবর নিতে গিয়ে জানতে পারি, ওই যুবককে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন ঘাটে থাকা লোকজন।

মামুন জানান, ২২ বছর ধরে কুমিরার গুপ্তছড়া ঘাটে লালবোট চালান। ঘাট এলাকাতেই দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। গতকাল বেলা দুইটায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া উপকূলে নোঙর করে সীতাকুণ্ডের কুমিরা গুপ্তছড়া থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী জাহাজ। জাহাজ থেকে ৪০-৫০ জন যাত্রী উপকূলে যাওয়ার জন্য মামুনের লালবোটে ওঠেন।

এআই