ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধের পরিকল্পনা

জঙ্গি সংগঠন শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা শামিন গ্রেপ্তার

জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। যাদের উদ্দেশ্য সশস্ত্র জিহাদ করা। জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তাদের মতে যারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য কাজ করে তারা মুরতাদ। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। এ জন্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া মেধাবি ছাত্রদের জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ব করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে তাদেরকে নিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ধর্মের অপব্যাখা দিয়ে তদেরকে দিয়ে নেয়া হয় যুদ্ধের প্রস্তুতি। ২০১৯ সাল থেকে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসার পর থেকে অভিযান অব্যহত থাকে। একে একে ধরা পড়তে থাকে এ সংগঠনের শীর্ষ জঙ্গিরা। ফলে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন সংগঠনটির পাহাড়ে আশ্রয়দাতা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান বম। কিন্তু নতুন এ জঙ্গি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শামিন মাহফুজ সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। মুঠোফোনের খুদে বার্তায় শামিন জঙ্গিদেরকে নির্দেশনা দিয়েছে, ‘যুদ্ধ হবে আক্রমণাত্মক, রক্ষণাত্মক নয়।’

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি শামিন মাহফুজ ওরফে স্যার ওরফে আরিফ ওরফে আসলাম ওরফে মেন্ডিং ও তার স্ত্রী নাজনীনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। শুক্রবার (২৩ জুন) রাতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের অবহিত করেন সিটিটিসি প্রধান মো.আসাদুজ্জামান।

সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও মূল ব্যক্তি শামিন মাহফুজকে গ্রেফতারের মাধ্যমে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। এর মাধ্যমে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সিটিটিসি প্রধান।

তিনি বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই শামিন মাহফুজ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এসএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে পঞ্চম স্থান অর্জন করেন তিনি। এরপর রংপুর ক্যাডেট কলেজে পড়াকালীন শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর অন্য একটি কলেজে ভর্তি হয়ে সেখানেও মেধার স্বাক্ষর রাখেন তিনি। এইচএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে সপ্তম স্থান অর্জন করেন।

এরপর ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার পরেই বড় ভাইয়ের ছেলের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়েন। যে সংগঠনটি পরে আনসার আল ইসলাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০০৭ সাল থেকেই শামিন মাহফুজ সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা জসীম উদ্দিন রহমানীসহ শীর্ষ নেতৃত্বের সংস্পর্শে আসেন। সে সময় আরেকটা বিদেশি চরিত্র বাংলাদেশের জঙ্গিবাদে আবির্ভূত হয় বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু সে চরিত্রের বিষয়ে আমরা স্পষ্ট নই, সেই চরিত্রের বিষয়ে আমরা শামিন মাহফুজের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করবো।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঢাবিতে পড়াকালীনই শামিন মাহফুজ পাহাড়ে ক্যাম্পের পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী তিনি পাহাড়ে যান। ঢাবি থেকে বের হয়ে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এর মধ্যেই তার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে এনরোলমেন্ট হয়। তার গবেষণার বিষয় ছিল পাহাড়ে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর। ইচ্ছা করেই তিনি এ বিষয়টি নেন, যাতে তিনি পাহাড়ে যেতে পারেন এবং সেখানে নিরাপদ আস্তানা তৈরি করতে পারেন।

শামিন মাহফুজ ২০১১ সালে বিজিবি কর্তৃক গ্রেফতার হন। জেল থেকে বেরিয়ে একই কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। ২০১৪ সালে ডিবি কর্তৃক আবার গ্রেফতার হন। এরপর তিনি কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন। সেখানে থাকাকালীন নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের প্রথম পরিকল্পনা হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় আটক হুজি এবং জেএমবির শীর্ষ নেতৃত্ব সাইদুর রহমান, মুফতি হান্নান, আবু সাঈদের সংস্পর্শে আসেন শামিন। তখন রক্সিও জেলখানায় ছিলেন।

সে সময় জঙ্গি নেতারা জানতো শামিন মাহফুজ এবং রক্সি আগেই জেল থেকে বের হবেন। তাই তাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য। ২০১৭ সালে রক্সি এবং ২০১৮ সালে শামিন মাহফুজ জেল থেকে জামিনে বের হন। এরপর থেকে তারা সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন কিন্তু সংগঠনের নামকরণ হয়নি। তবে তারা একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতে থাকেন।

রক্সি দাওয়াতি কার্যক্রম এবং শামিন মাহফুজ পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তখন ২০১৯ সালে রক্সিকে সংগঠনের আমির হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

সিটিটিসির প্রধান আরও বলেন, ঢাবিতে থাকাকালীন সময় থেকেই শামিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল কুকি চিনের প্রধান নাথান বম। শামিন উদ্দেশ্যমূলকভাবেই নাথান বমের সঙ্গে পরিকল্পনা করে ঘনিষ্ঠতা করেন। তখনই নাথান বমের সঙ্গে পাহাড়ে বেড়াতে যান শামিন। ২০১৯ সালে নাথান বমকে জঙ্গি সংগঠন তৈরির কথাটি জানান শামিন এবং সশস্ত্র জিহাদের প্রস্তুতের জন্য তাকে ট্রেনিং ক্যাম্পে স্থাপনের প্রস্তাব দেন।

২০২০ সালে কক্সবাজারের একটি হোটেলে বসে কুকি চিন ও নতুন জঙ্গি সংগঠন শারক্বীয়ার মধ্যে সমঝোতা সই হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শামিনের কাছ থেকে হাতে লেখা দুই পৃষ্ঠার স্মারকটি উদ্ধার করেছে। সেখানে কুকি চিন কর্তৃক জঙ্গি সংগঠনটিকে সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ ছিল। তখন থেকেই কুকি চিনের আওতায় তাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়।

তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে সিলেট থেকে ৬ তরুণ নিখোঁজ হয়। এপ্রিলে প্রথম ১২ জন নিয়ে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। কুকি চিনের ক্যাম্পের পাশেই কেডিসি ক্যাস্প নামে ক্যাম্পটি পরিচালিত হয়। তখনই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বসে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি। ২০২২ সালের শুরুর দিকে ৩০ জনের বেশি তরুণ নিখোঁজ হয়। তখনই আমরা এ সংগঠনের তৎপরতার বিষয়ে অবগত হই।

রক্সি গ্রেফতারের পর মূল ব্যক্তি হিসেবে তমালকে আমির হিসেবে নিয়োগ দেন শামিন। ২০২২ সালে সুরা কমিটি গঠন করে বিভিন্ন জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা শামিনের মোবাইল থেকে একটি গোপন কথোপকথন উদ্ধার করেছি। সেখানে সূরা কমিটির সঙ্গে নাথান বমও কানেক্টেড ছিল। অভিযানের শুরুর দিকে শামিন মাহফুজকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন নাথান বম। কিন্তু শামিন আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নাকচ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন। শামিন নির্দেশনা দেন, ‘যুদ্ধ হবে আক্রমণাত্মক, রক্ষণাত্মক নয়।’

নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের উদ্দেশ্য সশস্ত্র জিহাদ করা। তাদের মতে যারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য কাজ করে তারা মুরতাদ। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। তবে, তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিশ্চিত হতে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত থাকবে।

শামিন মাহফুজের স্ত্রী যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি ছিলেন আনসার আল ইসলামের ইজাজ কারগিলের স্ত্রী। যিনি কারগিল যুদ্ধে ড্রোন হামলায় মারা যান। ইজাজ যখন পাকিস্তান চলে যান তখন সংগঠনের সিদ্ধান্তে তার স্ত্রীকে বিয়ে করেন শামিন। তার স্ত্রীও সংগঠনের নারী সদস্য হিসেবে নারীদের দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নাথান বমের সঙ্গে শামিনের সর্বশেষ যোগাযোগটা উদঘাটন করতে পারিনি। আমরা মনে করি কোনো না কোনোভাবে তার যোগাযোগ থাকতে পারে। হিজরতে যাওয়া অধিকাংশকেই আমরা গ্রেফতার করতে পেরেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানা যাবে।

নাথান বমের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন শামিন। তার কথায় কেন নাথান বম আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে এই প্রশ্নগুলো আমাদেরও। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাবো এর ভিত্তিতে বিস্তারিত জানা যাবে। আশা করছি, তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে।
তরুণদের টার্গেট করেই বানানো হয়েছিল ভিডিও

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র চার সদস্যকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় আল আমিন ওরফে মিলদুকের কাছ থেকে হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির আনিছুর রহমান এবং দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মাইমুনের সদস্য ও অর্থ সংগ্রহবিষয়ক এবং উগ্রবাদী বক্তব্যের একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়।

তরুণদের টার্গেট করে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তৈরি করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সদস্য এবং অর্থ সংগ্রহ করাই ছিল জঙ্গিদের মূল লক্ষ্য।
এর মধ্যে একটি ভিডিওটিতে ছিল নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র প্রধান নেতা বা আমির আনিছুর রহমান ওরফে মাহমুদ এবং দাওয়াতি শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মাইমুনের উগ্রবাদী বক্তব্য। পাহাড়ে চলমান জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সবশেষ গ্রেফতার চারজনের মধ্যে একজনের মোবাইল ফোনে ছিল ভিডিওটি। সেখানে সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতা অর্থ ও সদস্য সংগ্রহের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান র‌্যাব।

তথ্যমতে, ভিডিওটি গত বছরের নভেম্বরের। ভিডিওটি তাদের গ্রুপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। গত ২২ জানুয়ারি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রণবীরকে আটক করা হয়। তখন তার মোবাইল ফোন থেকে ৮ মিনিটের একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়। ভিডিওতে মোট ২৯ জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়। এবার পাওয়া ৭ মিনিটের ভিডিওতে ২৩ জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন আগের ভিডিওতেও ছিলেন। অর্থাৎ এই ভিডিওতে নতুন চার জঙ্গির (গ্রেফতার হওয়া) উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

আল মঈন বলেন, ‘নতুন ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পাই, গহীন জঙ্গলে অস্ত্র হাতে চলছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ। তরুণদের আকৃষ্ট করতে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ভিডিওবার্তা ছড়ানো হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত জানা গেছে, দুটি ভিডিওর নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন আল আমিন ওরফে বাহাই। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে নিখোঁজ শিক্ষার্থী রিয়াসাত রায়হান ওরফে আবু বক্করের প্রাইভেট টিউটর। আর ভিডিও সম্পাদনা করেছেন পাভেল নামের আরেক জঙ্গি।

ধর্মান্তরিত তরুণের জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়ার বিষয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, পার্থ কুমার দাস ২০১৮ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ঢাকার কাকরাইলে চাকরি করার সময় পলাতক জঙ্গি সিরাজের মাধ্যমে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। পরে তাকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চাকরিসহ দাওয়াতি কার্যক্রমে তাকে নেয়া হবে। সেই কথা অনুযায়ী তিনি পাহাড়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছিলেন।

অস্ত্র কিনতে ১৭ লাখ টাকা দিয়েছে জঙ্গিরা

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ ভারি অস্ত্র কিনতে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপকে (পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ) ১৭ লাখ টাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গত ৩ নভেম্বর রাত ১১টায় সংঠনটির অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক ও হিজরত বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কসহ চারজনকে কুমিল্লার লাকসাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের কাছ থেকে ভারি অস্ত্র কিনতে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপকে অর্থ দেয়ার কথা জানতে পেরেছে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ২০১৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে ২০১৯ সালে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নাম নির্ধারণ করে জঙ্গি সংগঠনটি। এখন পর্যন্ত এ সংগঠনের ২৬ জনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত তারা নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যেই এই সংগঠন সৃষ্টি করে।

মহিবুল্লাহর বয়ানে অর্ধশত তরুণ নিরুদ্দেশ

জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নায়েবে আমির মো. মহিবুল্লাহর বয়ান শুনেই অর্ধশত তরুণ ঘর ছেড়ে পাহাড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিল । গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিন্টোরোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখ পাহাড়ের প্রশিক্ষণক্যাম্পে দিনভর জিহাদের ট্রেনিং শেষে সন্ধ্যার পর বয়ান (বক্তব্য) করতেন, যাতে জঙ্গিবাদে যোগ দেয়া প্রশিক্ষণার্থীরা অকাতরে জীবন বিসর্জন দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তার বয়ান শুনেই অর্ধশত তরুণ ঘর ছেড়ে পাহাড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিল।’

আসাদুজ্জামান বলেন, মহিবুল্লাহ জঙ্গি সংগঠনে ‘ভোলার শায়েখ (আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন)’ হিসেবে পরিচিত। জঙ্গি দলটিকে সক্রিয় রাখতে প্রধান পৃষ্ঠপোষক পলাতক জঙ্গি নেতা শামীম মাহফুজ ও কারাবন্দি নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি বিভিন্ন তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। অর্ধশত তরুণ ঘর ছাড়ার বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে মহিবুল্লাহর তথ্য পায় সিটিটিসি।

এমএইচএফ