বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অল্প সময়ের মধ্যে বিএনপির মহাসমাবেশে যে জনস্রোত, তাতেই প্রমাণ হয় সরকারের অবস্থান কোথায়। আওয়ামী লীগের সমাবেশের খালি চেয়ার, বাবুই পাখি-চড়ুই পাখি ছাড়া কোনো লোক নেই।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনের দলটির মহাসমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, সব বাধা-জুলুম উপেক্ষা করে আজকের এই সমাবেশে মানুষ উপস্থিত হয়েছে। সুতরাং আর কোনো বাধা আমাদের দমাতে পারবে না। গোটা জাতির ওপর আরব্য উপন্যাসের মতো দানব বসে আছে। সেই দানবকে হঠাতে হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশের মানুষ হত্যা করেছেন, জুলুম করেছেন, সেটি আমেরিকার কংগ্রেস সদস্যরা বলেছেন। তারা বলছেনন জনগণের আন্দোলনের র্যাব-পুলিশ বাধা দিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজ দেশের কেন এই অপবাদ। একটিই কারণ, শেখ হাসিনা অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হত্যা করেছেন। জুলুম নির্ধারণ করেছেন। আজকে আমেরিকার একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান কংগ্রেস, তারা এর প্রতিবাদ করছে, যা আমাদের জন্য লজ্জার।
সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বর্তমান সরকারকে ধাক্কা মেরে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে তারপর নির্বাচন করা হবে।
তিনি বলেন, একটু ধৈর্য ধরুন, আগামী দিনের কর্মসূচি মধ্য দিয়ে আমরা বিজয় লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। আমাদের কর্মসূচির কথা শুনলেই এ সরকারের মাথা খারাপ হয়ে যায়। আমাদের কর্মসূচির দিনেই তারা পাল্টা কর্মসূচি দেয়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এরশাদকে পদত্যাগ করিয়ে নির্বাচনে গিয়েছিলেন। স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিলেন। তার সন্তান তারেক রহমান বলেছেন এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেব না।
এর আগে, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশ শুরুর আগেই নয়াপল্টন লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এ সময় নেতাকর্মীরা সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় মহাসমাবেশস্থলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের অভিযোগ করেছেন দলটির নেতাকর্মী। তারা বলেন, দুপুর ১২টা থেকেই মোবাইলে থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবায় বিঘ্ন ঘটে। তবে, সাড়ে ১২টার পর মোবাইলের ইন্টারনেটের সিগন্যাল একেবারেই পাওয়া যাচ্ছিল না।
এদিকে সমাবেশ ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকা মনিটরিং করা হয়েছে। ড্রোন দিয়েও সমাবেশ এলাকা মনিটরিং করা হয়েছে।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো বিশ্লেষণ করে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা মাঠে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, বহু নাটকীয়তার পর গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে বিএনপিকে তাদের পছন্দের জায়গায় ২৩ শর্তে সমাবেশের অনুমতি দেয় ডিএমপি। সমাবেশের অনুমতি দেওয়ায় ডিএমপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপি।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, মহাসমাবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ডিএমপির ইতিবাচক ভূমিকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আশা করি তারা বিএনপির মহাসমাবেশের নিরাপত্তা বিধানে যথাযথ সহযোগিতা করবেন। সমাবেশে আসার পথে জনগণ ও বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে কোনো প্রকার বাধা প্রদান করা হবে না।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, সমাবেশে লাঠিসোঁটা, কোনো ব্যাগ বহন করা যাবে না। রাষ্ট্রদ্রোহ কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। কোনো কুচক্রীমহল যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য পুলিশের পাশাপাশি সমাবেশ এলাকায় বিজিবি মোতায়েন থাকবে।
এমএইচএফ