‘আস্থার সংকট থেকেই চিকিৎসা সেবা প্রার্থীরা বিদেশমুখী হচ্ছে’

চট্টগ্রামে গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা

প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৭ লক্ষেরও বেশী মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে পাড়ি জমাচ্ছেন ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে।

কেন মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন এ বিষয়ে আলোচনায় বসেছিলেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতের নীতি নির্ধারক, চিকিৎসক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, হাসপাতালের প্রতিনিধি ও চিকিৎসা সেবা প্রার্থীরা।

‘বিদেশে চিকিৎসা: কেন? সংকট নাকি প্রয়োজন’ এ বিষয়ে এক গোল টেবিল বৈঠক গত সোমবার বিকালে নগরীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চট্টগ্রামের জনপ্রিয় ডিজিটাল প্লাটফর্ম চিটাগং লাইভ এ আলোচনার আয়োজন করে। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. ইসমাইল খান এতে মূখ্য আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম আহসান, সিএমসি’র মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এম এ সাত্তার, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বাসনা মুহুরী, বাসস চট্টগ্রামের ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক কলিম সরওয়ার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের প্রতিনিধি ডা. নওশাদ, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এর ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোরশেদ হোসেন, মানবাধিকার ও সমাজ কর্মী আমিনুল হক বাবু ও নাগরিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আনামুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চিটাগং লাইভের প্রতিষ্ঠাতা সাবের শাহ।

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইসমাইল খান বলেন, চিকিৎসাকেন্দ্রের সকল কর্মীদের হেলথ কেয়ার সার্ভিস সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। চিকিৎসকদের লিডারশীপ রোল নিতে হবে। সকলে মিলে সেবাধর্মী হলে সেবাপ্রার্থীরা আস্থা খুঁজে পাবে, তাহলে বিদেশমুখী প্রবণতা কমবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম আহসান বলেন, আমাদের হাসপাতালগুলোতে সক্ষমতার চেয়েও ১০ গুণ বেশী রোগী আসে সরকারী হাসপাতালগুলোতে। এতে যে চাপ তৈরি হয়, তাতে সবসময় সেবার মান ধরে রাখা কষ্টসাধ্য। তবে আমাদের চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িতদের আরো বেশি আস্থা অর্জন করতে হবে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বাসনা মুহুরী বলেন, রোগীদের ধৈর্য বাড়াতে হবে, সহনশীল মনোভাব এবং মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে এবং চিকিৎসা কেন্দ্র গুলোর দক্ষ জনবল বাড়াতে হবে। সামান্য অসুখে বিশেষজ্ঞ চিতিৎসককেই দেখাতে হবে এ মনোভাব থেকে বেড়িয়ে না এলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপর চাপ বাড়তে থাকে এতে অনেক ক্ষেত্রেই সকল সেবা প্রার্থীকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া সম্ভব হয় না।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় পধান ডা. এম এ সাত্তার বলেন, এই দেশে রেফারেন্স সিস্টেম চালু না থাকার ফলে এবং ডাক্তারের পরামর্শ কে গুরুত্ব না দিয়ে রোগীরা নিজের ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়। এতে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে অনেকেই বিদেশমুখী হচ্ছেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যুরো প্রধান করিম সরওয়ার বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা পরিস্থিতি ঠিকভাবে সামাল দিতে হবে যাতে রোগীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি না হয়। রোগ নির্ণয়ে নির্ভুল হতে না পারলে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে না। রোবটিক সার্জারির মত আধুনিক সার্জারিও আমাদের দেশে হাসপাতালগুলোতে চালু করতে হবে।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী বলেন, কোভিড সময়কালীন প্রত্যেক রোগীই দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসারত ছিলেন এবং পর্যাপ্ত সেবাও পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে পুরোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে ফলাফল ভুল আসে যার ফলে রোগীরা বিদেশগামী হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুদ্দিন মুন্না, চিটাগং লাইভের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম ও কন্টেন্ট প্রধান সেঁজুতি বড়ুয়া।

এআই