সময়টা ২০১৬ এর শেষের দিকে। তখন পুরোদমে লেখালেখি করতাম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও জাতীয় এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক পত্রিকায় লেখা নিয়মিত প্রকাশ হতো। সেসময়ে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে একজন সংগঠক ও লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করি। কোনো একদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রথম মহাপরিচালক, চট্টগ্রামে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশর প্রতিষ্ঠাতা ভিসি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যাই। ওনার বংশ ও আমার নানা হুজুর পীরে কামেল অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুন নূর সিদ্দিকী (রহ) এর বংশ একই। তাঁরা উভয়ই লোহাগাড়া থানার চুনতীর সুবিখ্যাত ও সুপরিচিত পীরে কামেল হযরত শাহ সুফী আলহাজ মাওলানা আব্দুল হাকিম সিদ্দিকী (রহ.) এর বংশধর। সেই সাথে ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খানকে নানা ভাই বলে ডাকতাম। তিনিও আমাকে নাতি বলে সম্বোধন করতেন।
সেদিন আমার হাতে থাকা বেশকিছু প্রকাশিত লেখা তিনি মনোযোগ দিয়ে পড়লেন। তন্মধ্যে একটি লেখা ছিল আব্বা হুজুর শায়খুল হাদীস প্রফেসর আল্লামা ফখরুদ্দীনকে (রহ) নিয়ে। লেখাগুলো পড়ে নানাভাই খুব খুশি হলেন এবং লেখালেখি নিয়ে কিছু পরামর্শ দিলেন। একইসাথে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে আব্বা হুজুর সম্পর্কে তুলে ধরার লক্ষ্যে তাঁর কলিগ এবং ছাত্রসহ যারা তাকে চেনেন কিংবা জানেন তাদের কাছ থেকে লেখা সংগ্রহ করার পরামর্শ দেন। সেদিন বাসায় গিয়ে আব্বা হুজুরের নামে গুগলে খুঁজে কোনো লেখা পাওয়া যায়নি। যদিও এর আগে আব্বা হুজুরকে নিয়ে বিভিন্ন লেখক ও গবেষকগণ তাদের গবেষণায় সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেছিলেন।
তাৎক্ষণিক আব্বা হুজুরের একান্ত শিষ্য ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ এবং ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. আব্দুস সালাম আজাদী এই দু’জনের সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করি। আমার পরিচয় পাওয়ার পর তারা শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং বারবার আব্বা হুজুরকে স্মরণ করেন। আসলে আব্বা হুজুরের মুখে এই দুজনের নাম অনেকবার শুনেছি। মূলত তাদের সাথে আমার প্রথম পরিচয় পিস টিভি বাংলায়। যদিও সেটা একপক্ষীয়! টিভিতে তাদের বক্তব্য সব সময় দেখতাম ও শুনতাম। তাদেরকে আব্বা হুজুরকে নিয়ে বড় পরিসরে লেখা দেয়ার জন্য বলতেই বেশ কিছুদিন পর তাদের লেখা পেয়ে যাই। লেখার মধ্যে আব্বা হুজুরের অনেক জানা-অজানা গল্প ও ইতিহাস উঠে আসে। এরই মধ্যে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে শুধুমাত্র আব্বা হুজুর সম্পর্কে তুলে ধরার লক্ষ্যে আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.) গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করি।
ড. আবুল কালাম আজাদ ভাইয়া স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মন্তব্য কওে বলেন, ‘আমি হাদীসের অনেক আলোচনা শুনেছি, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদীস শাস্ত্রে পিএইচডি ধারী শিক্ষকদের কাছে হাদীস পড়েছি। কিন্তু শায়খ ফখরুদ্দীন (রহ) যেভাবে হাদীসের সনদের ও মতনের গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করতেন তার তুলনা হয় না।’
প্রফেসর ড. আব্দুস সালাম আজাদী ভাইয়া স্মৃতিচারণে লিখেন, ‘আল্লামা শায়খ ফখরুদ্দীন (রহ) সাহেবের মত বড় মুহাদ্দিসের কাছে পড়তে পারা ছিল আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ নিয়ামতের অন্যতম।’
এই দুটি লেখা আমাকে আব্বা হুজুরকে নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা শতভাগ বাড়িয়ে দেয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ড. নকীব মো. নসরুল্লাহ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর এবং, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শরীআহ সুপারভাইজরী কমিটির সদস্য সচিব ড. আবু বকর রফিক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার সাবেক ডিন ড. এ. এইচ. এম ইয়াহইয়ার রহমান, অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-হাদীস এ-ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মো. ময়নুল হক, মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর নূর মোহাম্মদ, সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের এমডি নুর উদ্দিন মো. সাদেক হোসাইন, ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক ড. মাওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদীসহ অসংখ্য ব্যক্তিত্বদের লেখা সংগ্রহ করেছি। আরও বেশ কিছু সংগ্রহের প্রচেষ্টা চলছে।
লন্ডনে অবস্থানরত শায়খ আল্লামা ফখরুদ্দীনের ছাত্রদের গঠিত আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.) স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.) গবেষণা কেন্দ্র এর সার্বিক সহযোগিতায় গত ২২ জুলাই ২০২০ সালে অনলাইন প্লাটফর্ম জুম মিটিং এর মাধ্যমে আলোচনা সভা এবং দোআ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.) গবেষণা কেন্দ্র এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত আমি অধম মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছি।
ইতোমধ্যে প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খুল হাদীস প্রফেসর আল্লামা ফখরুদ্দীনকে নিয়ে মোহাম্মাদ ফখরুদ্দীন (শিক্ষক) নামে উইকিপিডিয়ার আইডি, ঝযধরশযঁষ ঐধফরঃয অষষধসধ ঋধশযধৎঁফফরহ নামে লিংকডিন আইডি খোলা হয়েছে। এই মহান মনীষীকে নিয়ে বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষকদের লেখা সংরক্ষণের জন্য বেশ কয়েকটি ফেসবুক পেইজও রয়েছে। যথাক্রমেÑ (ক) অধ্যক্ষ আল্লামা ফখর উদ্দীন (রহ), (খ) ংযধরশযঁষ ঐধফরঃয চৎড়ভ. অষষধসধ ঋধশযধৎঁফফরহ (গ) চৎড়ভবংংড়ৎ অষষধসধ ঋধশযধৎ টফফরহ আলেম সমাজের অহংকার এবং উজ্জ্বল নক্ষত্র। এমনকি তাকে নিয়ে শায়খ আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) ও ঝযধরশযঁষ ঐধফরঃয চৎড়ভবংংড়ৎ অষষধসধ ঋধশযধৎঁফফরহ (জ) নামে দুটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।
আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.) গবেষণা কেন্দ্র এর উদ্যোগে আরও কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিÑ
১) ইংরেজিতে উইকিপিডিয়ার আইডি খোলা, ২) ওয়েবসাইট চালু করা, ৩) আব্বা হুজুরকে নিয়ে বিভিন্ন জনের লেখা আরবি ও ইংরেজিতে ভাষান্তর করা এবং ৪) একটি গবেষণা সহায়ক স্মারকগ্রন্থ প্রকাশনা করা।
এই গবেষণা কেন্দ্রটি শায়খ আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) সম্পর্কে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। যার ফলে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে সবার অনুপ্রেরণা জোগাবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই গবেষণা কেন্দ্রের সকল কার্যকলাপ কবুল ও মঞ্জুর করুন। আমিন।
লেখক: কলামিস্ট।
পরিচালক, আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ.) গবেষণা কেন্দ্র।