ইসলামী শিক্ষা কিংবা দ্বীনি শিক্ষা অর্জনের বড় প্লাটফর্ম হচ্ছে মাদরাসা শিক্ষা। আর এই দ্বীনি শিক্ষা আল্লাহর কাছে মর্যাদা বৃদ্ধির প্রথম উপায়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম বা জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে তাদের মর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দেবেন (সূরা: মুজাদালা, আয়াত- ১১)। হাদীস শরীফে এসেছে, ইলম শিক্ষা করার জন্য পথ চলা, হাঁটা, কষ্ট করা ইত্যাদিও ইবাদাত। এগুলির মর্যাদা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত বেশি। (বুখারি-১/৩৭, মুসলিম-৪/২০৭৪)।
রাসূল (সা) ইরশাদ করেন, দ্বীনি শিক্ষা অর্জনকারীর মর্যাদা সম্পর্কে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত- রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন- ‘আলিম ও আবেদের পুনরুত্থান হবে। অতঃপর আবেদকে বলা হবে তুমি জান্নাতে যাও। আর আলেমদেরকে বলা হবে তুমি দাঁড়াও, যাতে তুমি যে শিক্ষা দিয়েছো সে কারণে সুপারিশ করতে পার’। (বায়হাক্বী-১৭১৭)
এ মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত লোকেরা তাহজিব-তমদ্দুন, কৃষ্টি-সভ্যতা, দীন-ঈমান, ইজ্জত-আবরু ইত্যাদি সংরক্ষণে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত লোকদের অনৈতিক কাজে যেমন চুরি, ডাকাতি, হত্যা, ব্যভিচার, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, মাদক ইত্যাদির সাথে সংশ্লিষ্টতা উল্লেখ করার মতো নজির তেমন পাওয়া যায় না।
সৎ, সাহস, দক্ষ ও সুনাগরিক হিসেবে গঠন করতে মাদরাসার শিক্ষার বিকল্প নেই। অথচ এ মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য চলছে বহুমুখী ষড়যন্ত্র। এ শিক্ষা সংকোচন ও ধ্বংসে তৈরি করা হয়েছে চূড়ান্ত নীলনকশা। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাদরাসাবিমুখ করতে এবং ইসলামী জ্ঞান অর্জনে নিরুৎসাহিত করতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। একসময় আলিয়া মাদরাসা থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় অসংখ্য আলেম তৈরি হতো। দেশে আলেম শূন্য করার জন্য আলিয়া মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের অপচেষ্টা চলছে দীর্ঘ সময় ধরে। অতীতের সিলেবাস বিলুপ্ত করে বর্তমান সিলেবাসে নাচ-গান, ঢোল-তবলা, হারমোনিয়াম ও বেপর্দা ছবিসহ এমন সব বিষয় সন্নিবেশিত করেছে যা খুবই লজ্জাজনক ও ঘৃণিত। এমনকি কুফরি মতবাদ চর্চার লক্ষ্যে সুকৌশল অবলম্বন করেন। এসব অবশ্যই অযোগ্য লোকের রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার খেসারত দিচ্ছে বলে মনে করেন দেশের প্রথম সারির ইসলামী চিন্তাবিদ ও সচেতন নাগরিকগণ। অথচ রাসূলুল্লাহ্ (সা) ঢোল-তবলা বাজাতে নিষেধ করেছেন। এমনকি বাঁশিকে দুষ্টু লোক ও বোকার কণ্ঠস্বর নামে আখ্যায়িত করেছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) শরাব পান করতে, জুয়া খেলতে, ঢোল বা তবলা বাজাতে এবং ঘরের তৈরী শরাব পান করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম। (আবু দাউদ ৩৬৪৪)।
হাদীসে আরও এসেছে, হযরত আবু মালিক আল-আশ‘আরী (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক গোষ্ঠী হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম ব্যবহার, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল গণ্য করবে’। (সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ৫৩৪৩।)
বর্তমানে আলিয়া মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থা এভাবে চলতে থাকলে জাতি দ্রুত আদর্শিক মূল্যবোধবিবর্জিত অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। শিক্ষা রূপরেখা প্রণয়ন কমিটি সেকুলার শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ ও মতামত নিলেও ইসলামী বিষয়ে পারদর্শী আলেম বা ইসলামিক স্কলারদের কোনো বক্তব্য বা মতামত গ্রহণ করেনি; ফলে নতুন শিক্ষা রূপরেখাটি হয়ে পড়েছে একপক্ষীয়, অপূর্ণাঙ্গ ও খণ্ডিত। বর্তমানে আলিয়া মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থায় যেভাবে ব্যাপকভিত্তিক মতামত নেয়া দরকার ছিল, তা করা হয়নি বলেই আয়নার মতো পরিস্কার হয়ে গেছে।
আলিয়া মাদরাসার বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সাথে আমাদের সমাজ ও সাংস্কৃতিক বোধের সম্পর্ক নেই। এ শিক্ষা ব্যবস্থা চলতে দিলে মানুষ ধর্মবিমুখ, জীবনবিমুখ ও সমাজবিমুখ হয়ে পড়বে। জনগণের বিশ্বাস ও বোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কোনো শিক্ষা রূপকল্প চলতে পারে না।
সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের কাছে প্রস্তাব করছি, নৈতিকতাসম্পন্ন জনশক্তি তৈরিতে পূর্বের সিলেবাস বহাল রাখার যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করার আবেদন জানাই। একইসাথে জনগণকে ধর্মীয় শিক্ষা ও জাতীয় মূল্যবোধপরিপন্থী এ শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।
লেখক : সংগঠক ও কলামিস্ট।