আরবান হাউজিং সোসাইটির নামে ৫ শতাধিক গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত

আমুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাজলের প্রতারণা

বোয়ালখালী ধোরালা কানুনগোপাড়া আরবান কো- অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে আমুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কাজল দে এর বিরুদ্ধে।

আমুচিয়া ইউনিয়নের ধোরালার খানবাহাদুর পাড়ার বাসিন্দা রওশন আকতার (৪৫)। তাঁর স্বামী আলী হোসেন একটি গাড়ির গ্যারেজে কাজ করেন। অভাবের সংসারে সঞ্চয় করার জন্য এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা জমা রাখেন ধোরালা কানুনগোপাড়া আরবান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে। ২০১৬ সালে সঞ্চয়ের ৬০ হাজার টাকা পেলেও বাকি এক লাখ ১৫ হাজার টাকা পাচ্ছেন না প্রায় আট বছর ধরে। বর্তমানে তাঁর স্বামী অসুস্থ। স্বামীর চিকিৎসা করাতে বারবার ধরনা দিয়েও মিলেনি বাকি টাকা।

একই ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা ডেজি আকতার (২৫)। নগরীর একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সঞ্চয় করার জন্য ১৬ হাজার টাকা জমা রাখেন আরবান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে। আট হাজার টাকা পেলেও বাকি আট হাজার টাকা তিনি পাচ্ছে না এখনো। শুধু রওশন আকতার বা ডেজী আকতার নন; এমন বিপাকে পড়েছেন সোসাইটির পাঁচ শতাধিক সদস্য।

জানা যায়, ১৮১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আরবান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন আমুচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আমুচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজল দে। সোসাইটির সভাপতি প্রদীপ কুমার দাশ ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন কাজল দের ভাইপো সঞ্জয় কুমার দে। ভূক্তভোগী ডেজি আকতার বলেন, ‘আমরা টাকার জন্য অফিসে গেলে সব সময় বন্ধ পাওয়া যায়। আমাদের দেখলে আর অফিস খুলে না।’

গত কয়েক বছর আগে তোপের মুখে পড়ে সমবায় কর্মকর্তার উপস্থিতিতে গ্রাহকদের মধ্যে রিপা রক্ষিত ১০ হাজার, ছালেয়া বেগম ৩০ হাজার, রাবেয়া বেগম ২০ হাজার, মনি রক্ষিত সাত হাজার, মঞ্জুশ্রী রক্ষিত চার হাজার, নমিতা রক্ষিত পাঁচ হাজার, শিল্পী ঘোষ ২০ হাজার টাকাসহ এক লাখ ২৪ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন সোসাইটির অর্থ সম্পাদক কাজল দে। তবে এখনো শত শত গ্রাহক লাখ লাখ টাকা পাবেন বলে জানা গেছে।

সোসাইটির সভাপতি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, আগের কমিটির সভাপতি সদস্যদের টাকা নিয়ে সমিতির একটি ঘর নির্মাণ করে ফেলেছেন। ফলে গ্রাহকদের টাকা পর্যায়ক্রমে সদস্যদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আরবান কো-অপারেটিভ সোসাইটির ২০১৮ সালের ৩০ জুনের উপজেলা সমবায় অফিসের অডিট প্রতিবেদনের হিসাব মতে, সোসাইটির মূলধন ও দায় ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ২৫৮ টাকা ৭০ পয়সা। এ ছাড়া চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে অন্যের জায়গা দখল, ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতি, ইউপি সদস্যদের মাসিক সম্মানী না দেওয়াসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগও রয়েছে কাজল দের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী তপন দে বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন কাজল চেয়ারম্যান।’ আমুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাজল দে গ্রাহকের পাওনা টাকার বিষয়ে বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা দিয়ে আগের কমিটির সদস্যরা সমিতির নামে দোতলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করে ফেলেছেন। ফলে বর্তমান কমিটির সদস্যরা গ্রাহকের টাকা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে পারছেন না। বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান কাজল দে পলাতক রয়েছেন। প্রতিদিন প্রতারিত গ্রাহকরা তার বাড়িতে ধর্না দিচ্ছে।