আমাকে ভোট শেখাতে হবে না

# জিয়া এরশাদ ও খালেদা জিয়া ভোট চোর # যতটুকু রিজার্ভ প্রয়োজন, আমাদের আছে # বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে বসে থাকব # জনগণের জানমালের ক্ষতি করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে # তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে কেউ কিছু বলেনি # যুক্তরাষ্ট্র ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আমাকে শেখাতে হবে না। এ কথা আমি আমেরিকাতেও বলে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা বাস্তব অবস্থাটা বোঝে কিনা আমি জানি না। তাদের একই কথা- মানে ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে। সেটাও আমি স্পষ্ট বলে এসেছি। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সফর বিষয়ে জানাতে গতকাল শুক্রবার গণভবনে আয়ৈাজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখা গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগই জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।

‘জি-২০ সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে ফিরেছেন’- বিএনপি নেতাদের এমন মন্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিএনপি নেতাদের এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো উত্তর দিতে চাই না। আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই, বিএনপি নেতারা কীভাবে মাইক হাতে মিথ্যা কথা বলে সেটা সবাই জেনে নেন। মিথ্যা বলা তাদের অভ্যাস। আর সব কিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টার বিষয়ে যেন দেশবাসী সচেতন থাকে।

দিল্লিতে জি টোয়েন্টি সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেলফি এবং পরে ওয়াশিংটনে তার সঙ্গে আবারও সাক্ষাতে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে একজন সাংবাদিক শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান, এবারের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের কথায় তিনি আর কোনো বার্তা পেয়েছেন কি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কিছু লোক নির্বাচন নিয়ে ‘একটু বেশি কথা’ বলে। এ কারণে বিদেশিরাও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার সুযোগ পায়। দুর্ভাগ্য হল সেটাই, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে, জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করেছে, সেই সময় নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে তাদের (বিদেশিদের) উদ্বেগ দেখি নাই।

রিজার্ভ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব আঁতেল, জ্ঞানীগুণি কথা বলেন- তারা কী জানেন, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি, তখন রিজার্ভ কত ছিল? বাংলাদেশ কোথায় ছিল, কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছি? যতটুকু রিজার্ভ প্রয়োজন, আমাদের আছে। আমাদের ভালো থাকা জরুরি, নাকি রিজার্ভটা দরকার বেশি? যদি বলে, তাহলে রিজার্ভ আগের জায়গায় এনে দেই? বিদ্যুতকেন্দ্র-টেন্দ্র বন্ধ করে দেই।

তিনি বলেন, আমি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলেছি, প্রতিদিন একটু করে লোডশেডিং দিতে। যাতে বিদ্যুৎ থাকার গুরুত্বটা বোঝে। আর বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে সবাই। সুবিধাটা নিচ্ছে অর্থশালীরা। এজন্য নির্দেশনা দিয়েছি, যারা বেশি ব্যবহার করবে, তারা বেশি টাকা দেবে। সেভাবে মূল্য নির্ধারণ করতে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা হঠাৎ এবং অন্যান্য দেশ আমাদের দেশের নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ কি না প্রশ্ন তোলে, আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, যখন মিলিটারি ডিকটেটর ছিল, যখন আমরা সংগ্রাম করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরয়ে দেয়ার জন্য। আমরা সংগ্রাম করেছি ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য। আমরা স্লোগান দিয়েছি আমার ভোট আমি দেব।

৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়া, এটা তো আওয়ামী লীগই করেছে। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ জোট, তারা এক হয়ে আন্দোলন করে, এজন্য আমাদের বহু রক্ত দিতে হয়েছে। আমি সে কথাটা বলেছি তাদেরকে (যুক্তরাষ্ট্রে)।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকবো। ভোটে আসলে আবার করব। দেখি কে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়। সব রেডি করে দিয়েছি, এখন বসে বসে বড় বড় কথা বলে। আমি বাবা-মা সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। কত বছর হয়েছে রাজনীতির? একটা স্বপ্ন ছিল জাতির পিতার, সেটা করেছি, এখন তো কেউ না খেয়ে থাকে না।’

তিনি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। আমার মনে পড়ে না, এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। কেউ জিজ্ঞেসও করেনি। ২০০৭ এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে অভিজ্ঞতা, এরপর এটা কেউ চায়?

সংবাদ সম্মেলন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে কোনো কথা বলেছেন কি না। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বলেন, তারা তো বারবার তারিখ দিয়েই যাচ্ছে। এই তারিখে ফেলে দিবে, ওই তারিখে ফেলে দেবে। তারা আন্দোলন করুক। জনগণের জানমালের কোনো ক্ষতি যদি করা হয়, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার পরও হঠাৎ অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনে নিয়ে সবার মাতামাতিকে ‘সন্দেহ হয় রে, সন্দেহ হয় রে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ শেখাতে হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রাম, এটা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই আমরা করেছি। এবং তারপরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর সেই নির্বাচন হয়েছে বলেই জনগণ আমাদের বার বার ভোট দিয়েছে, আর একটানা আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই, অর্থনৈতিক উন্নতিটা হয়েছে।

আজকে যতটুকু বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছে, এটাতো আওয়ামী লীগ এবং আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তো এই উন্নতিটা হচ্ছে। তো এখন এত প্রশ্ন আসে কেন, সেটাই আমার কথা। তাহলে কি একটা দেশ এত উন্নতি করে ফেলছে, সেটাই সকলের মাথাব্যথা হয়ে গেল কি না, যে এটাকে এখন কীভাবে নষ্ট করা যায়। ওই প্রচেষ্টা কি না, ওই সন্দেহটা আমারও আছে।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার বার একই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা বাস্তব অবস্থাটা বোঝে কি না আমি জানি না, কিন্তু তাদের একই কথা, মানে ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে। সেটা আমি স্পষ্ট বলে আসছি। কেন, ভোটের জন্য তো আমরা সংগ্রাম করলাম, রক্ত দিলাম, আমার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার অর্জন করে দিয়েছি। আমাকে ভোট শেখাতে হবে না।

যারা ভোট চুরি করেছে তাদের কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনতে হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবই তো ভোট চোর। এদেশের মানুষ জানে, নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নতি হয়েছে। মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। দারিদ্রসীমা ৫ শতাংশে কমিয়ে এনেছি। কেউ ঘরবাড়ি ছাড়া থাকবে না। সন্দেহ হয় সেজন্যই।

বিএনপি যা বলে তার সবই মিথ্যা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না।