আবারও উত্তপ্ত চুয়েট, পরিবহন ধর্মঘটে বাড়বে যাত্রী ভোগান্তি

বাস চাপায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ক্যাম্পাস। আজ শনিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে মানবন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) আন্দোলন স্থাগিত ঘোষণা দিয়ে সড়ক অবরোধ তুলে নেয় চুয়েট শিক্ষার্থীরা। তবে চাপের মুখে পড়ে স্থগিত করার আভাস দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত চুয়েট শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রশাসন আমাদের সঙ্গে মধ্যস্থতায় না গিয়ে ছুটি ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে আমাদের আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা হল ছেড়ে যায়নি, হলে অবস্থান করছি। আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার ১০ টা থেকে ১১টায় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান, বিকালে মানবন্ধন কর্মসূচী, বিকাল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করছি।

তারা দাবি করেন, বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসের বাইরে ৬০০ পুলিশ ছিল, পুলিশের জলকামান, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং লাঠি নিয়ে পুলিশ সদস্যরা প্রস্তুত ছিলেন। ওই পরিস্থিতিতে আমরা চুয়েট প্রশাসনের সাঙ্গে ২০ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে বৈঠকে বসতে বাধ্য হই। ওই বৈঠকে আমাদের সবার মুঠোফোন নিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে যারা মধ্যস্থকারী থাকার কথা ছিল আমরা তাদের পায়নি। ৩ ঘণ্টার বৈঠকে আমরা কিছুই পায়নি।

বৈঠক শেষে আমরা যা বলেছি সেগুলো আমাদের কথা ছিল না, চুয়েট প্রশাসন যা যা বলেছিল আমরা তা তা বলেছিলাম।

এদিকে বাস পড়ানোর প্রতিবাদে আগামীকাল রবিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তাদের চার দফা দাবি হচ্ছে। দাবিগুলো হলো :

প্রথম দফা : যখন তখন বাস মালিক ও কর্মচারী গ্রেফতার করা যাবে না এবং বাস মালিক ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

দ্বিতীয় দফা : চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাস পোড়ানো ও বাস চলাচলে বাধাদান কারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

তৃতীয় দফা : সড়ক দুর্ঘটনায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

চতুর্থ দফা : সড়ক মহাসড়কে চলাচলরত অনুমোদনহীন অযাচিত বাস চলাচল বন্ধ করতে হবে।

এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের ডাকের সংবাদে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। অন্যদিকে গতকাল শনিবার সকাল থেকে কাপ্তাই থেকে এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলীসহ অন্যান্য দূর-পাল্লার যানবাহন ছেড়ে যায়নি বলে জানিয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

টিকিট কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভীড় থাকলেও কোনো টিকিট বিক্রি হয়নি।

গেল সোমবার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর ওইদিন থেকেই নিরাপদ সড়ক ও শাহ আমানত এবং এবি ট্রাভেলস পরিবহন বন্ধসহ ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। বাসের চালককে গ্রেপ্তার পরবর্তী বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে আলোচনার সাপেক্ষে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনের সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। তবে সেটি চাপের মুখে তুলে নিতে হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আগামী ৯ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর একাডেমীক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গেল শুক্রবার বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন ঘোষণা করার পর চুয়েট প্রশাসন ৯ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে। তবে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন। যদিও জরুরি সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে দাবি আদায়ে আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বন্ধ ঘোষণার পর কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী হল ছেড়েছে বলে সূত্র জানায়।

যারা বর্তমানে হলে অবস্থান করছেন তারা ফের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন । যদিওবা চুয়েট পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ শেখ জাবেদ মিয়া বলেন, ৯ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণার পর থেকে চুয়েটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। অনেকে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যারা হলে অবস্থান করছেন তারা বিরুপ কোনো আচরণ করছেন না। এক কথায় চুয়েটের বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।