আওয়ামী লীগের বিজয় বার্তায় জনগণের স্বপ্ন মিশে থাকুক

চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, নেত্রকোনার কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সব ধরনের শঙ্কা ছাপিয়ে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। রাজধানীর দারুস সালাম বাংলাদেশ কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভোট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ভোটের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেন তিন বিদেশি পর্যবেক্ষক। ডেপুটি হেড অব মিশন ইউএস এসটিও টেরি এল. ইসলে বলেন, ভোটের পরিবেশ ভালো। মানুষ ভোট দিতে আসছে। সবকিছু ভালো মনে হয়েছে। আশা করছি, শতকরা ৫০ ভাগ ভোট পড়বে। আর সেই অর্থে আমরা যে কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি, সেগুলোতে কোনো ত্রুটি চোখে পড়েনি। পলিটিকাল এডিটর আয়ারল্যান্ড নিকোলাস হুপাওয়াল বলেন, ভোটের পরিবেশ যতটা দেখেছি, শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ। রাজনৈতিক অফিসের তুলনায় পোলিং স্টেশনের সংখ্যা কম মনে হয়েছে। পোলিং স্টেশন মাত্র ৪ হাজার, যেটা খুব নগণ্য মনে হয়েছে। সব মিলিয়ে আমার মনে হচ্ছে, সবকিছু শান্তিপূর্ণ। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯টি আসনের ৪২ হাজার ১০৩টি কেন্দ্রে একযোগে চলে ভোটগ্রহণ। এই নির্বাচন দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ওআইসি, রাশিয়া, ফিলিস্তিন ও গাম্বিয়ার পর্যবেক্ষকরা। তারা বলেছেন, ভোটার এবং প্রার্থীর এজেন্টদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, আমরা সন্তুষ্ট।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশে নির্বাচনের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্বাচনে ৬২টি আসনে জয়ী হয়ে নতুন চমক সৃষ্টি করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ১১ আসনে। নির্বাচন কমিশন দাবি করেছেন, ‘তাদের প্রত্যাশার চেয়েও ভোটগ্রহণ ভালো হয়েছে। ৭ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল কয়েকটি গণমাধ্যমকে বলেন, প্রত্যাশার চেয়ে ভোটগ্রহণ ভালো হয়েছে। এত ভালো ভোট হবে তা আশা করিনি’। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় অর্জনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের পথ পরিষ্কার হয়েছে। চেতনার দূরদর্শী বাস্তবায়নে যে দলটি সর্বদা অগ্রগামী ছিল তা হলো এখনকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

১৯৭৫-এর কালো অধ্যায়ের পর এই সংগঠনকে টুকরো টুকরো করে ফেলার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েও সফল হতে পারেনি স্বার্থানেষী শাসকবর্গ। এই সংগঠন দমে যায়নি, ফিরেছে পাহাড়ের মতো শক্ত হয়ে, গণমানুষের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে। ধারাবাহিকতাময় সেই পথচলা আজও বহমান। যদিও সামনে দীর্ঘপথ! জননেত্রী শেখ হাসিনা বদলে দিয়েছেন থাকেন বাংলার সার্বিক দৃশ্যপট। সর্বপ্রথম দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার প্রয়াস থেকে যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করান, পিতা মুজিবের খুনিদের বিচার হয় বাংলার মাটিতে। আজ সবার ঘরে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট সংযোগ এবং উচ্চগতির পরিষেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের গণসংযোগ ও প্রচারণায় গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এলাকার মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা শুনেছেন। ভোটাররা প্রার্থীদের কাছে এলাকার সমস্যাগুলো তুলে ধরছেন। প্রার্থীরা সমস্যা সম্পর্কে জেনে নির্বাচিত হলে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে সেসব সমস্যা দূর করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। প্রচারনা চলাকালীন সময় দেখা গেছে পাড়া-মহল্লায় প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির রীতিমত জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। নানা অঙ্গীকারে ভোটারদের মন জয়ের বিরামহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা অবশ্যই ভোটারদের কথা মনে রাখবেন। মানুষের মঙ্গলের জন্য কিছু করার মধ্যে একটা আনন্দ আছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটিগুলোতে অপেশাদার, সাংগঠনিক নিয়ম-শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজে জড়িত লোকজনকে যাতে স্থান দেওয়া না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যারা প্রতিনিয়ত অনৈতিক কাজ করে চলছে এবং আওয়ামীলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করবে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশকে মানা হয় দক্ষিণ এশিয়ার ইমারজিং টাইগার হিসেবে। যার পিছনে নিঃসন্দেহে রয়েছে শেখ হাসিনার সদূরপ্রসারী নেতৃত্ব এবং জনগণের আকুণ্ঠ সমর্থন। আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা যেমন এনেছেন ঠিক একইভাবে দেশ গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করেও যাচ্ছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ যে কাজগুলো চোখে পড়ার মতো তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটির কথা লিখতে পারি। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিদ্যুতায়নের সমৃদ্ধি, দারিদ্র্য দূরীকরণের বিভিন্ন কার্যক্রম, সাক্ষরতা বৃদ্ধি, সমুদ্রসীমা বিজয়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন, ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান, প্রতিটি উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজের জন্য আওয়ামীলীগ সরকার স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শিক্ষার মান বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রার মান ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমান সরকারের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন চোখে পড়ার মত। বড় কর্মকর্তা থেকে অফিসের পিয়ন পর্যন্ত সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে অভ্যস্ত। দেশের প্রতি আমাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। দেশের মানুষ যাতে পারস্পরিক সহমর্মিতার মাধ্যমে বেড়ে উঠতে পারে তার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামীলীগ সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে দক্ষতার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন। বিজয়ের মাসে আগামী সরকারের কাছে সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার কিছু আবেদন আছে। দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে আপনাদের অনেক কিছু করতে হবে। কর্মজীবী মানুষের বেশিরভাগ মানুষ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আপনাদের কাছে আবেদন এই কর্মজীবী মানুষগুলো যারা পেনশনের আওতায় আসেননি তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক আওতায় নিয়ে আসুন।

অনেক কর্মজীবি বেসরকারি শ্রমিক, কর্মচারী এখনো বৈশাখী ভাতার আওতায় আসেনি। সরকারি কর্মজীবিদের পাশাপাশি বেসরকারি কর্মজীবরাও যাতে বৈশাখী ভাতা পান তার জন্য আগামী সরকারকে ব্যবস্থা করতে হবে। চাকুরীজীবীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা থাকলে তারা প্রেষণা পাবেন। তাই আমি আবেদন জানাচ্ছি এই বিষয়টি চিন্তা করার জন্য। প্রতিটি ইউনিয়নে সাধারণ মানুষের উপকারের জন্য একটি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক থাকলে আমার মনে হয় ভালো হয়। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের অনেক গ্রাম আছে যেখানে কৃষকরা সঞ্চয় করতে চান। কিন্তু তাদের আবাসস্থল এবং ব্যাংকের দূরত্ব বেশি হওয়াতে ইচ্ছা থাকার পরও সঞ্চয় করেন না। চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল পথের জন্য মানুষ বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে সড়কপথের দুর্বলতা আছে। চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কটি ৪ লেনের কাজ দ্রুততম সময়ে করা গেলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজ আরো দ্রুত হবে বলে আমার মনে হয়। প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন মেট্রোরেলের আওতায় আসুক। বিভিন্ন জেলা শহরে রাস্থা পারাপারের ক্ষেত্রে বয়স্ক মানুষ এবং ছাত্র ছাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়। এই জন্য প্রতিটি জেলা শহরে পর্যাপ্ত ফুটওভার ব্রীজ নির্মিত হোক।

দেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এই দেশের ছাত্র ছাত্রীদের ভূমিকা অনেক। অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে কিছু কিছু ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে একদিন ২ ঘন্টা নৈতিক শিক্ষার উপর পাঠ দানের ব্যবস্থা করা হোক। প্রাইমারি শিক্ষার মান উন্নয়নে বর্তমান সরকারের কর্মপ্রচেষ্টা, পরিকল্পনা সত্যি প্রশংসনীয়। দেশ গড়ার কারিগর প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন জরিপ কাজে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদা একটা প্রতিষ্ঠান থাকলে শিক্ষার মান আরো বৃদ্ধি পাবে। মানুষ জীবনধারণ করার জন্য বিভিন্ন পেশায়, চাকুরীতে নিয়োজিত। এই চাকরিজীবীর অনেকে ভবিষ্যত আশায় কিছু টাকা সঞ্চয় করার চেষ্টা করেন। সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ব্যাপারে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা অনেক সময় শোনা যায়। যে সব বেসরকারি কর্মজীবি অথবা একজন কম বেতনের শিক্ষক অথবা একজন শ্রমজীবী যারা অনেক কষ্ট করে অবসর জীবনে মোটামুটি ডাল ভাত খেয়ে জীবন ধারণের জন্য ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র করেছেন তাদের মুনাফা যেন কমানো না হয়।
অপরিকল্পিত নগরায়ন, যত্রতত্র অবকাঠামো নির্মাণ, নদী ভাঙ্গন, ইটভাটা, কলকারখানা স্থাপন, বাগানবাড়ি, রিসোর্ট-এসব নানা কারণেই কমে আসছে কৃষি জমি। প্রতিদিনই কৃষি জমি কমছে। যে হারে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে সে হারে এই ধারাবাহিকতা চলমান থাকলে আগামী ২০৫০ অথবা ২০৬০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে কৃষি জমির অবস্থা খুব বেশি খারাপ হয়ে পড়বে। কৃষিজমি নষ্ট হলে ধীরে ধীরে খাদ্যনিরাপত্তাও সংকুচিত হয়ে আসবে। তাই কৃষিজমি ব্যবহার করে অপরিকল্পিত রাস্তাাঘাট, দালানকাঠা, বাসভবন নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। নিদিষ্ট শিল্পাঞ্চলের বাইরে কৃষি জমির ওপর যত্রতত্র ছোট-বড় শিল্প-কলকারখানা, বাণিজ্যিক পার্ক, বাগান বাড়ি নির্মাণ বন্ধে আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি জমিতে ইট ভাটা নির্মাণ, বেচাকেনা সম্পূর্ণরুপে বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।

দেশীয় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান দিনদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে চিনি এবং পাট শিল্প অন্যতম। অত্যাধুনিক মেশিনে তৈরি সাদা চিনির কাছে আখ থেকে তৈরি লাল চিনি হারিয়ে যেতে বসেছে। যদি দেশে আখের উৎপাদন বাড়িয়ে দেশীয় চিনি শিল্পের সম্প্রসারণ করা যেত তাহলে অনেক মানুষের কর্ম সংস্থান হতো। সঠিক পরিচর্যা বা চাষাবাদের অভাব, ফসলের বৈচিত্র্য, বিভিন্ন মেয়াদী সবজি ফসলের আবাদ বৃদ্ধি ফলের বাগান তৈরি ইত্যাদি কারণে দিন দিন আখ চাষের জমি কমে যাচ্ছে। আখের রসেও প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। জানা গেছে প্রতি ১০০ গ্রাম আখের রসে ৩৯ ক্যালরি, ৯.১ গ্রাম শর্করা, আমিষ চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ পাশাপাশি রিবোফ্লোবিন এবং ক্যারোটিন রয়েছে। আখ চাষে সার ও কীটনাশক তেমন ব্যবহার করতে হয় না। তবে পর্যাপ্ত সেচের প্রয়োজন হয়। স্বল্প পরিশ্রম ও কম খরচে আখ চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়। সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে দেশে চাহিদার তুলনায় চিনি উৎপাদন হয় কমবেশি ১ শতাংশ। এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় কমবেশি ৩০ হাজার টন। আমদানি হয় ২২-২৪ লাখ টন। মূলত অপরিশোধিত আকারে চিনি আমদানি হয় বেশি। অপরিশোধিত চিনি বা কাঁচামাল এনে প্রক্রিয়াজাত করে চিনি উৎপাদন করে পরিশোধন কারখানাগুলো। এই অপরিশোধিত চিনি আমদানি করতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। তাই এখন দেশীয় কাচাঁমাল দিয়ে চিনি উৎপাদন করার জন্য শিল্প মালিকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন তার জন্য নতুন সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

পাট শিল্প কেন অসুস্থ হয়ে জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। আমরা কি ভাবছি এই শিল্প নিয়ে। অসংখ্য শ্রমজীবি মানুষ বেকার হয়ে গেল এই শিল্পের দূরাবস্থার জন্য। বাংলাদেশের ভূমি ও আবহাওয়া পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ৯০ দশকে এ দেশে পাট উৎপাদন হতো ১২ লাখ হেক্টর জমিতে। ক্রমেই সেই পাটের জমির পরিমাণ কমতে কমতে ৩০-৪০ বছর ধরে ৪ বা সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। পাট জাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি করে পাট দিয়ে তৈরি শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, লুঙ্গি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শোপিস, ওয়ালমেট, নকশিকাঁথা, পাপোশ, জুতা, শিকা, সুতাসহ নানান পাটজাত পণ্য আকর্ষণীয় করে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী তৈরি করে বাজারজাত করতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সর্বোপরি এ দেশের ঐতিহ্য ও নিজস্বতা রক্ষায় পাটশিল্পের উন্নয়নের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। নিজের দেশের ঐতিহ্য আমাদের রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাইরের রাষ্ট্রে আমাদের দেশীয় পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে।

সমৃদ্ধির পথে দেশ এগিয়ে যাবে যদি আমাদের দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। মনে করুন একটা রাস্তা নির্মাণ করার জন্য সরকার থেকে ৫০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। সেই ৫০ কোটি টাকার ১০ কোটি টাকা যদি দুর্নীতির পেছনে চলে যায় তাহলে দেখা যাবে কাজের মান দুর্বল হয়ে যাবে। আর যদি সরকার থেকে প্রাপ্ত টাকার সুষম ব্যবহার করতে পারি তাহলে রাস্তার সুন্দর উন্নয়ন হবে। খেয়াল রাখতে হবে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন হবেনা। আগামী প্রজন্মের জন্য একটা বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণ করার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। প্রযুক্তিকে পাশে রেখে জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম শিখরে গিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য সরকারের কর্ম প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। দেশে উৎপাদিত কৃষিজ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন শিল্পায়নের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উপায় বের করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের ব্যবসায়ী মহলকেও চিন্তা করতে হবে।

আমাদের দেশের অনেক বৃদ্ধ লোক মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছে। দারিদ্র্যতা আর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত অনেক বয়ষ্ক ব্যাক্তি আছেন যারা ঠিক মত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা। ৬০ বছরের অধিক বয়সী ব্যাক্তির জন্য সিনিয়র সিটিজেন কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে আমাদের মাননীয় সরকার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এই সিটিজেন কার্ডের মাধ্যমে বৃদ্ধ লোকেরা যাতে অর্ধেক খরচে চিকিৎসা সেবা এবং পাবলিক গাড়িতে যাতায়ত করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বর্তমান সরকারের এগিয়ে যাওয়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকুক। এই বিজয়ের মাসে আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে পারস্পরিক হিংসা, বিদ্ধেষ ভুলে গিয়ে আমরা সবাই এগিয়ে যাব। আমাদের মধ্যে ঘুষের চিন্তা থাকবে না। পরের সম্পদ দখল করার চিন্তা থাকবে না। মোট কথা আমরা আমাদের খারাপ গুণগুলোর বিরুদ্ধে যেন নতুন করে যুদ্ধ করতে পারি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার পাশাপাশি সম্প্রদায়গত বিরোধ ভুলে গিয়ে একে অপরের হাত ধরে দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করা আগামী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। দেশ শোষণহীন বৈষম্যমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক। কাজেই সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে শুভ বুদ্ধির অভ্যুদয় ঘটুক-সাধারণ জনগণ আজ সে প্রত্যাশাই করছে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক