অবিশ্বাস্য চিত্রনাট্যের সমাপ্তি মেসিদের হাতে

ইতিহাসের সেরা ফাইনাল ফুটবল ম্যাচ উপভোগ করল বিশ্ব

ইতিহাসের সেরা ফাইনাল ফুটবল ম্যাচটাই যেন উপভোগ করল পুরো বিশ্ব।  টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে মেসি ও ডি মারিয়ার গোলে আর্জেন্টিনা দুই গোলে এগিয়ে থাকলেও, ৩-৩ ব্যবধানে সমতায় গিয়ে ম্যাচ শেষ করে ফ্রান্স।  শেষ পর্যন্ত ফরাসিদের টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচল আলবিসেলেস্তেদের।  তাতেই মহারণের মহাকাব্য হয় রচিত।

ম্যাচের শুরু থেকেই মেসি-ডি মারিয়ার গোলে ফরাসি শিবিরে চলে আর্জেন্টিনা তাণ্ডব।  ফ্রান্সের জালে প্রথম গোল পাঠায় আর্জেন্টিনা।  ম্যাচের ২১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলটি করেন মেসি।  পরে ম্যাচের ৩৫ মিনিটে ম্যাক অ্যালিস্তারের পাস থেকে গোল করেন ডি মারিয়া।

ম্যাচের শুরুতে আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা।  তবে ম্যাচের ৩ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডি বক্সে একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল।  আলভারেজের বাইসাইকেল শটটি ঠেকিয়ে দেন ফরাসি গোল রক্ষক।  তবে তার আগেই অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি।  তবে এর দুই মিনিট পরই আলভারেজের পাস থেকে মিডফিল্ডার অ্যালিস্তার ডান পায়ের দুর্দান্ত ফ্রি কিক আবারো প্রতিহত করেন হুগো লরিস।

ম্যাচের ১০ মিনিটেই ফরাসি শিবিরে দুটি শট নেয় আর্জেন্টিনা।  এর একটি ছিল অনটার্গেট।  এরপরই কাউন্টার অ্যাটাকে যায় ফ্রান্স।  তবে ফরাসি তারকা এম্বাপ্পের চেষ্টা ব্যর্থ হয় আর্জেন্টাইন রক্ষণভাগে।

ম্যাচের ২১ মিনিটে ডি মারিয়াকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা।  আর এতেই মেসির পায়ে প্রথম সফলতা আসে আর্জেন্টিনার।  আর ৩৫ মিনিটে অ্যালিস্তারের দুর্দান্ত একটি পাসকে গোলে পরিণত করেন ডি মারিয়া।  এরপর আর গোল না হলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই আরো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে মেসিরা।  ৪৯ মিনিটে ফরাসি রক্ষণ ভেদ করে ডি বক্সের বাইরে থেকে ডি পলের ডান পায়ের দুর্দান্ত শট সেভ করেন ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিস।  তবে ম্যাচের ৬০ মিনিটে দুর্দান্ত একটি সুযোগ মিস হয়।  ডি বক্সে মেসির ডান পায়ের শটটি একটুর জন্য ফরাসি জাল স্পর্শ করেনি।

ম্যাচের ৬৩ মিনিটে স্ট্রাইকার ডি মারিয়াকে উঠিয়ে নেন আর্জেন্টাইন কোচ।  মাঠে নামান ডিফেন্ডার আকুইনাকে।  এরপরই কাউন্টার অ্যাটাকে যায় ফ্রান্স।  ম্যাচের ৬৮ ও ৭১ মিনিটে পরপর দুটি শট নেয় ফ্রান্স।  তবে একটিও অন টার্গেট ছিল না।  ডি বক্সের বাইরে বাম পাশ থেকে লম্বা শট গোল বারের উপর দিয়ে চলে যায়।

ম্যাচের ৮০তম ও ৮১তম মিনিটে লুসাইল স্টেডিয়াম যেন ফরাসি সমর্থকদের দখলে চলে যায়।  পেনাল্টির ফাঁদে পড়ে মেসিরা।  এম্বাপ্পের পা থেকে প্রথম গোল পায় ফ্রান্স।  এর ২ মিনিট পরই ফের গোলের দেখা পান এম্বাপ্পে।  জোড়া গোলে সমতায় ফেরে ফ্রান্স।  নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ২-২ ব্যবধানে শেষ হয় ম্যাচ।

 

অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে গোল আদায় করতে পারেনি কেউই।  তবে দ্বিতীয়ার্ধের খেলায় মেসির করা গোলে ফের একবার লিড নেয় আর্জেন্টিনা।  খেলার নাটকীয়তা তখনও বাকি।  একদম অন্তিম মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে গোল করলে নিজের হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি দলকে সমতায় ফেরান এমবাপ্পে।  আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার মন্টিয়েলের হাতে অনিচ্ছাকৃতভাবে পেছন থেকে বল লাগলেও পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।  আগের পেনাল্টি শট ডান দিকে ঝাঁপিয়েও রক্ষা করতে পারেননি এমি মার্টিনেজ।  হয়ত ভেবেছিলেন এবার এমবাপ্পে বাঁয়ে শট নেবেন।  কিন্তু সেই ডান দিকেই পেনাল্টি শট নেন ফরাসি স্ট্রাইকার।  ফলে ম্যাচ শেষ হয় ৩-৩ গোলের ব্যবধানে।

এরপরই শুরু হয় রোমাঞ্চকর টাইব্রেকার পর্ব।  ফ্রান্সের পক্ষে প্রথম শট নেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।  এ শটটিও গোলকিপারের ডানে মারেন এমবাপ্পে।  ঝাঁপ দিয়েছিলেন মার্টিনেজ।  হাত ছুঁয়ে বল চলে যায় জালে।  এরপর গোলকিপারকে হালকা ডজ দিয়ে ডানে বল পাঠিয়ে দেন লিওনেল মেসি।  ফ্রান্সের পক্ষে পরের শট মিস করেন স্ট্রাইকার কিংসলি কোম্যান।  এরপর আর্জেন্টিনার পক্ষে জালে বল পাঠান পাওলো দিবালা।  এরপরের শট মিস করেন ফ্রান্সের টুয়ামেনি।  অপর পক্ষে লিয়ান্দ্রো পেরাদেস গোল করলে ব্যবধান দাঁড়ায় ৩-১।  অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে এবার ফ্রান্সের শট মিস হলেই জিতে যায় আর্জেন্টিনা।  কিন্তু গোল দেন কোলো মোয়ানি।  তবে এরপর গোল দিয়ে জয় নিশ্চিত করেন গঞ্জালো মন্টিয়েল।  তৃতীয় শিরোপা নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার।  টান টান উত্তেজনায় বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য চিত্রনাট্যের সমাপ্তিটা হলো মেসিদের হাতে।  ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের আক্ষেপটা গেল ঘুচে।