অপরিকল্পিত উন্নয়নে ভোগান্তিতে চট্টগ্রাম নগরীর ৬০ লাখ মানুষ

অপরিকল্পিত উন্নয়নে চট্টগ্রাম মহানগরীর ৬০লাখ মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। বিগত ১৫ বছরের দেশি বিদেশি ঋণের টাকায় বেশ কিছু মেগাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও তা জনগণের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ৭ বছর ধরে চলমান রয়েছে চারটি ভিন্ন প্রকল্প। সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার এসব মেগা প্রকল্পের সুফল এখনো দৃশ্যমান হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গত তিন বছরে জলাবদ্ধতার সময় খাল ও অরক্ষিত নালায় পড়ে ১০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে। ৩০ বছর আগেও এই নগরীতে ৭০টি খাল ছিল, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক খালই অপরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট ও আবাসিক এলাকা নির্মাণের কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ কারণে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের টাকা জলেই গেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেলটি কোনো কাজে আসছে না নগরবাসীর।

মূল নগরী থেকে অনেক দূরে হওয়ায় টানেল দিয়ে তেমন একটা যানবাহন চলে না। জানা গেছে, টানেল থেকে প্রতিদিন টোল বাবদ আয় হয় গড়ে ১১ থেকে ১২ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যয় হয় ৩৭ লাখ টাকা। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় টানেলটি এখন শ্বেতহস্তীতে পরিণত হয়েছে। এ বছর থেকে টানেলের জন্য নেওয়া চীনা ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু করতে হবে। আয় কম হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অন্যান্য সেতুর আয় থেকে মেটাতে হবে। ফলে ঋণ পরিশোধে সরকারকে রাজস্ব খাত থেকে ভর্তুকি দিতে হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০১৫ সালের নভেম্বরে ‘কনস্ট্রাকশন অব মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী’ শীর্ষক টানেল প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এদিকে নগরীর সার্কিট হাউজে সম্মিলিত নাগরিক ফোরাম চট্টগ্রাম আয়োজিত নাগরিক সংলাপে বক্তারা বিভিন্ন অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে নানা অভিযোগ করেন। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দর খানের সভাপতিত্বে ‘নতুন স্বপ্ন ও নতুন বাস্তবতায় চট্টগ্রাম ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপের মূল আলোচক প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে চট্টগ্রাম নগরী বাসযোগ্যতা হারানোর দ্বারপ্রান্তে। যানজট, জলজট নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। দূষিত হচ্ছে বায়ু, পানি, শব্দ, নদী ও খাল।

হারিয়ে যাচ্ছে জলাশয়, পাহাড়, নদী ও বন। যেসব উন্নয়ন হয়েছে তা অজ্ঞতা, অক্ষমতা ও জবাবদিহিহীন কর্তৃত্ববাদের যোগফল। তথাকথিত উন্নয়ন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আসবে না। জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছে ঋণের বোঝা যা হাজার বছর ধরে বহন করতে হবে।